ঢাকা ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অধিক জলোচ্ছ্বাস ও বৃষ্টির প্রভাবে দক্ষিণ বাংলার অন্যতম ফরেস্ট সুন্দরবন হুমকির মুখে

বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ফরেস্ট সুন্দরবন টানা বেশ কয়েক বছর ধরে অতিবৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে হুমকির মুখে, এবছরও নিম্নচাপ ও জোয়ারের পানির প্রভাবে তলিয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবনের সীমানা শুরু থেকে গভীরবন পর্যন্ত কোথাও কোথাও তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত পানির উচ্চতা বেড়েছে। সাথে বন সংরক্ষণ অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসে বনের ভিতর থেকে গাছ কেটে বন উজার করে নিচ্ছে তারও প্রভাব রয়েছে ফলে বন্যপ্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার অন্যান্য বাঘ হরিণ বানর সহ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে সুন্দরবন।

পাশাপাশি মাঝেমধ্যে চুপিসারে নিধন হচ্ছে অসংখ্য হরিণ পাচার হচ্ছে দেশ-বিদেশে হরিণের মাংস সহ কাকড়া হরিণের চামড়া তার মধ্য আবারও প্রতিবছর অনাবৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস সবকিছু মিলে সুন্দরবন এখন হুমকির মুখে।

অথচ এই সুন্দরবন একসময় দক্ষিণ বাংলার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও দক্ষিণ বাংলার প্রায় ১৯ টি জেলাকে রক্ষা করত।

সর্বশেষ গত দুই বছর আগেও ঘূর্ণিঝড় রিমেলের সাথে অধিক জলোচ্ছ্বাসে হরিণসহ বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর মৃত হয়েছে তবে যা সুন্দরবনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি তবে এবছর আজকের দিন পর্যন্ত গভীর নিম্নচাপের কারণে জলোচ্ছ্বাসে যে পরিমাণে পানি বেড়েছে তাতে বন্যপ্রাণীর তেমন ক্ষতির আশংকা নেই বলে বনবিভাগ জানালেও সরজমিনে দেখা গেছে অন্যরকম চিত্র এখানে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে অন্যান্য প্রাণীর তেমন ক্ষতি না হলেও বানর ও হরিণ রয়েছে ঝুঁকিতে, কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে বনের অভ্যন্তরে যে পরিমাণে পানি জমেছে তার থেকে যদি সামান্য কিছু পানি বৃদ্ধি পায় তাতে করেই গতবারের মতো এবারও অনেক হরিণের ক্ষতি হবে।

এদিকে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, কয়েকদিন ধরে দুপুরের দিকে জোয়ারে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বাড়ছে আড়াই ফুট থেকে সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত।

আড়াই ফুট উচ্চতার জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়েছে করমজল, জোংড়া, মরাপশুর, হাড়বাড়ীয়, ঘাগরামারী ও লাউডোব এলাকা। এছাড়া সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়েছে হিরণপয়েন্ট, কটকা ও কচিখালী বনাঞ্চল। পুরো বনের ভিতরেই জায়গা বিশেষ আড়াই থেকে সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এতে বন্যপ্রাণীর ক্ষতির তেমন কোন আশংকা না থাকলেও দীর্ঘ সময় জলবদ্ধতা থাকার কারণে অনেক বৃক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

তবে বন সংরক্ষণ বিভাগ কর্মকর্তাগণ বন্যপ্রাণীদের সুবিধার্থে পুরো বন জুড়ে ৪০ টি টাইগার টিলা উচু টিলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন। বনের ভিতরে পানি বাড়লে বাঘ, হরিণ ও শুকরসহ অন্যান্য প্রাণী উচু টিলায় আশ্রয় নিয়ে থাকে। তিনি আরো জানিয়েছেন নদীর পানি ক্রমান্বয়ে যদি বৃদ্ধি পেতে থাকে আর ভাটায় যদি না নামতে পারে সেক্ষেত্রে অধিক ক্ষতির আশঙ্কা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । ফলে বন্যপ্রানীর ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

তবে এবার যে পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে করে ক্ষতি হবে না হবেনা বনের অভ্যন্তরে থাকা ৮৮টি মিষ্টি পানির পুকুরের। কারণ পুকুরগুলো পাড় অনেক উচু, তাই লবণ পানি ঢুকে মিষ্টি পানির আধারগুলোর ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই। মুলত অমবস্যা ও পূর্ণিমার গোনের সময় নদ-নদীতে পানি বেড়ে থাকে। কিন্ত গেল অমাবস্যার গোনের সাথে যোগ হয়েছে নিম্নচাপের প্রভাব। এতে পানি বেড়েছে। গরমকালে দিনের জোয়ারে পানি বেশি হয়, রাতের জোয়ারে কম হয়। আর শীতকাল এর বিপরীত। এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে তলিয়েছে মোংলার পশুর নদীর পাড়ের ফসলি জমি, ঘরবাড়ী ও রাস্তাঘাট। ভাটায় পানি নেমে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষদের ক্ষতি ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকি কম থাকলেও ফসলের ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

