উৎপল ঘোষ,যশোর জেলা প্রতিনিধি।।
যশোর জেলার সদরসহ আটটি উপজেলায় ফলের বাজার আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে।হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ এখন পড়েছে বিপাকে।এমনকি স্থলবন্দর বেনাপোল ও শিল্পশহর নওয়াপাড়ায় ফল ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেখুশী মতো ফল বিকিকিনির মহোৎসবে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ সাধারণ জনগণের।অনেকেই ফল ক্রয় করতে এসে মূল্য জেনে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
যশোর শহরের দড়াটানা, গাড়ীখানা, সিভিলকোর্টের মোড়, রেলস্টেশন, বড় বাজার, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, মনিহার সিনেমা হল ও তার আশপাশ, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও নড়াইল বাসস্ট্যান্ডে ফল বেচাকেনা হয়। এছাড়া প্রতিটি পৌর এলাকায় রয়েছে ফলের মোকাম। গ্রামের হাট বাজারেও ফল নিয়মিত বেচাকেনা হয়। কিন্ত জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, ডলার সঙ্কট এসব অজুহাতে ফল ব্যবসায়িরা ক্রেতার নিকট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। ইচ্ছেখুশি দরদাম নিচ্ছে বিক্রেতারা।স্থানীয় প্রশাসন দেখেও দেখছেন না।
অভয়নগর উপজেলা জুড়ে ফলের বাজার দামে বেশি। শিল্পশহর নওয়াপাড়ায় ক্রেতাদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার মনিটরে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ফলের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন।ফল ক্রয় করার ইচ্ছা থাকলেও দিন মুজুর লোকজন এখন বিপাকে।
শিল্প শহর নওয়াপাড়া ফল ব্যবসায়ীদের জন্য ভাল মোকাম। কারণ এখানে রয়েছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরসহ রয়েছে স্কুল কলেজ। এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে নানা শ্রেনি ও পেশার মানুষের আনাগোনা। এছাড়া যশোর খুলনা মহাসড়ক হওয়ায় বিভিন্ন জেলার মানুষেরা এখানে এসে কেনাকাটা করে। স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফলের চাহিদা মেটাতে হয় এ বাজার থেকে।
স্থলবন্দর বেনাপোল, নাভারন, ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ড, নওয়াপাড়া বাজার নুরবাগ বাসস্টান্ড, রেলস্টেশন, ক্লিনিকপাড়া বাজার, হাসপাতাল মোড়, আকিজ সিটিসহ উপজেলার কয়েকটি বাজারে বেশ কিছুদিন ঘুরে দেখা যায়, এ সব বাজারে ফলের দাম আগুন। আপেল ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে সাদা আঙ্গুর ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, কমলা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, খেজুর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, আনার ফল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কালো আঙ্গুর ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, নাশপাতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা , বেদানা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, লটকন ফল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, আপেল কুল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, ড্রাগন ফল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও সবেদা ফল হালি ৭০ থেকে ৯০ টাকা, পাকা পেঁপে ও বেল আকার ভেদে ৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হচ্ছে। কিছু কিছু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে ইচ্ছামত দাম হাকিঁয়ে ফল বিক্রয় করলেও ক্রেতা সাধারণের কিছুই করার থাকে না।
ফল কিনতে আসা দাউদ শেখ, ভ্যান চালক আইয়ুব আলী জানান,সারাদিন ভ্যানের চাকা ঘুরিয়ে ২৫০-৩১৫ টাকা আয় করি।বর্তমানে চার কেজি চাল ক্রয় করলেই টাকা শেষ।চাকুরিজীবিদের কোন সমস্যা নাই।তাদের বেতন ২০,০০০-৪০,০০০ টাকা সর্বনিম্ন।তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন,প্রতিটি সেক্টরে দেখভালের জন্য লোকবল রয়েছে কিন্তু তারাই আজ চুপ।কয়েকদিনের ব্যবধানে দিনের ব্যবধানে দেশের প্রতিটি বাজারে এমন চলছে।ফলের বাজার উর্ধ্বমুখী হয়েছে। ফলে পরিবারের ও রোগীদের জন্য ফল কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ভ্যান চালক মনিরামপুরের ইকবাল হোসেন জানান, আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার জন্য দুইটি মালটা কিনতে এসে ওজন দিয়ে ১০৮ টাকা দাম হওয়ায় না কিনেই ফিরে আসতে হল।
ফল ব্যবসায়ী মুজিবর ও আসাদুল জানান , গতকাল যা ১০টাকায় কিনেছি, আজ তা ১৫ থেকে ১৮টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ রকম প্রতিটা ফলের মূল্য দিন গেলেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে আমাদের যেমন কেনা তেমনি বেচা। ড্রাগন ফল গত সপ্তাহে দাম ছিল ২৫০ টাকা এখন কিনতে এসে দেখি ৩৪০ টাকা । এভাবেই ফলের দাম বাড়তে থাকলে পরিবারে সদস্যদের ফলে চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। কিন্তু অস্থির ফলের বাজারসহ সব ধরণের নিত্যপণ্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য তিনি বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন।
সচেতন মহলের দাবি, যদি দ্রুত বাজার মনিটরিং না করা হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা নিত্য পণ্যের দাম দেদারচ্ছে বৃদ্ধি করবে।
এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপ দাশ কোন মন্তব্য করেননি।
যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ চৌধুরী জেলার বাইরে অবস্থান করছেন।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) থান্দার কামরুজ্জামান জানান, দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর জানান, ফল ব্যবসায়ীরা ফলের দাম বেশি রাখলে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।