মোঃ সোহেল, টেকনাফ (কক্সবাজার)
কক্সবাজারের টেকনাফ সবরাং ০পয়েন্ট সংলগ্ন সমুদ্র সৈকত এলাকায় গত বিশ দিনে এক কিলোমিটার স্থানজুড়ে ঝাউবনের প্রায় গাছ কেটে সাবাড় করেছে সংঘবদ্ধ চক্র।বনের ভেতরে ঢুকলে দেখা যায় গাছের গোড়ালি আর গোড়ালি। এই যেন ঝাউ গাছ কাটার মহা উৎসব। এসব গোড়ালি যেন ভয়াবহতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। জোয়ারের পানিতে ভাঙ্গন ধরেছে সৈকতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ট্যুরিজম পার্কের দায়িত্বরত লোকদের যোগসাজশে চলছে এ বৃক্ষনিধন।
টেকনাফ উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা বশির আহমেদ জানান ২০১৪- ২০১৫ সালে আমরা সাবরাং জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন সমুদ্র সৈকতে কিছু গাছ রোপণ করি। পরবর্তী মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে, বাগানটি ট্যুরিজম পার্কের উন্নয়ন সংস্থা বেজাতে বুঝিয়ে দিয়েছি। এরপর থেকে বেজা কর্তৃপক্ষ দায়িত্বে রয়েছে।
তিনি আরও জানায়, উপকূলীয় জনগণের সম্পদ রক্ষায় কাটাবনিয়া ও কচুবনিয়া সমুদ্র সৈকতের বালুচরে দুইটি বাগানে হাজার হাজার গাছ লাগানো হয়। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এ বাগানের গাছগুলো দেয়াল হিসেবে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করে আসছিল। শুনতে পেয়েছি এর মধ্যে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের বনটিতে চলছে ঝাউ গাছ কাটার উৎসব। গত বিশ দিনে সেখান থেকে কেটে বিশ লক্ষ টাকার গাছ বিক্রি করা হয়েছে বলে ধারনা করছেন স্থানীয়রা। গাছ গোলো ট্রলিতে করে সিকদার পাড়া ছমিলে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও জানাযায়।
সরেজমিনে গিয়ে ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন কাটবনিয়া ও কচুবনিয়া ঝাউ বাগানের উজাড়ের ভয়াবহতা ও সত্যতা দেখা যায়। ঝাউ বাগানের ভেতরে যত দূর দেখা গেছে, সারিবদ্ধ গাছের বেশ কিছু দূর পর পর ফাঁকা আর কাটা গাছের গোড়ালি। কিছু কিছু গোড়াড়ি বালু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বাগানের অধিকাংশ গাছ করাত, দা ও কুড়াল দিয়ে কাটা হয়েছে।
ওখানে কোনো ধরনের পাহারাদারের দেখা পাওয়া না গেলে ও কেটে নেওয়া গাছের ডালপালা সংগ্রহ করতে কিশোরী ও নারীর একটি দলকে দেখা গেছে।কথা হয় রাবেয়া নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি জানান, কিছু লোক দিন-দুপুরে বা রাতে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কেউ বাধা দিচ্ছে না। শোনেছি এরা নাকি গাছের মালিক। কাটা গাছের গোড়ালি ও ডাল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য তারা সংগ্রহ করছেন।
তবে ঝাউ বনে যেতে চাইলে আনসারের মাধ্যমে গেইট বন্ধ রাখা হয়। সাংবাদিক দেখে অনুমতি দিতে অনিচ্ছুক তারা।পরে ট্যুরিজম পার্কের বেজা কর্তীক দায়িত্বরত তন্ময় নামের একজনের সাথে কথা বল্লে তিনি বলেন, নিউজ করতে উপরের অনুমতি লাগবে। তবে আমরাও অনেক চেষ্টা করতেছি ঝাউ বন বাঁচাতে। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোক রাতের অন্ধকারে গাছ গুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে।আপনি নিউজ না করে চলে যান উপরের থেকে অনুমতি নিয়ে আপনাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেব। তবে এরপর থেকে বারবার তাকে ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি তিনি।
গাড়িতে করে গাছ নিয়ে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তি জানান, সবরাংয়ের শাকের নামের এক লোক বেজা’র দায়িত্বে থাকা লোকদের কাছ থেকে কিছু গাছ কিনেছেন। তাদের এই দূর্নীতি, অনিয়মে স্থানীয়দের বিপদের সম্মুখীন হতে হবে বলেও জানান সচেতন ব্যক্তিরা।
প্রসঙ্গত, টেকনাফে ঝাউ গাছ কাটার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১১ সালে টেকনাফের খুরের মুখসহ একই এলাকায় কাটা হয়েছিল ঝাউবনের হাজার হাজার গাছ। এ ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশ হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৮৭ জনের নামে মামলা করেছিল বনবিভাগ।