ঢাকা ০১:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo কটিয়াদীতে কচিকণ্ঠ শিশু একাডেমি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত Logo স্বার্থান্বেষী মহলের প্রতিরোধ সত্বেও অবৈধ পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে Logo পৃথিবীর এক পঞ্চামাংশ মানুষ গালাকে ভালোবাসে উদযাপন করেন:শেন হাইসিয়ং Logo সম্পর্ক নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিবে সরকার : উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন Logo সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন Logo আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র Logo ইডটকো বাংলাদেশের অত্যাধুনিক ফাইভ-জি রেডি টাওয়ার অপারেশন সেন্টার চালু: উদ্বোধন করলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার Logo জলবায়ু তহবিল সংগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিসিডিপি চালু করা হয়েছে। – পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান Logo মনিরুজ্জামান খান জামালপুর আর এম বিদ্যাপীঠের সভাপতি নির্বাচিত Logo অগ্নিদগ্ধ সেই শিশু সামিয়া আর নেই!!

আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র

রবিবার বিকাল ৩.০০ ঘটিকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে “সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ” এর উদ্যোগে আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্র বিরোধী পরিকল্পনা, পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা ও পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের করণীয় এবং ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র বিচ্ছিন্নতাবাদ বিরোধী বয়ানের মূল্যায়ন শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংগঠনের সভাপতি মোঃ মোস্তফা আল ইহযায এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) এর প্রেসিডেন্ট এম এ হাশেম রাজু, প্রধান আলোচক সহকারী এটর্নি জেনারেল এডভোকেট আলম খান, মূখ্য আলোচক ব্যারিস্টার মেজর (অবঃ) সরওয়ার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্ণেল (অবঃ) হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক, সাবেক সচিব ড. জকরিয়া, অধ্যক্ষ এম শরিফুল ইসলাম, মো. সাহিদুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম প্রমুখ।

সভার শুরুতে আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র ও স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির কর্মসূচিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি ও লাল সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলার দাবির মূল্যায়ণে বক্তাগণ বলেন, সম্প্রতি এনসিটিবির পরিমার্জন কমিটিতে নিয়োগকৃত রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদরা পাঠ্য বইতে রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইন বিরোধী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ যুক্ত গ্রাফিতি অন্তর্ভুক্ত করে। এটাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার সুপ্ত পরিকল্পনা দেশবাসীর কাছে ফাঁস করে দেয় ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’। এই কারণে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি, তাদের পৃষ্ঠপোষক ও দোসর বামপন্থীগণ একজোট হয়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ১৫ জানুয়ারীর কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা করে, রাখাল রাহা’র যোগসাজশে চাতুরতার সাথে তা বাস্তবায়ন করে।

আমরা ঘটনার অনুসন্ধানে জানতে পারি গত ৮ জানুয়ারি ঢাবি সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন, ১২ জুনুয়ারি এনসিটিবির সম্মুখে শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’এবং গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখেও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলো, কর্মসূচি থেকে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ ৬ জনের প্রতিনিধি দলকে ডেকে নিয়ে যায় চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করার জন্য। কিন্তু সভারেন্টির প্রতিনিধি দলকে চেয়ারম্যানের পরিবর্তে পরিমার্জন কমিটির রাখাল রাহা সাথে বসিয়ে দেওয়া হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাখাল রাহা বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতিদের মিছিল এনসিটিবি পর্যন্ত পৌঁছে সহিংসতা সৃষ্টি পর্যন্ত সময় ক্ষেপন করতে থাকে। একপর্যায়ে উপজাতিরাই ঘটনাস্থলে এসে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। সভারেন্টির পক্ষের লোকজন আত্মরক্ষার্থে হামলাকারীদের প্রতিহত করলে অনেকে হতাহতের শিকার হয়।পরবর্তীতে হামলাকারীদের পক্ষে একপাক্ষিক ভাবে মামলা রুজু করা হয় আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি পাশাপাশি রুজুকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।

ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বিষয়ে বক্তাগণ বলেন, ভারতীয় উসকানিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র তৈরির ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ। ভারতীয় মিডিয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চল নিয়ে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রের বীজবপন করা হচ্ছে, ছড়ানো হচ্ছে প্রতিহিংসা। ভারতীয়রা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে এবং ঐ অঞ্চলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে একটি প্রক্সি যুদ্ধ লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে আরাকান আর্মির সুসম্পর্ক থাকায় আরাকান আর্মির মাধ্যমেও বাংলাদেশের সাথে প্রক্সি যুদ্ধ করানোর ষড়যন্ত্র করছে ভারত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে আহবান করছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ব্রিটিশ-প্রবর্তিত শাসনবিধি ১৯০০ মূল হাতিয়ার, বর্তমানেও ব্রিটিশ ও পশ্চিমা ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের একটি অংশ নিয়ে পূর্ব তিমুরের মতো খ্রিস্টান দেশ বানানোর চক্রান্ত চলছে, যা ১৯ শতাব্দীর ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিটিশ-প্রবর্তিত শাসনবিধি শাসনবিধি ১৯০০ বাতিল করে দেশের সার্বজনীন শাসনবিধি কার্যকর করার অনুরোধ করছি এবং ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করছি।

বক্তাগণ আদিবাসী প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে বাঙ্গালিরাই আদিবাসী হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রতি বহিরাগত ‘উপজাতি’ জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাতিসংঘ কর্তৃক ব্যবহৃত ইন্ডিজেনাস শব্দটির অপব্যাখ্যা দিয়ে একদল দেশদ্রোহী ভূরাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি গভীর ভাবে পর্যালোচনা করলেই বিভ্রান্তির অবসান ঘটবে। অযৌক্তিকভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে দিয়ে কোনো একটি জনগোষ্ঠীকে মর্যাদামণ্ডিত করা যায় না। উপজাতি হচ্ছে একটি জনসমষ্টি যাদের নিজস্ব ভাষা এবং সংস্কৃতি আছে যা অন্য জাতির থেকে আলাদা এবং তারা পৃথক একেকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাস করে। এক কথায় একটি বৃহত্তর জাতির পাশাপাশি ক্ষুদ্রতর জাতির অবস্থানকে উপজাতি হিসাবে বুঝানো হয়। আদিবাসী হচ্ছে আদিকাল বা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে অর্থাৎ সমাজ ব্যবস্থার প্রচলনের শুরু থেকে বসবাস করে এমন জাতিকে বুঝায়, এরাই ক্রমান্বয়ে রূপ নেয় রাষ্ট্রের প্রধান জাতি হিসাবে। স্বাধীন বাংলাদেশের মূল নেতৃত্বে ছিলো বাঙ্গালীরা, এদের সাথে কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিও ছিলো। কিন্তু বাঙ্গালীদের বাদ দিয়ে যদি কিছু ক্ষুদ্র জাতিকে আদিবাসী আখ্যায়িত করা হয় তাহলে কি “বাঙ্গালীরা নব্যবাসী”? প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৫ শত বছরের ইতিহাস থাকলেও সেখানে তারা ভারতীয় হিসাবে বসবাস করছে, আমাদের সীমান্তবর্তী মায়ানমারের রাজ্যাগুলোতেও মারমা সম্প্রদায় আদিবাসী হিসাবে স্বকৃীত নয় তাই তাদের আদিভূমিতে স্বকৃীতি না পেয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী স্বীকৃতির আন্দোলনকে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র হিসাবে বিবেচনা না করার কোনোরূপ অবকাশ নেই। অনতিবিলম্বে আদিবাসী দাবিদার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রাষ্ট্রদ্রোহি ঘোষণা দিয়ে শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এসময় সাবভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো-
১। বাংলাদেশের সকল নাগরিক বাংলাদেশি এর আলোকে সকল জাতিকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশ সকল জাতি সত্ত্বাকে স্ব-স্ব জাতের নাম উল্লেখ পূর্বক সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২। পার্বত্য চট্টগ্রামের আত্মঘাতী সংঘাত বন্ধ ও শান্তি প্রতিষঠায় “শান্তি চুক্তি নামক ” অবৈধ কালো চুক্তি বাতিল করে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নিয়ে সম্প্রীতি কমিশন গঠন করতে হবে।
৩। পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্র বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদ নির্মূল ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে একটি সামরিক কমিশন গঠন করতে হবে।
৪। বৈষম্য মুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্যে সারাদেশে ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল নাগরিকে সাংবিধানিক সমঅধিকার প্রদান ও প্রচলিত ভূমি আইনসহ কার্যাকর করতে হবে। এক্ষেত্রে ভূমিহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের পার্বত্য অঞ্চলেই সরকারি ভাবে স্থায়ী পূর্ণবাসন করতে হবে।
৫। আদিবাসী দাবিদারদের দেশদ্রোহী ঘোষণা দিয়ে ২০১৮ সালে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার বন্ধে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন এর পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং পাঠ্যপুস্তকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে আদিবাসী শব্দ যুক্ত করিদের চিহ্নিত করে শাস্তির প্রদান করতে হবে।
৬। পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্রিটিশ প্রবর্তিত শাসনবিধি ১৯০০ বাতিল করে, বাংলাদেশের সকল জাতির স্ব স্ব সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা রক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে।
৭। বাংলাদেশ বসবাস করে প্রতিবেশী ও পশ্চিমাদের অর্থায়ণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩২ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার কার্য সম্পূর্ণ করতে হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কটিয়াদীতে কচিকণ্ঠ শিশু একাডেমি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত

