
কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মো. সাকিব হোসেন হৃদয় নামের এক তরুণের একক প্রচেষ্টায় সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন মো. মুসলিম মিয়া (২২) নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক।
ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা মো. মুসলিম চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামের মোশাররফ মিয়ার ছেলে। তরুণ সমাজকর্মী সাকিব হোসেন হৃদয় চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চাঁপাচৌ এলাকার বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকর্মে অংশ নেন।
স্থানীয়রা জানান, মাস চারেক আগে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী রেলওয়ে স্টেশনে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখেন সাকিব হোসেন হৃদয় নামের এক সমাজকর্মী। পরে ওই তরুণ সমাজকর্মী ভারসাম্যহীন যুবককে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ভারসাম্যহীন যুবকের নাম মুসলিম। তিনি গুণবতী ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামের মোশাররফ মিয়ার ছেলে। আগে সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন মুসলিম। মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা নতুন বিয়ে করেন। বিয়ের করে ঘরে সৎমা আনার পর থেকে শান্তি বিনষ্ট হয় মুসলিম মিয়ার। নিজের মা হারানোর শোক আর সৎমায়ের অত্যাচারে ধীরে ধীরে ভারসাম্য হারাতে থাকেন মুসলিম মিয়া।
ঘটনা শোনার পর সমাজকর্মী সাকিব হোসেন হৃদয়ের মনে আশা জাগে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা মুসলিমকে সঠিক চিকিৎসা করালে তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন। পরে ওই তরুণ ভারসাম্যহীন মুসলিমকে কুমিল্লা নগরীর একটি রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করান নিজ খরচে।
পরবর্তীতে অর্থ সংকট দেখা দিলে ওই তরুণ জুম্মার নামাজের সময় মসজিদে মুসল্লীদের কাছে সহায়তার আবেদন করলে মুসল্লিরা সাধ্যমতো সহায়তা করেন। এলাকার বন্ধুবান্ধব নিয়ে হাটে-বাজারে গিয়ে সহায়তা সংগ্রহ করেন।ওই এলাকার প্রবাসী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকার ফান্ড সংগ্রহ করেন সাকিব। ওই টাকায় চিকিৎসা চলে মুসলিমের।
দীর্ঘ চারমাস রিহ্যাব সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়ার পর গত সপ্তাহে ভারসাম্যহীন মুসলিম মিয়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। এখন তিনি আগের মতোই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।
এ বিষয়ে তরুণ সমাজকর্মী সাকিব হোসেন হৃদয় বলেন, গুণবতী রেলওয়ে স্টেশনে যখন তাকে পড়ে থাকতে দেখলাম, আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। মাথাভর্তি চুল, ময়লা জামাকাপড় আর মুখভর্তি দাঁড়ির এই মানুষটার খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি তার পরিচয়। পরে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও আমি তাকে সুস্থ করে তুলব। আল্লাহর রহমতে চারমাসের মধ্যে তিনি সুস্থ হয়েছেন। যারা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ওই এলাকার বাসিন্দা তারেকুল ইসলাম বলেন, সাকিব হোসেন হৃদয় যে মহৎ কাজটির উদ্যোগ নিয়েছিল এবং পরবর্তীতে সফল হলো, এটা সত্যিই বিরল ঘটনা। সমাজের সকলকে এমন ভালো কাজে এগিয়ে আসতে হবে, তবেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।
আবু কাউসার নামের একজন বলেন, রাস্তাঘাটে ঘুরতে থাকা একজন ভারসাম্যহীন ভবঘুরে মানুষ সুস্থ হয়েছে একজন তরুণের একক প্রচেষ্টায়, এটা অন্যান্যদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রহমত উল্যাহ বলেন, এ বিষয়টি এখনই জেনেছি আমি। আমি ওই এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানব বিষয়টি।
মুক্তির লড়াই ডেস্ক : 


























