মোহাম্মদ আলী সুমন
প্রায় ১৫ বছর পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি ঢাকায় বৈঠকে বসেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। পারস্পরিক বোঝাপড়া আর রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে উভয় পক্ষের জন্য বৈঠকটি তাৎপর্যপূর্ণ।
ঢাকায় বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রবেশ করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ।
https://youtu.be/FT_PZTBUFCc?si=NSLlaRZBnqFcEa_5
এফওসিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। বৈঠকে সার্বিক দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মে কোনো বিষয় বাদ থাকে না, সব আলোচনা হয়। অগ্রগতি কী আছে, কী করার আছে বা যায়, কী কী দেওয়ার আছে বা নেওয়া যায় সবই আলোচনায় টেবিলে থাকছে। মোটা দাগে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি, বিশেষ করে আকাশপথে যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে।
এছাড়া সার্ক, ওআইসি, ডি-৮ এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক যুগের বেশি সময় পর দুই দেশের মধ্যে ৬ষ্ঠ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হচ্ছে। ২০১০ সালে সর্বশেষ ইসলামাবাদে বৈঠকে বসেছিল বাংলাদেশ পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিবরা। এছাড়া অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের অর্থনৈতিক কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক হয় ২০০৫ সালে। দীর্ঘদিনের জট খোলার পর আশা করা হচ্ছে, এবারের আলোচনায় পরবর্তী অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক নিয়ে কথা হবে।
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে দু’দেশের সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রস্তাব। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে একটি যৌথ কমিশন পুনর্বহালের বিষয়টি তুলতে পারে পাকিস্তান। এছাড়া বাংলাদেশের দিক থেকে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের লক্ষ্যে একটি বিশেষায়িত কর্মসূচির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানকে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে আন্তরিক বাংলাদেশ। তবে সম্পর্কের অমীমাংসিত ইস্যুগুলো ভুলে যায়নি ঢাকা। বাংলাদেশ মনে করে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, যুদ্ধের জন্য ক্ষতিপূরণ, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, সম্পদের হিস্যা, ১৯৭০ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড়ের সময় দেওয়া বৈদেশিক সহায়তার পাওনা পরিশোধের মতো বিষয়গুলোর সুরাহা জরুরি।
অমীমাংসিত বিষয়ের সুরাহা না করে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ আগ্রহী নয়। ঢাকার চাওয়া, পাকিস্তান এগিয়ে আসুক। কেননা, অমীমাংসিত বিষয়ে সুরাহা যতোদিন হবে না ততোদিন সামনে আসবে। আলোচনার টেবিলে থাকছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব বলেন বা মন্ত্রী বলেন তাদের সঙ্গে আলোচনায় অমীমাংসিত বিষয় থাকে। অমীমাংসিত ইস্যু যতদিন সুরাহা না হয়, ততদিন উঠতে থাকবে, এটা তো স্বাভাবিক। আমরা চাই এগুলোর সুরাহা বা মিটমাট হয়ে যাক। একটা অবস্থান নিক ওরা। সম্পর্ক সামনে আগানোর জন্য ভালো হয় যদি তারা সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলে।
৫৪ বছর হয়ে গেল। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এখন তারা কী চায় আলোচনা করে বলুক। নতুন কিছু তো বলুক। আনুষ্ঠানিক ক্ষমার বিষয়ে ওদের অস্বস্তি আছে, সেটাতো বোঝাই যায়। এছাড়া আটকে পড়াদের নিয়ে যাওয়া বলেন, টাকা-পয়সা বুঝিয়ে দেওয়া বলেন তারা কমর্ফোটেবল হলে আগেই সব মিটে যেত। সমস্যার সমাধান হয়ে যেত অনেক আগেই। তাদের নিশ্চই কোনো একটা কিছু আছে। দেখা যায়, আলোচনা কী আসে।
ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজ শেষে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করতে গতকাল বুধবার ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। ঢাকা বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.