ঢাকা ০১:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ঢাবির সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিক আর নেই Logo দেশ ব্যাপী অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি কারী শাহবাগীদের প্রতিহত করতে বুড়িচংয়ে বিক্ষোভ Logo সিপিসি’র ঐক্যপূর্ণ নেতৃত্ব হলো ভালোভাবে বিভিন্ন কাজ করার মৌলিক নিশ্চয়তা Logo ইসি’র অধীনে এনআইডি রাখার দাবিতে শেরপুরে মানববন্ধন Logo সমাজের দুস্থ ও অসহায় মানুষের কল্যানে যাকাত, দান-অনুদান সংগ্রহ Logo সাজেকে ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বিজিবি Logo গচিহাটা চলন্ত ট্রেনে পাথরনিক্ষেপ প্রতিরোধকল্পে জনসচেতনা মূলক প্রচারণা অনুষ্ঠিত Logo রমজানে দইয়ের দাম কমিয়ে আলোচনায় মুরাদনগরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইউসুফ Logo ধর্ষকের মৃত্যুদন্ড জনসম্মুখে কার্যকরের দাবীতে বাঙ্গরায় বিক্ষোভ Logo রাঙ্গামাটিতে এ বছর ৮৫ হাজার ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে

কচুয়ায় ছাত্রলীগ নেতা সুজনের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল

স্টাফ রিপোর্টার‌

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার তেতৈয়া গ্রামের ছাত্রলীগ নেতা সুজনের মৃত্যুর রহস্য নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে বেধরক মারধর করে পায়ে তারকাটা ঢুকানোর কারনে নাকি সুজন আত্মহত্যা করেছে? পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে তাকে বেধরক মারধরের কারনে সুজনের মৃত্যু হয়। আবার অন্যদিকে ৮ জানুয়ারি সুজনকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুজনের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে তাকে নিয়ে আসা ব্যক্তিদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে রোগী কি খেয়েছেন এমন প্রশ্নে তখন তারা বলেন আমরা জানিনা। রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে ডাক্তার উন্নত চিকিৎকার জন্য কুমিল্লায় রেফার করে। কর্তব্যরত চিকিৎসক রিপোর্টে উল্লেখ্য করেন (টহশহড়হি চড়রংড়হরহম)।

ফলে তার মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্য নিয়ে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে! সুজনের লাশ সুরতহাল রিপোর্ট না করে তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করায় তার মৃত্যুর রহস্য ধামাচাপায় পড়ে রইলো। আবার এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে সুজন পায়ের ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে বিষপ্রাণে আত্মহত্যা করেছে।

নিহত পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৩ ডিসেম্বর সকালে তেতৈয়া গ্রামের অধিবাসী মৃত আবু তাহেরের পুত্র সুজন একই এলাকার হারুনুর রশিদের পুত্র সাদ্দামের কাছে রাজমিস্ত্রী কাজের পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে বাকবিতন্ডা হয় উভয়ের। এসময় সাদ্দামের নেতৃত্বে হানিফ, ইউনুছ ও কেরামত আলীসহ বেশ কয়েকজন মিলে সুজনকে তেতৈয়া আদর্শ মোল্লা মার্কেটের একটি বৈদ্যুতিক খুটিঁর সাথে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ দাবি করে থানা পুলিশকে খবর দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।

কচুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সরকার তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে তিনি সুজনের একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেন, মৃত্যুর আগে যাদের নাম সুজন বলে গেছে তাদের বিচার কচুয়ার মাটিতে হবে। ৬ নং কচুয়া উত্তর ইউনিয়নের তেতৈয়া গ্রামে ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ওই পোস্টের ভিডিও বার্তায় সুজন বলেন, হানিফা, কেরামত, সাদ্দাম মিলে আমাকে একটি পিলারের সাথে বেঁধে হানিফের হাতে ছিল একটি কাঠ যে কাঠের মাথায় তারকাটা ঢুকানো ছিল ওই কাঠ দিয়ে আমার পায়ে আঘাত করে। সাথে সাথে তারকাটাটি আমার পায়ে ডুকে যায়। এছাড়া তারা আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে বেধম মারধর করে। পাওনা কাজের মজুরি চাওয়ায় তারা আমাকে মারধর করে পুলিশ ফোন দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়।

স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন শিশির জানান, সুজন মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজে ভর্তি নিয়েছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সুজন রাজ মিস্ত্রির কাজ করতো।

নিহতের মা মরিয়ম বেগম জানান, আমার ছেলে সুজন কাজের মজুরি চাওয়ায় তাকে মারধর করে পুলিশ পাঠিয়ে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়।

পরে ১১ ডিসেম্বর তার জামিনের পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। অসুস্থ্য অবস্থায় ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুরের বিজ্ঞ আদালতে হাজিরা দেয় এবং ৮ই জানুয়ারি আমার ছেলে সুজনের পায়ের ব্যাথায় চিৎকারে এবং অস্বাভাবিক আচরন করায় তাকে কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে অবস্থা অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লায় রেফার করলে ঘন্টা খানিক পরেই সুজন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আমি আমার ছেলে হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

