ঢাকা ১০:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo আবরারের রক্ত আর হাদির প্রাণ: এক রাষ্ট্র, সহস্র বিচারহীনতার দলিল Logo আত্রাই-রাণীনগর আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা Logo বুড়িচংয়ে মাটি বাহী ড্রাম ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু Logo দেশকে অস্থির করে তোলার জন্য কিছু লোক পেছন থেকে কাজ করছে; মির্জা ফখরুল Logo পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার পাওয়া গেল ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৮ টাকা Logo সুনামগঞ্জে ২৮ বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মদ আটক Logo বরুড়া উপজেলা জনকল্যাণ সমিতি ঢাকা’র নতুন সভাপতি মোঃ শাহ আলম, সম্পাদক মনির Logo চান্দিনায় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ Logo সামরিক বিধিনিষেধ ভাঙার চেষ্টায় জাপান: বিশ্বজনমতের কড়া নজরদারি Logo বিশ্ব উদ্ভাবন সূচকে শীর্ষ দশে চীন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব

আবরারের রক্ত আর হাদির প্রাণ: এক রাষ্ট্র, সহস্র বিচারহীনতার দলিল

শাহিন আলম আশিক

​কোনো গল্প নয়, এ এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা
​আমরা এমন এক জনপদে বাস করছি যেখানে ন্যায়বিচার পাওয়াটা এখন অলীক কল্পনা, আর মৃত্যুটা এক চরম বাস্তবতা। আমাদের রাষ্ট্রের ইতিহাস কোনো রূপকথা নয়, বরং এটি রাজপথে জমে থাকা জমাটবদ্ধ রক্তের এক দীর্ঘ নথি। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের পিটিয়ে থেঁতলে দেওয়া শরীর থেকে শুরু করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদির নিথর দেহ—এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন কাহিনী নয়। এগুলো রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতার জীবন্ত প্রমাণ। আজ ক্ষমতার মসনদে কোনো রাজনৈতিক দল নেই, তবুও কেন হাদি হত্যার বিচার ফাইলবন্দি হয়ে আছে? এই প্রশ্নটিই আজ রাষ্ট্রের কপালে কলঙ্কের তিলক এঁকে দিচ্ছে।

​ ইলিয়াস আলী থেকে হাদি:
হারিয়ে যাওয়া মানুষের মিছিল
———————————————
​জননেতা ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া কোনো গল্প নয়, এটি একটি পরিবারের দীর্ঘ এক যুগের নিঃশব্দ হাহাকার। সাগর-রুনী হত্যার বিচার না হওয়া কোনো থ্রিলার উপন্যাসের পাতা নয়, এটি আমাদের তদন্ত সংস্থাগুলোর চরম নির্লজ্জতার দলিল। এই দীর্ঘকালীন বিচারহীনতার প্রশ্রয়েই জন্ম নিয়েছে হাদি হত্যার মতো দুঃসাহস। যখন রাষ্ট্র খুনিদের আড়াল করে অথবা ধরতে গড়িমসি করে, তখন অপরাধ করাটা এই সমাজে উৎসবে পরিণত হয়। এটিই আমাদের বর্তমানের নিষ্ঠুর বাস্তবতা।

​প্রতিষ্ঠান যখন পঙ্গু: কার স্বার্থে এই নীরবতা?
———————————————
​আগে আমরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের দোহাই শুনতাম। কিন্তু এখন যখন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় নেই, তখন কার অদৃশ্য ইশারায় পুলিশ বা প্রশাসন হাদি হত্যার আসামিদের ধরতে ঢিলেমি করছে? আবরারের রক্ত আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল যে, খুনিরা কোনো দলের পরিচয় নয়, বরং বিচারহীনতার ছায়াতলে বেড়ে ওঠা একদল দানব। আজ রাষ্ট্রের ব্যুরোক্রেটিক জড়তা বা আমলাতান্ত্রিক আলসেমি আসলে অপরাধীদের পালানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। এটি কোনো তাত্ত্বিক কথা নয়, এটি মাঠপর্যায়ের কঠোর সত্য।