SBN

SBN

আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র

আপডেট সময় ০৭:১৬:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

রবিবার বিকাল ৩.০০ ঘটিকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে “সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ” এর উদ্যোগে আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্র বিরোধী পরিকল্পনা, পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা ও পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের করণীয় এবং ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র বিচ্ছিন্নতাবাদ বিরোধী বয়ানের মূল্যায়ন শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংগঠনের সভাপতি মোঃ মোস্তফা আল ইহযায এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) এর প্রেসিডেন্ট এম এ হাশেম রাজু, প্রধান আলোচক সহকারী এটর্নি জেনারেল এডভোকেট আলম খান, মূখ্য আলোচক ব্যারিস্টার মেজর (অবঃ) সরওয়ার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্ণেল (অবঃ) হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক, সাবেক সচিব ড. জকরিয়া, অধ্যক্ষ এম শরিফুল ইসলাম, মো. সাহিদুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম প্রমুখ।

সভার শুরুতে আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র ও স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির কর্মসূচিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি ও লাল সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলার দাবির মূল্যায়ণে বক্তাগণ বলেন, সম্প্রতি এনসিটিবির পরিমার্জন কমিটিতে নিয়োগকৃত রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদরা পাঠ্য বইতে রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইন বিরোধী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ যুক্ত গ্রাফিতি অন্তর্ভুক্ত করে। এটাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার সুপ্ত পরিকল্পনা দেশবাসীর কাছে ফাঁস করে দেয় ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’। এই কারণে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি, তাদের পৃষ্ঠপোষক ও দোসর বামপন্থীগণ একজোট হয়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ১৫ জানুয়ারীর কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা করে, রাখাল রাহা’র যোগসাজশে চাতুরতার সাথে তা বাস্তবায়ন করে।

আমরা ঘটনার অনুসন্ধানে জানতে পারি গত ৮ জানুয়ারি ঢাবি সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন, ১২ জুনুয়ারি এনসিটিবির সম্মুখে শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’এবং গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখেও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলো, কর্মসূচি থেকে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ ৬ জনের প্রতিনিধি দলকে ডেকে নিয়ে যায় চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করার জন্য। কিন্তু সভারেন্টির প্রতিনিধি দলকে চেয়ারম্যানের পরিবর্তে পরিমার্জন কমিটির রাখাল রাহা সাথে বসিয়ে দেওয়া হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাখাল রাহা বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতিদের মিছিল এনসিটিবি পর্যন্ত পৌঁছে সহিংসতা সৃষ্টি পর্যন্ত সময় ক্ষেপন করতে থাকে। একপর্যায়ে উপজাতিরাই ঘটনাস্থলে এসে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। সভারেন্টির পক্ষের লোকজন আত্মরক্ষার্থে হামলাকারীদের প্রতিহত করলে অনেকে হতাহতের শিকার হয়।পরবর্তীতে হামলাকারীদের পক্ষে একপাক্ষিক ভাবে মামলা রুজু করা হয় আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি পাশাপাশি রুজুকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।

ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বিষয়ে বক্তাগণ বলেন, ভারতীয় উসকানিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র তৈরির ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ। ভারতীয় মিডিয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চল নিয়ে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রের বীজবপন করা হচ্ছে, ছড়ানো হচ্ছে প্রতিহিংসা। ভারতীয়রা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে এবং ঐ অঞ্চলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে একটি প্রক্সি যুদ্ধ লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে আরাকান আর্মির সুসম্পর্ক থাকায় আরাকান আর্মির মাধ্যমেও বাংলাদেশের সাথে প্রক্সি যুদ্ধ করানোর ষড়যন্ত্র করছে ভারত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে আহবান করছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ব্রিটিশ-প্রবর্তিত শাসনবিধি ১৯০০ মূল হাতিয়ার, বর্তমানেও ব্রিটিশ ও পশ্চিমা ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের একটি অংশ নিয়ে পূর্ব তিমুরের মতো খ্রিস্টান দেশ বানানোর চক্রান্ত চলছে, যা ১৯ শতাব্দীর ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিটিশ-প্রবর্তিত শাসনবিধি শাসনবিধি ১৯০০ বাতিল করে দেশের সার্বজনীন শাসনবিধি কার্যকর করার অনুরোধ করছি এবং ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করছি।