নিহতের ভাই বিল্লাল হোসেন, মহসিন, সুমন সহ আরো অনেকে জানান, সুজন লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে তারা আমার ভাইয়ের উপর অমানবিক নির্যাতন ও মারধর করে পুলিশে দেয়। প্রতিপক্ষদের অমানবিক নির্যাতনের কারন ও চিকিৎসার অভাবে আমার ভাই মারা গেছে। খোঁজ খবর না নিয়ে উল্টো হামলাকারীরা আমাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। সম্প্রতি সুজনের কবরের পাশে ভাইকে হারানোর বড় ভাইয়ের কান্নার আহাজারির ভিডিও প্রকাশ পেলে সর্বমহলে মানুষের মনে দাগ কেটেছে।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আব্দুল হালিম বলেন, বদরপুর গ্রামের একটি ইফতার পার্টিতে হামলা ও বাধার ঘটনায় সন্দেহমূলক আসামী হিসেবে সুজনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছিল। তবে আসামী মারা যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাবির সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিক আর নেই

SBN

SBN

কচুয়ায় ছাত্রলীগ নেতা সুজনের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল

আপডেট সময় ০৬:১৪:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার‌

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার তেতৈয়া গ্রামের ছাত্রলীগ নেতা সুজনের মৃত্যুর রহস্য নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে বেধরক মারধর করে পায়ে তারকাটা ঢুকানোর কারনে নাকি সুজন আত্মহত্যা করেছে? পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে তাকে বেধরক মারধরের কারনে সুজনের মৃত্যু হয়। আবার অন্যদিকে ৮ জানুয়ারি সুজনকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুজনের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে তাকে নিয়ে আসা ব্যক্তিদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে রোগী কি খেয়েছেন এমন প্রশ্নে তখন তারা বলেন আমরা জানিনা। রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে ডাক্তার উন্নত চিকিৎকার জন্য কুমিল্লায় রেফার করে। কর্তব্যরত চিকিৎসক রিপোর্টে উল্লেখ্য করেন (টহশহড়হি চড়রংড়হরহম)।

ফলে তার মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্য নিয়ে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে! সুজনের লাশ সুরতহাল রিপোর্ট না করে তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করায় তার মৃত্যুর রহস্য ধামাচাপায় পড়ে রইলো। আবার এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে সুজন পায়ের ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে বিষপ্রাণে আত্মহত্যা করেছে।

নিহত পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৩ ডিসেম্বর সকালে তেতৈয়া গ্রামের অধিবাসী মৃত আবু তাহেরের পুত্র সুজন একই এলাকার হারুনুর রশিদের পুত্র সাদ্দামের কাছে রাজমিস্ত্রী কাজের পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে বাকবিতন্ডা হয় উভয়ের। এসময় সাদ্দামের নেতৃত্বে হানিফ, ইউনুছ ও কেরামত আলীসহ বেশ কয়েকজন মিলে সুজনকে তেতৈয়া আদর্শ মোল্লা মার্কেটের একটি বৈদ্যুতিক খুটিঁর সাথে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ দাবি করে থানা পুলিশকে খবর দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।

কচুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সরকার তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে তিনি সুজনের একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেন, মৃত্যুর আগে যাদের নাম সুজন বলে গেছে তাদের বিচার কচুয়ার মাটিতে হবে। ৬ নং কচুয়া উত্তর ইউনিয়নের তেতৈয়া গ্রামে ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ওই পোস্টের ভিডিও বার্তায় সুজন বলেন, হানিফা, কেরামত, সাদ্দাম মিলে আমাকে একটি পিলারের সাথে বেঁধে হানিফের হাতে ছিল একটি কাঠ যে কাঠের মাথায় তারকাটা ঢুকানো ছিল ওই কাঠ দিয়ে আমার পায়ে আঘাত করে। সাথে সাথে তারকাটাটি আমার পায়ে ডুকে যায়। এছাড়া তারা আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে বেধম মারধর করে। পাওনা কাজের মজুরি চাওয়ায় তারা আমাকে মারধর করে পুলিশ ফোন দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়।

স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন শিশির জানান, সুজন মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজে ভর্তি নিয়েছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সুজন রাজ মিস্ত্রির কাজ করতো।

নিহতের মা মরিয়ম বেগম জানান, আমার ছেলে সুজন কাজের মজুরি চাওয়ায় তাকে মারধর করে পুলিশ পাঠিয়ে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়।

পরে ১১ ডিসেম্বর তার জামিনের পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। অসুস্থ্য অবস্থায় ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুরের বিজ্ঞ আদালতে হাজিরা দেয় এবং ৮ই জানুয়ারি আমার ছেলে সুজনের পায়ের ব্যাথায় চিৎকারে এবং অস্বাভাবিক আচরন করায় তাকে কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে অবস্থা অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লায় রেফার করলে ঘন্টা খানিক পরেই সুজন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আমি আমার ছেলে হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

নিহতের ভাই বিল্লাল হোসেন, মহসিন, সুমন সহ আরো অনেকে জানান, সুজন লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে তারা আমার ভাইয়ের উপর অমানবিক নির্যাতন ও মারধর করে পুলিশে দেয়। প্রতিপক্ষদের অমানবিক নির্যাতনের কারন ও চিকিৎসার অভাবে আমার ভাই মারা গেছে। খোঁজ খবর না নিয়ে উল্টো হামলাকারীরা আমাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। সম্প্রতি সুজনের কবরের পাশে ভাইকে হারানোর বড় ভাইয়ের কান্নার আহাজারির ভিডিও প্রকাশ পেলে সর্বমহলে মানুষের মনে দাগ কেটেছে।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আব্দুল হালিম বলেন, বদরপুর গ্রামের একটি ইফতার পার্টিতে হামলা ও বাধার ঘটনায় সন্দেহমূলক আসামী হিসেবে সুজনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছিল। তবে আসামী মারা যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।