
মোঃ সোহেল আমান, রাজশাহী ব্যুরো
ঈশ্বরদীর চাঞ্চল্যকর কিশোর তপু হত্যাকান্ডে জড়িত দুই আসামিকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত ১৫ জুন দুপুরে ঈশ্বরদী থানাধীন মশুড়িয়া কলেজ পাড়াস্থ কিশোর তপু (১৪) নিজ বাড়ি হতে বাহির হয়ে নিখোঁজ হয়। অতঃপর অজ্ঞাত অপহরনকারী কিশোর তপুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তপুর পিতাকে ফোন করে তপুকে অপহরন করেছে বলিয়া জানায় এবং মুক্তিপন বাবদ ৩০,০০০/= (ত্রিশ হাজার) টাকা দাবি করে। অন্যথায় তপুকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। উক্ত ঘটনার পর তপুর পিতা ছেলের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অজ্ঞাত অপহরনকারীর প্রদানকৃত বিকাশ নাম্বারে ৭,১৫০/= (সাত হাজার একশত পঞ্চাশ) টাকা প্রেরন করে। বিশ মিনিটের মধ্যে ছেলেকে ফেরৎ দিতে চাইলেও অপহরনকারীরা সময় ক্ষেপন করতে থাকে এবং ১৫/০৬/২০২৪ ইং তারিখ পার হয়ে গেলেও ছেলেকে ফেরৎ না পেয়ে তপুর মা বাদী হয়ে পরদিন ইং-১৬/০৬/২০২৪ তারিখ ঈশ্বরদী থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মূল আসামীদের সনাক্ত করা হলেও ভিকটিম কে পাওয়া যাচ্ছিল না। গত ইং-২২/০৬/২০২৪ তারিখ দুপুর ১৪.১৫ ঘটিকার সময় ঈশ্বরদী থানাধীন মশুড়িয়াপাড়াস্থ অরন্য ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় সন্দিগ্ধ আসামী জয় এর কক্ষ হতে উৎকট গন্ধ আসতে থাকে।
বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় ভিকটিম তপুর পিতা মাতাকে খবর দেয়া হয়। এছাড়াও মেসের মালিক সহ আশেপাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে সন্দেহভাজন আসামী জয় এর কক্ষটির তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে একটি টিনের ট্যাংকের মধ্যে অর্ধগলিত রক্তাক্ত লাশ দেখতে পাওয়া যায়। ভিকটিম তপুর পিতামাতা উক্ত লাশটি তাহাদের হারানো সন্তান তপুর বলে সনাক্ত করে। অতঃপর বিষয়টি পাবনা জেলার পুলিশ সুপার , মোঃ আকবর আলী মুন্সি (অতিঃ ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) কে জানালে তিনিসহ অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগন দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ সুপার অত্র মামলার ঘটনার সহিত জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এর নেতৃত্বে ঈশ্বরদী থানা ও ঈশ্বরদী ফাঁড়ির অফিসার ফোর্সের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান করে পরবর্তীতে পাবনা সদর থানাধীন হামিদ রোড ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার দুবলিয়া গ্রামের মো: জিয়ার ছেলে প্রধান সন্দেহভাজন আসামী মোঃ জয়নাল আবেদীন জয় (২০) কে আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত জয় তপু হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করলে তাহার নিকট হতে অপহরনকান্ডে ব্যবহৃত ভিকটিম তপুর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয় এবং তার দেওয়া তথ্য মতে হত্যাকান্ডে জড়িত অপর আসামী ঈশ্বরদী থানার মাশুরিয়া পাড়া গ্রামের মোঃ ঈসা খালাশি (১৯) কে গ্রেফতার করা হয়।
অপর একজন আসামী পলাতক রয়েছে। মাশুরিয়া এলাকা হতে হত্যাকান্ডে জড়িত এবং আসামীদের দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী জয়নাল আবেদীন জয় ও পলাতক আসামী সোহেল ঈশ্বরদী কলেজের পেছনে জনৈক টিপু এর অরন্যা ছাত্রাবাসের ৩য় তলায় পাশাপাশি থাকতো এবং আসামী ঈসা খালাশি ঐ ছাত্রাবাসের নিচে ভাড়া থাকতেন।
ভিকটিম তপুর বাড়ী অরন্যা ছাত্রাবাসের পাশেই এবং ভিকটিম তপু আসামীগন একে অপরের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তপু অরন্যা ছাত্রাবাসে যাওয়া আসা করত। তারা স্থানীয় হাসুর দোকনের সামনে ফ্রি-ফায়ার গেম খেলত, আড্ডা দিত ও ধুমপান করত। আসামী জয় ইতিপূর্বে আতাইকুলা থানার একটি হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় মামলার খরচ চালানো এবং সে ছাত্রাবাসে খরচ বাবদ বেশ কিছু টাকা ধারগ্রস্থ হওয়ায় এবং মাদক সেবনের জন্য টাকার প্রয়োজন হওয়ায় অপর আসামী সোহেল ও ঈসার সাথে ঘটনার ২০/২৫ দিন পূর্বে অরন্যা ছাত্রাবাসে যে কোন একজন কে জিম্মি করে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতো তারা অপহরণ ও জিম্মি করার কাজে ফোন ব্যবহারের জন্য ঘটনার ৭/৮ দিন পূর্বে ঔ ছাত্রাবাসের মনির নামের একজন ছাত্রের ফোন চুরি করে। ঘটনার দিন ১৫ জুন বেলা ৩.৩০ ঘটিকায় আসামীদের পূর্ব পরিকল্পনা মতে আসামী জয় চুরি করা ফোন থেকে ফোন করে ভিকটিম তপুকে অরন্যা ছাত্রাবাসের আসামী জয়ের ৩০৫ নং কক্ষে ডেকে নেয়। তারপর আসামী সোহেল ও ঈসা ঐ রুমে প্রবেশ করে সকলে মিলে ভিকটিম তপুকে জিম্মি করে। ভিকটিম তপু আতঙ্কে চিৎকার শুরু করলে আসামী ঈসা উক্ত কক্ষে থাকা একটি ধারালো চাকু দ্বারা ভিকটিমকে আঘাত করে এবং অন্যান্য আসামী তাকে ধরে রাখে। ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তারা আসামী জয়ের বেল্ট দিয়ে তার হাত বেধে একটি ট্যাঙ্ক ভরে রাখে।
পরবর্তীতে আসামী জয় ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইলফোন দিয়ে ভিকটিমের বাবার ফোনে ফোন দিয়ে মুক্তিপন দাবী করে।
ধৃত আসামি জয় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌ: কা: বিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
মুক্তির লড়াই ডেস্ক : 


























