![](https://muktirlorai.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
ভর দুপুর ০৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি মা, চাচি পিঠা তৈরি করছে। বাবা, জেঠা, ফুফা ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাগন পিঠা খেতে খেতে পেছনের গল্প আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক করছেন। হঠাৎ বন্ধুকের গুলি। মুহুর্তে বাড়ির চারিদিক হানাদার বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ। প্রাণভয়ে অনেকেই পালাতে সক্ষম হলেও, আমার বড় ফুফা হাবিলদার মকবুল আহম্মদ (মকু মিয়া), ছোট ফুফা শামসুল হক কমান্ডার পালাতে ব্যর্থ হয়ে গোলাঘরের এক কোণে লুকিয়ে থাকেন। দাদু দা হাতে ঘরের দরজায় তাদেরকে বাঁচাতে হানাদার বাহিনীকে আটকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মুহুর্তে লুটিয়ে পড়েন। নরপিশাচেরা সমস্ত ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে প্রথমে দামি মালপত্র গয়নাঘাটি স্থানীয় রাজাকার সহ লুটপাট করে। হালের বলদগুলি পর্যন্ত নিতে ভুল করে নাই। গোলাঘরের ভিতর হতে ফুফাদেরকে ধরে এনে উঠোনে নির্মমভাবে বুটের আঘাতে পিষ্ট করে। গাড়ীতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তৎকালীন ফেনী কলেজ ক্যাম্পে নিয়ে আসে। বড় ফুফাকে মৃত ভেবে দাউদপুর ব্রীজের নীচে ফেলে আসলে নড়াচড়া করতে দেখে স্থানীয় কয়েকজন লোক ফেনীতে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদেশীয় দালালদের সহযোগিতায় পুনরায় কলেজ ক্যাম্পে হানাদারেরা তাকে ধরে আনেন। সেখান থেকে সে সময় প্রানে বাঁচলেও স্বাধীনতার কিছুদিন পর ফুফা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে ফুফু আজো বেঁচে আছেন। ছোট ফুফা ক্যাম্প হতে কিছুদিন পর পালিয়ে আসলে রাজাকাররা তাকে পুনরায় হানাদারদের হাতে তুলে দেয়। ফুফার লাশটি পর্যন্ত নরপিশাচরা ফিরিয়ে দেয় নি। সেই শোকে ছোট ফুফু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ধুকে ধুকে মৃত্যু বরণ করেন। আজও তার সন্তানেরা বাবার কবর খুঁজে বেড়ায়। বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিলে দাদু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
উল্লেখ্য ঘটনার বেশ কিছুদিন পূর্বে বড় ফুফা পাকিস্তান আর্মির ২০-২৫ জনকে নিয়ে অস্রসহ চাকুরি হতে পালিয়ে আমাদের বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের মিনি ক্যাম্প স্থাপন করেন। এখান থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন অপারেশনে যোগ দিতেন। টের পেয়ে এদেশীয় স্থানীয় দালালরা হানাদারদের খবর দিয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় তাদের সঙ্গে এসে,লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে।
লেখক:
মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকারঃ
এম. বেলাল হোসেন মিয়াজী,
প্রধান শিক্ষক
জায়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয়, ফেনী।