বক্তাগণ আদিবাসী প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে বাঙ্গালিরাই আদিবাসী হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রতি বহিরাগত ‘উপজাতি’ জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাতিসংঘ কর্তৃক ব্যবহৃত ইন্ডিজেনাস শব্দটির অপব্যাখ্যা দিয়ে একদল দেশদ্রোহী ভূরাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি গভীর ভাবে পর্যালোচনা করলেই বিভ্রান্তির অবসান ঘটবে। অযৌক্তিকভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে দিয়ে কোনো একটি জনগোষ্ঠীকে মর্যাদামণ্ডিত করা যায় না। উপজাতি হচ্ছে একটি জনসমষ্টি যাদের নিজস্ব ভাষা এবং সংস্কৃতি আছে যা অন্য জাতির থেকে আলাদা এবং তারা পৃথক একেকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাস করে। এক কথায় একটি বৃহত্তর জাতির পাশাপাশি ক্ষুদ্রতর জাতির অবস্থানকে উপজাতি হিসাবে বুঝানো হয়। আদিবাসী হচ্ছে আদিকাল বা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে অর্থাৎ সমাজ ব্যবস্থার প্রচলনের শুরু থেকে বসবাস করে এমন জাতিকে বুঝায়, এরাই ক্রমান্বয়ে রূপ নেয় রাষ্ট্রের প্রধান জাতি হিসাবে। স্বাধীন বাংলাদেশের মূল নেতৃত্বে ছিলো বাঙ্গালীরা, এদের সাথে কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিও ছিলো। কিন্তু বাঙ্গালীদের বাদ দিয়ে যদি কিছু ক্ষুদ্র জাতিকে আদিবাসী আখ্যায়িত করা হয় তাহলে কি “বাঙ্গালীরা নব্যবাসী”? প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৫ শত বছরের ইতিহাস থাকলেও সেখানে তারা ভারতীয় হিসাবে বসবাস করছে, আমাদের সীমান্তবর্তী মায়ানমারের রাজ্যাগুলোতেও মারমা সম্প্রদায় আদিবাসী হিসাবে স্বকৃীত নয় তাই তাদের আদিভূমিতে স্বকৃীতি না পেয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী স্বীকৃতির আন্দোলনকে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র হিসাবে বিবেচনা না করার কোনোরূপ অবকাশ নেই। অনতিবিলম্বে আদিবাসী দাবিদার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রাষ্ট্রদ্রোহি ঘোষণা দিয়ে শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এসময় সাবভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো-
১। বাংলাদেশের সকল নাগরিক বাংলাদেশি এর আলোকে সকল জাতিকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশ সকল জাতি সত্ত্বাকে স্ব-স্ব জাতের নাম উল্লেখ পূর্বক সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২। পার্বত্য চট্টগ্রামের আত্মঘাতী সংঘাত বন্ধ ও শান্তি প্রতিষঠায় “শান্তি চুক্তি নামক ” অবৈধ কালো চুক্তি বাতিল করে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নিয়ে সম্প্রীতি কমিশন গঠন করতে হবে।
৩। পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্র বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদ নির্মূল ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে একটি সামরিক কমিশন গঠন করতে হবে।
৪। বৈষম্য মুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্যে সারাদেশে ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল নাগরিকে সাংবিধানিক সমঅধিকার প্রদান ও প্রচলিত ভূমি আইনসহ কার্যাকর করতে হবে। এক্ষেত্রে ভূমিহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের পার্বত্য অঞ্চলেই সরকারি ভাবে স্থায়ী পূর্ণবাসন করতে হবে।
৫। আদিবাসী দাবিদারদের দেশদ্রোহী ঘোষণা দিয়ে ২০১৮ সালে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার বন্ধে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন এর পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং পাঠ্যপুস্তকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে আদিবাসী শব্দ যুক্ত করিদের চিহ্নিত করে শাস্তির প্রদান করতে হবে।
৬। পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্রিটিশ প্রবর্তিত শাসনবিধি ১৯০০ বাতিল করে, বাংলাদেশের সকল জাতির স্ব স্ব সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা রক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে।
৭। বাংলাদেশ বসবাস করে প্রতিবেশী ও পশ্চিমাদের অর্থায়ণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩২ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার কার্য সম্পূর্ণ করতে হবে।