
জনস্বার্থে বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ (১), ১৬, ১৮ক, ৩২ পালনে ‘মাটি কাটতে বাধা, প্রতিপক্ষের মারধরে বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ শিরোনামের বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্টের বরাতে প্রশাসনের রিট পিটিশন ১৪১০৮/২০২২ এর নির্দেশনাসহ আইনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ধারা ২০ অনুযায়ী সরকারি সেবা হিসেবে অবৈধ ড্রেজার নজরদারি না করা এবং মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের নির্দেশনামত সকল ড্রেজার বাজেয়াপ্ত করে গ্রেফতার ও কৃষিজমি পূর্বের অবস্থায় না আনার উদ্যোগ কোন অসদাচরণ বা দন্ডনীয় অপরাধ বা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিপূরণযোগ্য হবে না তা আগামী সাত দিনের মধ্যে জানাতে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে উকিল (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
স্বরাষ্ট্রসচিবসহ ১৩ কর্মকর্তার কাছে এ নোটিশ প্রেরণ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আবুল কালাম আজাদ উজ্জ্বঁল আজ মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) জনস্বার্থে ই—মেইল ও ডাকযোগে যোগে এ নোটিশ পাঠান। নোটিশ প্রাপকরা হলেন সচিব— স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা, সচিব— পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা, সচিব— কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা, সচিব— ভূমি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা, মহা পরিদর্শক— বাংলাদেশ পুলিশ, জেলা প্রশাসক— কুমিল্লা, পুলিশ সুপার, কুমিল্লা, উপ—পরিচালক— কুমিল্লা, পরিবেশ অধিদপ্তর, কার্জন কুটির, জজকোর্ট রোড, কুমিল্লা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা— মুরাদনগর, কুমিল্লা, সহকারী কমিশনার (ভূমি)— মুরাদনগর, কুমিল্লা, উপজেলা কৃষি অফিসার— মুরাদনগর, কুমিল্লা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুরাদনগর ও বাঙ্গরা বাজার থানা।
নোটিশে বলা হয়, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার গকুলনগর গ্রামের কৃষক মৃত আবদুল বারেক ওরফে খোকন মিয়া হত্যার ও ফসলি জমির মাটিকাটার ব্যর্থতার দায় কোনো সংশ্লিষ্টদের দেয়া হবেনা এবং তাহার জীবনের অধিকার রক্ষার সাংবিধানিক দায়িত্ব তাদের উপর ন্যাস্ত থাকায় তাহা পালনে সরকারী কর্মচারী হিসেবে ক্ষতিপূরণ কেনো প্রদানের জন্য প্রাপ্য হবেন না। সরকারী চাকরী আইনের ২৬ ধারায় কোনো নোটিশ প্রাপকদের উপর কার্যকর হবে না সে মর্মে সাত (৭) দিনের মধ্যে জানানোর জন্য নোটিশ প্রদান করা হইল।
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ২৫ অনুযায়ী সরকারি সেবা হিসেবে অবৈধ ড্রেজার নজরদারি না করা এবং মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের নির্দেশনামত সকল ড্রেজার বাজেয়াপ্ত করে গ্রেফতার ও কৃষিজমি পূর্বের অবস্থায় না আনার উদ্যোগ কেন অসদাচরণ বা দন্ডনীয় অপরাধ বা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিপূরণযোগ্য হবে না তাও আগামী সাত দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, যথাসময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে উল্লেখিত অবৈধ ড্রেজার ও ইটভাটায় কৃষি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধনের কারনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় পদক্ষেপ এলাকাবাসীর স্বার্থে আগামী সাত দিনের মধ্যে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার গকুলনগর গ্রামের মৃত আবদুল বারেক ওরফে খোকন মিয়া এর হত্যার ক্ষতিপূরণ দেবার ব্যবস্থা না নিলে নোটিশকারী ব্যক্তি উচ্চাদালতের নজরে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর মুরাদনগরে সব অবৈধ ইটভাটা ও ড্রেজার বন্ধে সুপ্রীমকোর্টে দায়ের করা এক রিট যার (নং রিট পিটিশন নম্বর ১৪১০৮ /২০২২) এক নির্দেশনার পরও ওই আদেশ যথাযথ কার্য্যকর না করায় গত ১৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে কৃষিজমি থেকে মাটি কাটতে বাধা দেওয়ায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের গকুলনগর গ্রামের হাসান ইটভাটা এলাকায় আবদুল বারেক ওরফে খোকন মিয়া (৬২) নামের এক কৃষককে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। খোকন মিয়া উপজেলার গকুলনগর গ্রামের প্রয়াত আবদুর রহমানের ছেলে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, মুরাদনগর উপজেলায় ৫৪টি ইটভাটা আছে। এসব ইটভাটায় মাটি আনতে ফসলি জমি নষ্ট করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত রাতের আঁধারে কৃষিজমি ও গোমতী নদীর মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়।
এ বিষয়ে বহুবার জমির মালিকদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ ও সুপ্রীম কোর্টে রিট পিটিশন দেওয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। ফলে উপজেলার কয়েকটি জায়গার খালের পানিনিষ্কাশন বন্ধ করে ড্রাইভেশন তৈরি করে বেপরোয়াভাবে দিনে—রাতে কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। মঙ্গলবার দুপুরে উকিল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ উজ্জ্বল।