
মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার, কুমিল্লা
ভয়াবহ বন্যার কবলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে বন্যার্ত মানুষ। ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে গবাদিপশু, পুকুরের মাছ। এসব ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবল স্বাস্থ্যঝুঁকি। বন্যার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা প্রভাব পড়ে। শুধু যে বন্যার্ত মানুষই এ ঝুঁকিতে থাকে, তা নয় বরং বন্যায় উদ্ধারকর্মী, ত্রাণকর্মী, স্বাস্থ্যসেবাদানকারীও ঝুঁকিতে থাকেন।
পয়নিষ্কাশনের পানি-পুকুর খালের পানি এখন সব বানের পানিতে একাকার। ডুবে গেছে বিশুদ্ধ খাবার পানির টিউবওয়েল- ধোয়ামোছা ও গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানির উৎস পুকুর খাল। দূষিত পানির ঢুকছে ঘরে। পা ফেললেই কালো দুর্গন্ধযুক্ত পানি। তাই কুমিল্লার বন্যাকবলিত উপজেলায় দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বন্যার পানি দীর্ঘ সময় লোকালয়ে আটকে থাকায় চর্মরোগ, ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, প্রতিটি ইউনিয়নে চিকিৎসা সেবা দেয়া অব্যাহত আছে।
চৌদ্দগ্রামের বাসিন্দা পারুল বেগম জানান, তার ১০ মাস বয়সী মেয়ে তানিয়ার শরীরে ছোট ছোট গোটা উঠেছে। এখন এগুলা আরো বাড়ছে। ঘরে সবারই হাতে পায়ে এরকম গোটা। পানিবন্দী হওয়ার পর থেকে এগুলো ছড়াচ্ছে। গায়ে পানি লাগার ভয়ে এখন কেউ ঘর থেকেও বের হতে চায় না। একই এলাকার বাসিন্দা ফরিদ মিয়া জানান, আমি দিনমজুর কৃষি কাজ করি। আমার হতে পায়েও এখন রোগ। আমার কিছু করার নাই–পেটের দায়ে পানিতে কাজ করতেই হবে। আর কবে পানি নামবে তারও ঠিক নাই। এলাকার বয়োজেষ্ঠ্য কাদের সিদ্দিকী জানান, আমাদের এলাকায় এখন ওষুধ প্রয়োজন। মেডিকেল টীম দরকার। এলাকা পানিবন্দী থাকার কারনে কোন ডাক্তারের কাছেও যেতে পারি না। কেউ কেউ ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছে।
পর্যাপ্ত ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির জন্য বুক সমান পানি ঠেলে যেতে হচ্ছে দূর-দূরান্তে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, আমরা কিছু ত্রান সংগ্রহ করে এলাকাবাসীকে দিচ্ছি। আমরা সকলের কাছে আহ্বান করছি- এখানেই যারাই সহযোগিতা করতে আসবেন তারা যেন চিকিৎসক এবং ওষুধ নিয়ে আসেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে
বন্যার মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া ও স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। কিছু প্রতিকার মাথায় রাখতে হবে।
পরিচ্ছন্নতা মানতে হবে, খাবারের আগে, রান্নার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে।পান ও দৈনন্দিন কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে। ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতা হলে অবশ্যই খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে।
ন্যাকবলিত এলাকায় ও আশ্রয়কেন্দ্রে উঁচু স্থানে স্যানিটারি পায়খানা স্থাপন করতে হবে।জরুরি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে হবে—যেখানে ডাক্তার, দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী, প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকতে হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নাজিয়া বিনতে আলম বলেন, একটি মেডিকেল টীম পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের টীম গ্রামে গ্রামে যাচ্ছে।জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, বন্যা কবলিত এলাকায় এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নানান পানিবাহিত রোগ দেখা দিচ্ছে।কুমিল্লা জেলায় মোট ২৭০ টি টীম কাজ করছে।
কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন মোঃ নাজমুল আলম জানান, বন্যার পরবর্তী ও চলাকালে যে ডায়রিয়া তা বিপদের বিষয়। তবে এখনো ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রনে। কিন্তু একটি প্রাদুর্ভাবের আশংকা রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে পানিবাহিত খোসপাঁচড়া হয়েছে বলে রিপোর্ট পাচ্ছি। একই সাথে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে পারে। আমরা সবাইকে সতর্ক করছি যেন সবাই বিশুদ্ধ পানি পান করেন। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে খাবার খান। এবং সাপে কাটলে হাসপাতালে যান।
কুমিল্লা জেলায় বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ ২৬ হাজার। আশ্রয়কেন্দ্রে আছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ।
কুমিল্লায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কবলিত প্রায় কয়েক’শ গ্রাম। অসহায়ত্বের জীবন যাবপ করছে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মরিয়া হয়ে পড়েছিল ব্যনায়কবলিত সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) ফেনীর ফুলগাজী পল্লী বিদ্যুৎ আফিস সংলগ্ন এলাকায় কুমিল্লা আইএইচটি এন্ড ম্যাটস এর উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব ডাঃ এ কে এম আবদুস সেলিম ও উপাধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ গিয়াস উদ্দিন আহমেদসহ শিক্ষক শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করেন।
অর্থ সহস্র পানিবন্দি মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা সেবা ও মেডেসিন প্রদান করেন ডিএমএফ ডিগ্রীধারী চিকিৎসকরা।
এ সময় ডিএমএফ চিকিৎসক মোঃ ইফতেখার আলম সবুজ বলেন, আমরা আজ প্রায় ৫০০ রোগীদের সেবা প্রদান করেছি – এখানে সবচেয়ে বেশী ডায়রিয়া, কলেরা, চর্মরোগী বেশি। সর্দি জ্বর,ঠান্ডা কাশিতো আছেই। তাছড়াও আমাদের মেডিকেল টিমকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন এমবিবিএস চিচিৎসক আবদুল্লাহ আল নোমান।