​ইনকিলাব মঞ্চ ও রাজপথের লড়াই: অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম

​ইনকিলাব মঞ্চের এই আন্দোলন কেবল বিচারের দাবি নয়, এটি মূলত এই পচে যাওয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক প্রকাশ্য বিদ্রোহ। হাদি হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন থামবে না, কারণ এটি কেবল হাদির জন্য নয়—এটি আগামীর প্রতিটি সম্ভাব্য শিকারের জন্য। আমরা যখন বলি “হাদি হত্যার বিচার চাই”, তখন আমরা আসলে এই মৃতপ্রায় রাষ্ট্রকাঠামোকে সজাগ করার শেষ চেষ্টা করছি।

​ইনসাফহীন রাষ্ট্র কি টিকে থাকবে?

​সাগর-রুনী, আবরার ফাহাদ এবং সর্বশেষ হাদি—এই রক্তগুলো কোনো কাল্পনিক বর্ণনা নয়। এগুলো আমাদের মানচিত্রের গায়ে লেগে থাকা স্থায়ী দাগ। ক্ষমতার চেয়ারে কে আছে, তা দিয়ে সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসে না। সাধারণ মানুষ চায় নিরাপত্তা এবং ইনসাফ। যদি এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়েও হাদি হত্যার বিচার না হয়, তবে বুঝতে হবে এ রাষ্ট্রের মেরামত অসম্ভব। রাষ্ট্র যদি কেবল শক্তিশালী বা প্রভাবশালীদের পাহারাদার হয়, তবে সাধারণ মানুষের কাছে সেই রাষ্ট্রের কোনো নৈতিক বৈধতা থাকে না।

​এবার জবাব দেওয়ার পালা
​”আবরারের রক্ত আর হাদির প্রাণ”

—এই দুই নাম আজ আমাদের রাষ্ট্রের জন্য এক বড় অভিযোগপত্র। আমরা আর কোনো ‘তদন্ত চলছে’ মার্কা আশ্বাস চাই না। আমরা চাই দৃশ্যমান বিচার। হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত করা কোনো দয়া নয়, এটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার দায়। যদি আজ এই বিচার না হয়, তবে ইতিহাসে লেখা থাকবে—শাসক বদলালেও এ রাষ্ট্রটি এখনো খুনিদের অভয়ারণ্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
​রক্তের হিসাব চাই, ইনসাফ কায়েম হোক।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আবরারের রক্ত আর হাদির প্রাণ: এক রাষ্ট্র, সহস্র বিচারহীনতার দলিল

SBN

SBN

আবরারের রক্ত আর হাদির প্রাণ: এক রাষ্ট্র, সহস্র বিচারহীনতার দলিল

আপডেট সময় ০৭:৩৬:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

শাহিন আলম আশিক

​কোনো গল্প নয়, এ এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা
​আমরা এমন এক জনপদে বাস করছি যেখানে ন্যায়বিচার পাওয়াটা এখন অলীক কল্পনা, আর মৃত্যুটা এক চরম বাস্তবতা। আমাদের রাষ্ট্রের ইতিহাস কোনো রূপকথা নয়, বরং এটি রাজপথে জমে থাকা জমাটবদ্ধ রক্তের এক দীর্ঘ নথি। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের পিটিয়ে থেঁতলে দেওয়া শরীর থেকে শুরু করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদির নিথর দেহ—এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন কাহিনী নয়। এগুলো রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতার জীবন্ত প্রমাণ। আজ ক্ষমতার মসনদে কোনো রাজনৈতিক দল নেই, তবুও কেন হাদি হত্যার বিচার ফাইলবন্দি হয়ে আছে? এই প্রশ্নটিই আজ রাষ্ট্রের কপালে কলঙ্কের তিলক এঁকে দিচ্ছে।

