
মোহাম্মদ আজগার আলী, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ঢাকা মোড় হতে মাত্র ৬ কিঃ মিঃ পূর্বে স্বপ্নপুরী রোডে কালিরহাট বাজারের একটু দক্ষিণে অবস্থিত কমলার বাগানটি। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জহিরুল ইসলাম চাকুরী থেকে অবসরগ্রহণের পরে অনেকটা শখের বসে এবং বাংলাদেশের মাটি যে সোনার চেয়েও খাটি, এখানে সব কিছুই ফলানো সম্ভব এই বিষয়টাকে সামনে নিয়ে শুরু করেছেন প্রজেক্টটি।
প্রথমবারের মতো এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে কমলার চাষ হচ্ছে। কমলা চাষের পূর্বে তিনি হাড়িভাঙ্গা আম ও থাই পেয়ারার চাষ করেছিলেন। পরে আম ও পেয়ারা গাছ কেটে শুরু করেন বিভিন্ন জাতের ফল ফলাদির চাষ। তিনি কমলা, বারো মাসি আম, মালটা ও ড্রাগন চাষ করে পেয়েছেন সফলতা। কমলার বাগানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভীড়। বাগানের প্রবেশ পথেই চোখে পড়বে বিশাল এলাকা জুড়ে ড্রাগন গাছ। তারপরেই চায়না কমলা এবং কাশমেরী কমলার বাগান। সারিবদ্ধ গাছ আর হলুদ কমলার ঝোপা ঝুলছে গাছে গাছে। থোকায় থোকায় পরিপক্ক কমলা, সারি সারি গাছ দেখে উচ্ছিসিত দর্শনার্থীরা। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে বাগানের কমলা।
জহিরুল ইসলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরী করার সময় জাতিসংঘের শান্তি মিশন কুয়েত থেকে ফিরে ২০০৭ সালে এই প্রজেক্টের কাজ শুরু করেন। প্রায় ২০ একর জমিতে এই প্রজেক্ট করা হয়েছে। প্রথমত তিনি হাড়িভাঙ্গা আম এবং থাই পেয়ারা চাষ করেন। আম ও পেয়ারার বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় তিনি গাছগুলো কেটে ফেলে কমলা, মালটা ও ড্রাগনের চাষ শুরু করেন। বাগানে বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩ হাজার ৫ শত গাছ আছে। তারমধ্যে ৫ শত চায়না কমলা ও ৫০০ শত কাশমেরী কমলার গাছ আছে। তিন বছর থেকে চায়না এবং দুই বছর থেকে কাশমেরী কমলা ফলন দিচ্ছে। বাগানে চায়না, কাশমেরী ও দার্জিলিং এর কমলা, মিশরী মালটা এবং রেড বেংগলের গাছ লাগানো আছে। বর্তমানে রাম ভূটান ও ওয়াশিংটন ডিসির নেভাল মালটার জন্য জমি প্রস্তুুত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে মালবেরী, রেডবেরী, ব্লাকবেরীর চারাও নাকি আমদানি করা হবে।
চাষী জহিরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের সাবেক রাস্ট্রপতি মাননীয় আব্দুল হামিদ বঙ্গভবনে আমার নিজ হাতে রেড ব্যাংগলের চারা লাগিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আমার নিজ হাতে দুটি গাছ লাগিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় আমার এই প্রজেক্ট দেখার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কিংবা কৃষি অফিসের কোন ব্যক্তি আসেনি। প্রজেক্ট করতে গিয়ে আমার থাকার বাড়ীটি পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। শুরুর দিকে কোন ব্যাংক এমনকি কোনো এনজিও আমাকে সহযোগিতা করেনি। বর্তমানে কোটি টাকার অফার এসেছে ঋণ প্রদানের। কিন্তুু উচ্চ হারে সুদের ফাঁদে পড়তে চাইনা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কৃষি ঋণ আছে ৪% হারে তা যদি সরকার আমাকে দিয়ে সহযোগিতা করে তাহলে আমি এই প্রজেক্টটি আরো সম্প্রসারণ করতে পারবো। আমার প্রজেক্টে বর্তমানে ২০ জন লোক কাজ করছে। কোন কোন সময় ৭০/৮০ জন লোক কাজ করে। খরচ বাদে এ পর্যন্ত কমলা বিক্রি করে প্রায় দশ লক্ষ টাকার মতো লাভ হতে পারে। আমি চাই এখানে যেন হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারি এবং কৃষি সেক্টরে একটি উন্নত মানের গবেষনা কেন্দ্র করার ইচ্ছা আছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যেনো গবেষনা করতে পারে।
কমলার বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী কবির সরকার ও জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কমলার বাগান দেখতে এসে আমরা অবাক হয়েছি। এত বড় কমলার বাগান এবং থোকায় থোকায় কমলা ঝুলতেছে দেখে খুবি উৎফুল্ল আমরা। আমাদের এলাকায় কমলার বাগান নেই। তাই খুবি ভালো লাগছে। আরেক দর্শনার্থী মোরসালিন বলেন, আগে ছবিতে দেখেছি কমলার বাগান, আজ বাস্তবে গাছে গাছে ঝুলন্ত কমলা দেখলাম। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।
এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, আমাদের উপজেলায় কমলা, মালটার চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানে ২৩ হেক্টর জমিতে লেবু জাতীয় ফল চাষ হচ্ছে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রত্যেক চাষীকে বিভিন্ন বিষয়ে সাধ্যমত সহযোগিতা করছি।