অতনু চৌধুরী (রাজু)
বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি
হতদরিদ্র পরিবারের দুই জমজ বোন এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ (এ প্লাস) পেয়ে শেখ হেলাল উদ্দীন সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। হতদরিদ্র এ পরিবারটির দিনমজুর বাবা এখন বিছানায় পক্ষাঘাতগ্রস্থ, মা সেলাইয়ের কাজ করেন। একমাত্র ছোট ভাই পাঁচ বছর বয়স থেকেই ডায়াবেটিক্সে আক্রান্ত। টাকার অভাবে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে না পারায় এখন শারীরিক সমস্যার সাথে অনেকটা মানসিকভাবে ভারসম্যহীন। জীর্ন কুটিরে বসবাস করা এমন একটা প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে এসেছে ফাতেমা ও জোহরা। স্বপ্ন বড় হয়ে চাটার্ড একাউটেন্ট হবে। সমাজে মাথা উঁচু করে দাড়াবে। কিন্তু সে স্বপ্নে এখন বাঁধ সেধেছে চরম দারিদ্রতা।
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দুরে শুভদিয়া ইউনিয়নের দুর্গম কচুয়া গ্রামের জিল্লুর রহমান তালুকদারেরব জমজ মেয়ে ফাতেমা খাতুন ও জোহরা খাতুন। অভাবের কারণে দু’বোন অন্যের বাসায় প্রাইভেট পড়িয়ে যে সামান্য উপর্জন করে তার সাথে মায়ের সেলাইয়ের টাকা দিয়ে কোন মতে সংসার চলে। ধারকর্য ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় এসএসসি পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে দু’বোন জিপিএ-৫ পেয়েছে। দু বেলা ঠিকমতো খাবার খরচ চালানো যাদের জন্য দুরুহ, তাদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার খরচ চালানো ও গ্রাম থেকে প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার দুরের কলেজে নিয়মিত ক্লাস করার খরচ চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন মা মাসুদা বেগম। মা বাবার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে ভোর থেকেই গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রাইভেট পড়ান দু’বোন। বাড়ি ফিরে মাকে সাহায্য, বাবা ও ভাইকে সেবাযত্নের পর গভীর রাত পর্যন্ত জেগে লেখাপড়া করেন তারা। – এভাবেই নিজেদের সংগ্রামের কথা বলছিলেন আদম্য ফাতেমা ও জোহরা।
ফাতেমা ও জোহরার বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্থ দিনমজুর জিল্লুর রহমান ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলেন, ‘বাড়ির জায়গাটুকু ছাড়া আমার কিছুই নেই। পুরাতন এই ছোট্ট একটি ঘরে পরিবারের পাঁচ সদস্যের বসবাস। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলাম আমি। দিনমজুরের কাজ করতাম। প্যারালাইসিস হওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারি না। মেয়ে দুইটা নিজের চেষ্টায় যতদুর পারছে লেখাপড়া করেছে। এখন কারো সহযোাগীতা না পেলে ওদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে মাসুদা বেগম জানান, গরীব হলেও তার মেয়ে দু’টি লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে চায়। ধারকর্যকরে কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু এখন কলেজে পড়ানোর মতো আর্থিক অবস্থা তাদের না থাকায় পড়াশোনা বন্ধের পথে।
শেখ হেলাল উদ্দীন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বটু গোপাল দাস বলেন, ‘ফাতেমা ও জোহরা অত্যান্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার প্রতি তাদের খুব আগ্রহ। আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারি সহায়তা করার চেষ্টা করি। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। সমাজের বৃত্তবানদের সহযোগিতা পেলে মেয়ে দুটি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে। লেখাপড়ার সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে মেয়ে দুটি বড় হয়ে সমাজের মুখ উজ্জ্বল করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ফাতেমা ও জোহরা কি সত্যিই তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে, নাকি অভাবের কারণে মাঝ পথেই থেমে যাবে।