​ ইলিয়াস আলী থেকে হাদি:
হারিয়ে যাওয়া মানুষের মিছিল
———————————————
​জননেতা ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া কোনো গল্প নয়, এটি একটি পরিবারের দীর্ঘ এক যুগের নিঃশব্দ হাহাকার। সাগর-রুনী হত্যার বিচার না হওয়া কোনো থ্রিলার উপন্যাসের পাতা নয়, এটি আমাদের তদন্ত সংস্থাগুলোর চরম নির্লজ্জতার দলিল। এই দীর্ঘকালীন বিচারহীনতার প্রশ্রয়েই জন্ম নিয়েছে হাদি হত্যার মতো দুঃসাহস। যখন রাষ্ট্র খুনিদের আড়াল করে অথবা ধরতে গড়িমসি করে, তখন অপরাধ করাটা এই সমাজে উৎসবে পরিণত হয়। এটিই আমাদের বর্তমানের নিষ্ঠুর বাস্তবতা।

​প্রতিষ্ঠান যখন পঙ্গু: কার স্বার্থে এই নীরবতা?
———————————————
​আগে আমরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের দোহাই শুনতাম। কিন্তু এখন যখন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় নেই, তখন কার অদৃশ্য ইশারায় পুলিশ বা প্রশাসন হাদি হত্যার আসামিদের ধরতে ঢিলেমি করছে? আবরারের রক্ত আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল যে, খুনিরা কোনো দলের পরিচয় নয়, বরং বিচারহীনতার ছায়াতলে বেড়ে ওঠা একদল দানব। আজ রাষ্ট্রের ব্যুরোক্রেটিক জড়তা বা আমলাতান্ত্রিক আলসেমি আসলে অপরাধীদের পালানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। এটি কোনো তাত্ত্বিক কথা নয়, এটি মাঠপর্যায়ের কঠোর সত্য।

​ইনকিলাব মঞ্চ ও রাজপথের লড়াই: অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম

​ইনকিলাব মঞ্চের এই আন্দোলন কেবল বিচারের দাবি নয়, এটি মূলত এই পচে যাওয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক প্রকাশ্য বিদ্রোহ। হাদি হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন থামবে না, কারণ এটি কেবল হাদির জন্য নয়—এটি আগামীর প্রতিটি সম্ভাব্য শিকারের জন্য। আমরা যখন বলি “হাদি হত্যার বিচার চাই”, তখন আমরা আসলে এই মৃতপ্রায় রাষ্ট্রকাঠামোকে সজাগ করার শেষ চেষ্টা করছি।

​ইনসাফহীন রাষ্ট্র কি টিকে থাকবে?

​সাগর-রুনী, আবরার ফাহাদ এবং সর্বশেষ হাদি—এই রক্তগুলো কোনো কাল্পনিক বর্ণনা নয়। এগুলো আমাদের মানচিত্রের গায়ে লেগে থাকা স্থায়ী দাগ। ক্ষমতার চেয়ারে কে আছে, তা দিয়ে সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসে না। সাধারণ মানুষ চায় নিরাপত্তা এবং ইনসাফ। যদি এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়েও হাদি হত্যার বিচার না হয়, তবে বুঝতে হবে এ রাষ্ট্রের মেরামত অসম্ভব। রাষ্ট্র যদি কেবল শক্তিশালী বা প্রভাবশালীদের পাহারাদার হয়, তবে সাধারণ মানুষের কাছে সেই রাষ্ট্রের কোনো নৈতিক বৈধতা থাকে না।

​এবার জবাব দেওয়ার পালা
​”আবরারের রক্ত আর হাদির প্রাণ”

—এই দুই নাম আজ আমাদের রাষ্ট্রের জন্য এক বড় অভিযোগপত্র। আমরা আর কোনো ‘তদন্ত চলছে’ মার্কা আশ্বাস চাই না। আমরা চাই দৃশ্যমান বিচার। হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত করা কোনো দয়া নয়, এটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার দায়। যদি আজ এই বিচার না হয়, তবে ইতিহাসে লেখা থাকবে—শাসক বদলালেও এ রাষ্ট্রটি এখনো খুনিদের অভয়ারণ্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
​রক্তের হিসাব চাই, ইনসাফ কায়েম হোক।