অধিক জলোচ্ছ্বাস ও বৃষ্টির প্রভাবে দক্ষিণ বাংলার অন্যতম ফরেস্ট সুন্দরবন হুমকির মুখে

আপডেট সময় ০৪:১২:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ফরেস্ট সুন্দরবন টানা বেশ কয়েক বছর ধরে অতিবৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে হুমকির মুখে, এবছরও নিম্নচাপ ও জোয়ারের পানির প্রভাবে তলিয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবনের সীমানা শুরু থেকে গভীরবন পর্যন্ত কোথাও কোথাও তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত পানির উচ্চতা বেড়েছে। সাথে বন সংরক্ষণ অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসে বনের ভিতর থেকে গাছ কেটে বন উজার করে নিচ্ছে তারও প্রভাব রয়েছে ফলে বন্যপ্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার অন্যান্য বাঘ হরিণ বানর সহ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে সুন্দরবন।

পাশাপাশি মাঝেমধ্যে চুপিসারে নিধন হচ্ছে অসংখ্য হরিণ পাচার হচ্ছে দেশ-বিদেশে হরিণের মাংস সহ কাকড়া হরিণের চামড়া তার মধ্য আবারও প্রতিবছর অনাবৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস সবকিছু মিলে সুন্দরবন এখন হুমকির মুখে।

অথচ এই সুন্দরবন একসময় দক্ষিণ বাংলার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও দক্ষিণ বাংলার প্রায় ১৯ টি জেলাকে রক্ষা করত।

সর্বশেষ গত দুই বছর আগেও ঘূর্ণিঝড় রিমেলের সাথে অধিক জলোচ্ছ্বাসে হরিণসহ বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর মৃত হয়েছে তবে যা সুন্দরবনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি তবে এবছর আজকের দিন পর্যন্ত গভীর নিম্নচাপের কারণে জলোচ্ছ্বাসে যে পরিমাণে পানি বেড়েছে তাতে বন্যপ্রাণীর তেমন ক্ষতির আশংকা নেই বলে বনবিভাগ জানালেও সরজমিনে দেখা গেছে অন্যরকম চিত্র এখানে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে অন্যান্য প্রাণীর তেমন ক্ষতি না হলেও বানর ও হরিণ রয়েছে ঝুঁকিতে, কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে বনের অভ্যন্তরে যে পরিমাণে পানি জমেছে তার থেকে যদি সামান্য কিছু পানি বৃদ্ধি পায় তাতে করেই গতবারের মতো এবারও অনেক হরিণের ক্ষতি হবে।

এদিকে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, কয়েকদিন ধরে দুপুরের দিকে জোয়ারে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বাড়ছে আড়াই ফুট থেকে সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত।

আড়াই ফুট উচ্চতার জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়েছে করমজল, জোংড়া, মরাপশুর, হাড়বাড়ীয়, ঘাগরামারী ও লাউডোব এলাকা। এছাড়া সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়েছে হিরণপয়েন্ট, কটকা ও কচিখালী বনাঞ্চল। পুরো বনের ভিতরেই জায়গা বিশেষ আড়াই থেকে সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এতে বন্যপ্রাণীর ক্ষতির তেমন কোন আশংকা না থাকলেও দীর্ঘ সময় জলবদ্ধতা থাকার কারণে অনেক বৃক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

তবে বন সংরক্ষণ বিভাগ কর্মকর্তাগণ বন্যপ্রাণীদের সুবিধার্থে পুরো বন জুড়ে ৪০ টি টাইগার টিলা উচু টিলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন। বনের ভিতরে পানি বাড়লে বাঘ, হরিণ ও শুকরসহ অন্যান্য প্রাণী উচু টিলায় আশ্রয় নিয়ে থাকে। তিনি আরো জানিয়েছেন নদীর পানি ক্রমান্বয়ে যদি বৃদ্ধি পেতে থাকে আর ভাটায় যদি না নামতে পারে সেক্ষেত্রে অধিক ক্ষতির আশঙ্কা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । ফলে বন্যপ্রানীর ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

তবে এবার যে পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে করে ক্ষতি হবে না হবেনা বনের অভ্যন্তরে থাকা ৮৮টি মিষ্টি পানির পুকুরের। কারণ পুকুরগুলো পাড় অনেক উচু, তাই লবণ পানি ঢুকে মিষ্টি পানির আধারগুলোর ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই। মুলত অমবস্যা ও পূর্ণিমার গোনের সময় নদ-নদীতে পানি বেড়ে থাকে। কিন্ত গেল অমাবস্যার গোনের সাথে যোগ হয়েছে নিম্নচাপের প্রভাব। এতে পানি বেড়েছে। গরমকালে দিনের জোয়ারে পানি বেশি হয়, রাতের জোয়ারে কম হয়। আর শীতকাল এর বিপরীত। এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে তলিয়েছে মোংলার পশুর নদীর পাড়ের ফসলি জমি, ঘরবাড়ী ও রাস্তাঘাট। ভাটায় পানি নেমে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষদের ক্ষতি ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকি কম থাকলেও ফসলের ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন।