ঢাকা ০৩:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার ১৫২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প Logo চীনের অর্থনীতিতে পরিষেবা খাতের জয়যাত্রা Logo হাইনান বন্দর বিশ্ব বাণিজ্যকে এগিয়ে নেবে Logo সাংবাদিক সুরক্ষা ও কল্যাণ ফাউন্ডেশনের বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠিত Logo পাকুন্দিয়ায় গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে ছুরিকাঘাতে হত্যা, স্বামী পলাতক Logo শোক থেকে শক্তির অভ্যুদ্বয়: সার্বভৌমত্ব ও মুক্তির চূড়ান্ত লড়াই Logo ঘোড়া বর্ষের প্রতিপাদ্যে চীন-আরব সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন Logo একচীন নীতিতে পুনরায় সমর্থন জানাল তিন আরব দেশ Logo ম্যাকাও প্রধান নির্বাহীর কার্যপ্রতিবেদন শুনলেন প্রেসিডেন্ট সি Logo দাম ও মানের সমন্বয়ে মধ্যপ্রাচ্যে এগিয়ে চীনা অটোমোবাইল

এবার বরুড়ার কৃষক পরিবারে নেই নবান্ন উৎসব

মোঃ ইলিয়াছ আহমদ, বরুড়া

এখন শীতকাল। পৌষের এই সময়টাতে কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তোলেন। নতুন ধানের চালের গুঁড়োতে বানানো নানারকম পিঠাপুলিতে কৃষকদের ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। তবে এ বছর চিরাচরিত এ দৃশ্যের ব্যত্যয় ঘটেছে। এ বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আমন ধানের চারা নষ্ট হওয়ায় এবং বন্যা পরবর্তী ভারি বৃষ্টির ফলে আমন আবাদ ব্যাহত হওয়ায় কুমিল্লার বরুড়ার অধিকাংশ কৃষকের ঘরে নেই নবান্নের আমেজ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ বছর বন্যা ও ভারি বৃষ্টির কারণে উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমন আবাদ শুরু করার মুহূর্তে দেখা দিয়েছিল আমন চারার সংকট। এতে আমন আবাদ পিছিয়ে পড়ে। তারপর আবারও কৃষকেরা ভারি বৃষ্টির কবলে পড়ে। এতেও ফসলের ক্ষতি হয় এবং অসময়ে আমন আবাদ করতে হয় কৃষকদের। যার ফলে উপজেলার বিভিন্ন আমন মাঠের অধিকাংশ ক্ষেতে এখনো পাকেনি ধান। কোনো কোনো ক্ষেতে সবেমাত্র ধান বের হচ্ছে। কোথাও কোথাও বন্যা ও বন্যা পরবর্তী ভারি বৃষ্টির কারণে আমন আবাদ করতে না পারায় ফাঁকা পড়ে আছে আমন ক্ষেত। এসব ক্ষেতে এ সময় ফসলের সমারোহ থাকার কথা থাকলেও আগাছায় ভরে আছে এসব অনাবাদি ক্ষেত। এ সময়টায় কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তোলার কথা থাকলেও এখনো শূন্যই রয়ে গেছে অধিকাংশ কৃষকের গোলা। তাই অন্যান্য বছরের ন্যায় কৃষকদের ঘরে নেই নবান্ন উৎসব।

এবারের ২৩৭ হেক্টর বীজতলা ও ১ হাজার ৪৪২ হেক্টর রোপা আমন ব্যাপক বন্যার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে অধিকাংশ ইউনিয়নে আমন ধান না থাকায় নবান্য উৎসবে ভাটা পড়েছে।

বরুড়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের আগস্টে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বরুড়া উপজেলা এ বছর আমনের বীজতলা ও চারা রোপণ করতে পারেনি অনেক কৃষক। আমনের লক্ষ মাত্রা অর্জিত হয় নি। কিছু ইউনিয়নে দেরীতে আমন ধান রোপন করা হয়েছে। এ ধান গুলো দেরীতে আসবে। এতে কোন সমস্যা নেই।

ভবানীপুর ইউনিয়ন পদুয়া গ্রামের কৃষক মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, এবারের বন্যার কারণে ভালো ধান হয় নি। তাই নবান্ন উৎসব নেই।
লক্ষীপুর ইউনিয়ন নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের কৃষক আলী আকবর বলছেন, প্রথমে বন্যা, বন্যাপরবর্তী কয়েক দফা ভারি বৃষ্টির ফলে আমন আবাদ পিছিয়ে পড়েছিল। অসময়ে আমন আবাদ করার ফলে তাঁরা এখনো আমন ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। এ বছর ফলনও ভালো হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেতে এখনো ধানই বের হয়নি। বার বার ফসলের ক্ষতির মুখে পড়ে চিন্তাগ্রস্ত কৃষকেরা। যে কারণে এবার নবান্ন উৎসব নেই অধিকাংশ কৃষকের ঘরে।
ভাউকসার ইউনিয়নের কৃষক মমতাজ উদ্দিন বলেন, এবার বন্যায় আমাদের পাকা আউশ ধান ও জমিতে রোপণ করা আমন ধানের চারা ও আমন বীজতলা নষ্ট হয়েছে। বন্যার পর ধানের চারা সংকট দেখা দিয়েছিল। আমরা আশপাশের উপজেলা থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে আমন আবাদ করেছিলাম। কিন্তু সেগুলোও ভারি বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এবার ফসলের ক্ষতির মুখে পড়ে এ বছর আমাদের মধ্যে নবান্নের আমেজ আসবে কোথায় থেকে।

শাকপুর ইউনিয়ন চৌওরী এলাকার কৃষক মোঃ মোতালেব হোসেন বলেন, বন্যার পর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বছর বন্যা ও ভারি বৃষ্টির কারণে আমন আবাদ পিছিয়ে পড়ায় আমরা এখনো আমন ধান ঘরে তুলতে পারিনি। ফসলের ফলনও তেমন ভালো হয়নি। এখনো অনেক জমির ধান গাছে ধান বের হয়নি, সেসব জমির আদৌও ফলন হবে কি না এ নিয়ে আমরা সন্দিহান। সবমিলিয়ে এ বছর আমাদের মধ্যে নবান্নের আনন্দ নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন,এ বছর বন্যা পরবর্তী সময়ে আমন, বোরো, রবি ফসল ও শাক সবজিসহ প্রায় ১০ হাজারের বেশি কৃষককে প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দেরিতে হলেও কৃষকরা আমন ধান ঘরে তুলতে পারবেন। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে কৃষকরা যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেলক্ষ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিরলসভাবে কাজ করছে।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নু এমং মারমা মং বলেন এবারের বন্যায় বরুড়ার ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা। কখনো এই ভাবে বরুড়ায় এতো বড় বন্যা হয় নি। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষককে যথেষ্ট পরিমান সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে কৃষকরা ঘুরিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নবান্ন উৎসব ঘরে ঘরে করা এবার সম্ভব হবে না।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার ১৫২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প

SBN

SBN

এবার বরুড়ার কৃষক পরিবারে নেই নবান্ন উৎসব

আপডেট সময় ০৯:০৫:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

মোঃ ইলিয়াছ আহমদ, বরুড়া

এখন শীতকাল। পৌষের এই সময়টাতে কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তোলেন। নতুন ধানের চালের গুঁড়োতে বানানো নানারকম পিঠাপুলিতে কৃষকদের ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। তবে এ বছর চিরাচরিত এ দৃশ্যের ব্যত্যয় ঘটেছে। এ বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আমন ধানের চারা নষ্ট হওয়ায় এবং বন্যা পরবর্তী ভারি বৃষ্টির ফলে আমন আবাদ ব্যাহত হওয়ায় কুমিল্লার বরুড়ার অধিকাংশ কৃষকের ঘরে নেই নবান্নের আমেজ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ বছর বন্যা ও ভারি বৃষ্টির কারণে উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমন আবাদ শুরু করার মুহূর্তে দেখা দিয়েছিল আমন চারার সংকট। এতে আমন আবাদ পিছিয়ে পড়ে। তারপর আবারও কৃষকেরা ভারি বৃষ্টির কবলে পড়ে। এতেও ফসলের ক্ষতি হয় এবং অসময়ে আমন আবাদ করতে হয় কৃষকদের। যার ফলে উপজেলার বিভিন্ন আমন মাঠের অধিকাংশ ক্ষেতে এখনো পাকেনি ধান। কোনো কোনো ক্ষেতে সবেমাত্র ধান বের হচ্ছে। কোথাও কোথাও বন্যা ও বন্যা পরবর্তী ভারি বৃষ্টির কারণে আমন আবাদ করতে না পারায় ফাঁকা পড়ে আছে আমন ক্ষেত। এসব ক্ষেতে এ সময় ফসলের সমারোহ থাকার কথা থাকলেও আগাছায় ভরে আছে এসব অনাবাদি ক্ষেত। এ সময়টায় কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তোলার কথা থাকলেও এখনো শূন্যই রয়ে গেছে অধিকাংশ কৃষকের গোলা। তাই অন্যান্য বছরের ন্যায় কৃষকদের ঘরে নেই নবান্ন উৎসব।

এবারের ২৩৭ হেক্টর বীজতলা ও ১ হাজার ৪৪২ হেক্টর রোপা আমন ব্যাপক বন্যার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে অধিকাংশ ইউনিয়নে আমন ধান না থাকায় নবান্য উৎসবে ভাটা পড়েছে।

বরুড়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের আগস্টে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বরুড়া উপজেলা এ বছর আমনের বীজতলা ও চারা রোপণ করতে পারেনি অনেক কৃষক। আমনের লক্ষ মাত্রা অর্জিত হয় নি। কিছু ইউনিয়নে দেরীতে আমন ধান রোপন করা হয়েছে। এ ধান গুলো দেরীতে আসবে। এতে কোন সমস্যা নেই।

ভবানীপুর ইউনিয়ন পদুয়া গ্রামের কৃষক মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, এবারের বন্যার কারণে ভালো ধান হয় নি। তাই নবান্ন উৎসব নেই।
লক্ষীপুর ইউনিয়ন নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের কৃষক আলী আকবর বলছেন, প্রথমে বন্যা, বন্যাপরবর্তী কয়েক দফা ভারি বৃষ্টির ফলে আমন আবাদ পিছিয়ে পড়েছিল। অসময়ে আমন আবাদ করার ফলে তাঁরা এখনো আমন ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। এ বছর ফলনও ভালো হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেতে এখনো ধানই বের হয়নি। বার বার ফসলের ক্ষতির মুখে পড়ে চিন্তাগ্রস্ত কৃষকেরা। যে কারণে এবার নবান্ন উৎসব নেই অধিকাংশ কৃষকের ঘরে।
ভাউকসার ইউনিয়নের কৃষক মমতাজ উদ্দিন বলেন, এবার বন্যায় আমাদের পাকা আউশ ধান ও জমিতে রোপণ করা আমন ধানের চারা ও আমন বীজতলা নষ্ট হয়েছে। বন্যার পর ধানের চারা সংকট দেখা দিয়েছিল। আমরা আশপাশের উপজেলা থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে আমন আবাদ করেছিলাম। কিন্তু সেগুলোও ভারি বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এবার ফসলের ক্ষতির মুখে পড়ে এ বছর আমাদের মধ্যে নবান্নের আমেজ আসবে কোথায় থেকে।

শাকপুর ইউনিয়ন চৌওরী এলাকার কৃষক মোঃ মোতালেব হোসেন বলেন, বন্যার পর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বছর বন্যা ও ভারি বৃষ্টির কারণে আমন আবাদ পিছিয়ে পড়ায় আমরা এখনো আমন ধান ঘরে তুলতে পারিনি। ফসলের ফলনও তেমন ভালো হয়নি। এখনো অনেক জমির ধান গাছে ধান বের হয়নি, সেসব জমির আদৌও ফলন হবে কি না এ নিয়ে আমরা সন্দিহান। সবমিলিয়ে এ বছর আমাদের মধ্যে নবান্নের আনন্দ নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন,এ বছর বন্যা পরবর্তী সময়ে আমন, বোরো, রবি ফসল ও শাক সবজিসহ প্রায় ১০ হাজারের বেশি কৃষককে প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দেরিতে হলেও কৃষকরা আমন ধান ঘরে তুলতে পারবেন। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে কৃষকরা যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেলক্ষ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিরলসভাবে কাজ করছে।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নু এমং মারমা মং বলেন এবারের বন্যায় বরুড়ার ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা। কখনো এই ভাবে বরুড়ায় এতো বড় বন্যা হয় নি। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষককে যথেষ্ট পরিমান সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে কৃষকরা ঘুরিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নবান্ন উৎসব ঘরে ঘরে করা এবার সম্ভব হবে না।