ঢাকা ০১:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন কোনো দেশকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য নয় : মুখপাত্র মাও নিং Logo মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে : শেন ইউয়ে ইউয়ে Logo এশিয়া সোসাইটি চীন-মার্কিন সম্পর্কে সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করে যাবে: ওয়াং ই Logo তথ্যচিত্র ‘ফ্যাব্রিক অব লাইভস’ চীনের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি Logo চীনে ৩ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ত্রিপক্ষীয় সংলাপ Logo ঝিনাইগাতীতে হাতীর আক্রমণে নিহত দুই পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান Logo মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবীতে বিএনপির বিক্ষোভ Logo সাজেকে বাবুধন চাকমার গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন Logo মতিঝিল থানা যুবদলের ত্যাগী নেতা বাবু’র বিরুদ্ধে অপপ্রচার Logo সড়কে গতির ‘ভবিষ্যৎ’ অনিশ্চিত

মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকারঃ

ভর দুপুর ০৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি মা, চাচি পিঠা তৈরি করছে। বাবা, জেঠা, ফুফা ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাগন পিঠা খেতে খেতে পেছনের গল্প আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক করছেন। হঠাৎ বন্ধুকের গুলি। মুহুর্তে বাড়ির চারিদিক হানাদার বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ। প্রাণভয়ে অনেকেই পালাতে সক্ষম হলেও, আমার বড় ফুফা হাবিলদার মকবুল আহম্মদ (মকু মিয়া), ছোট ফুফা শামসুল হক কমান্ডার পালাতে ব্যর্থ হয়ে গোলাঘরের এক কোণে লুকিয়ে থাকেন। দাদু দা হাতে ঘরের দরজায় তাদেরকে বাঁচাতে হানাদার বাহিনীকে আটকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মুহুর্তে লুটিয়ে পড়েন। নরপিশাচেরা সমস্ত ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে প্রথমে দামি মালপত্র গয়নাঘাটি স্থানীয় রাজাকার সহ লুটপাট করে। হালের বলদগুলি পর্যন্ত নিতে ভুল করে নাই। গোলাঘরের ভিতর হতে ফুফাদেরকে ধরে এনে উঠোনে নির্মমভাবে বুটের আঘাতে পিষ্ট করে। গাড়ীতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তৎকালীন ফেনী কলেজ ক্যাম্পে নিয়ে আসে। বড় ফুফাকে মৃত ভেবে দাউদপুর ব্রীজের নীচে ফেলে আসলে নড়াচড়া করতে দেখে স্থানীয় কয়েকজন লোক ফেনীতে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদেশীয় দালালদের সহযোগিতায় পুনরায় কলেজ ক্যাম্পে হানাদারেরা তাকে ধরে আনেন। সেখান থেকে সে সময় প্রানে বাঁচলেও স্বাধীনতার কিছুদিন পর ফুফা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে ফুফু আজো বেঁচে আছেন। ছোট ফুফা ক্যাম্প হতে কিছুদিন পর পালিয়ে আসলে রাজাকাররা তাকে পুনরায় হানাদারদের হাতে তুলে দেয়। ফুফার লাশটি পর্যন্ত নরপিশাচরা ফিরিয়ে দেয় নি। সেই শোকে ছোট ফুফু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ধুকে ধুকে মৃত্যু বরণ করেন। আজও তার সন্তানেরা বাবার কবর খুঁজে বেড়ায়। বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিলে দাদু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
উল্লেখ্য ঘটনার বেশ কিছুদিন পূর্বে বড় ফুফা পাকিস্তান আর্মির ২০-২৫ জনকে নিয়ে অস্রসহ চাকুরি হতে পালিয়ে আমাদের বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের মিনি ক্যাম্প স্থাপন করেন। এখান থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন অপারেশনে যোগ দিতেন। টের পেয়ে এদেশীয় স্থানীয় দালালরা হানাদারদের খবর দিয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় তাদের সঙ্গে এসে,লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে।

লেখক:
মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকারঃ
এম. বেলাল হোসেন মিয়াজী,
প্রধান শিক্ষক
জায়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয়, ফেনী।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন কোনো দেশকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য নয় : মুখপাত্র মাও নিং

SBN

SBN

মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকারঃ

আপডেট সময় ০১:২০:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

ভর দুপুর ০৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি মা, চাচি পিঠা তৈরি করছে। বাবা, জেঠা, ফুফা ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাগন পিঠা খেতে খেতে পেছনের গল্প আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক করছেন। হঠাৎ বন্ধুকের গুলি। মুহুর্তে বাড়ির চারিদিক হানাদার বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ। প্রাণভয়ে অনেকেই পালাতে সক্ষম হলেও, আমার বড় ফুফা হাবিলদার মকবুল আহম্মদ (মকু মিয়া), ছোট ফুফা শামসুল হক কমান্ডার পালাতে ব্যর্থ হয়ে গোলাঘরের এক কোণে লুকিয়ে থাকেন। দাদু দা হাতে ঘরের দরজায় তাদেরকে বাঁচাতে হানাদার বাহিনীকে আটকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মুহুর্তে লুটিয়ে পড়েন। নরপিশাচেরা সমস্ত ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে প্রথমে দামি মালপত্র গয়নাঘাটি স্থানীয় রাজাকার সহ লুটপাট করে। হালের বলদগুলি পর্যন্ত নিতে ভুল করে নাই। গোলাঘরের ভিতর হতে ফুফাদেরকে ধরে এনে উঠোনে নির্মমভাবে বুটের আঘাতে পিষ্ট করে। গাড়ীতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তৎকালীন ফেনী কলেজ ক্যাম্পে নিয়ে আসে। বড় ফুফাকে মৃত ভেবে দাউদপুর ব্রীজের নীচে ফেলে আসলে নড়াচড়া করতে দেখে স্থানীয় কয়েকজন লোক ফেনীতে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদেশীয় দালালদের সহযোগিতায় পুনরায় কলেজ ক্যাম্পে হানাদারেরা তাকে ধরে আনেন। সেখান থেকে সে সময় প্রানে বাঁচলেও স্বাধীনতার কিছুদিন পর ফুফা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে ফুফু আজো বেঁচে আছেন। ছোট ফুফা ক্যাম্প হতে কিছুদিন পর পালিয়ে আসলে রাজাকাররা তাকে পুনরায় হানাদারদের হাতে তুলে দেয়। ফুফার লাশটি পর্যন্ত নরপিশাচরা ফিরিয়ে দেয় নি। সেই শোকে ছোট ফুফু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ধুকে ধুকে মৃত্যু বরণ করেন। আজও তার সন্তানেরা বাবার কবর খুঁজে বেড়ায়। বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিলে দাদু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
উল্লেখ্য ঘটনার বেশ কিছুদিন পূর্বে বড় ফুফা পাকিস্তান আর্মির ২০-২৫ জনকে নিয়ে অস্রসহ চাকুরি হতে পালিয়ে আমাদের বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের মিনি ক্যাম্প স্থাপন করেন। এখান থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন অপারেশনে যোগ দিতেন। টের পেয়ে এদেশীয় স্থানীয় দালালরা হানাদারদের খবর দিয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় তাদের সঙ্গে এসে,লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে।

লেখক:
মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকারঃ
এম. বেলাল হোসেন মিয়াজী,
প্রধান শিক্ষক
জায়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয়, ফেনী।