ঢাকা ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo নলছিটিতে ৪০টি টিউবওয়েল বিতরণ Logo অবৈধ ড্রেজারে ধ্বংসের মুখে বারেশ্বর বিলের তিন ফসলি জমি Logo কালীগঞ্জে ভাটা উচ্ছেদে এসে শ্রমিকদের বাধায় ফিরে গেলেন পরিবেশ অধিপ্তর Logo সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে ৫১ শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তির্ন Logo ১৬ই ডিসেম্বর: মুক্তির লড়াই, গণঅভ্যুত্থান ও নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা Logo চীনের অর্থনীতি: চাপ সামলেও শক্তিশালী অগ্রগতি Logo বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে চীন Logo ইউনিট ৭৩১: সংগঠিত রাষ্ট্রীয় অপরাধের অকাট্য প্রমাণ Logo আবুধাবিতে ওয়াং ই–শেখ আবদুল্লাহ বৈঠক Logo ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: বিজয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে—রণাঙ্গনে চূড়ান্ত আঘাতের দিন

কাপড় সেলাই ও নকশী কাঁথা বুনে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন পূরণ খুশি আক্তারের

মিরাজ পালোয়ান
শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

সাত বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে খুশি আক্তারের। এরপর থেকে মেয়ে মরিয়ম আক্তারকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন তিনি। বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে সব সময় সুযোগ খুঁজতেন তিনি। কিন্তু সুযোগ হয়নি তার। খুশি আক্তার ২০২১ সালে আবার বিয়ে করেছেন কৃষক এনামুল হককে। মেয়েকে নিয়ে এনামুল হকের সাথে বসবাস করলেও সেই স্বপ্নের পিছু ছাড়েননি তিনি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে নিয়েছেন সেলাই ও ফ্যাশন ডিজাইন (অতিরিক্ত নকশী কাঁথা) প্রশিক্ষণ। এখন তিনি নিজ বাড়িতে বসে সেলাই ও নকশী কাঁথা বুনে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর শরীয়তপুর জেলা কমান্ড্যান্ট কার্যালয়ে খুশি আক্তারের মত ৩০ জন নারীকে সামলম্বী করার লক্ষ্যে ৭৫ দিন ব্যাপী সেলাই ও ফ্যাশন ডিজাইন (অতিরিক্ত নকশী কাঁথা) প্রশিক্ষণ ও ৭০ জন পুরুষকে অস্ত্রসহ ২১ দিনের ভিডিপি প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। এরমধ্যে নারীদেরকে সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়েছে।

খুশি আক্তার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার পশ্চিম লোনসিং গ্রামের আবুল হাসেম ফকিরের মেয়ে।

খুশি আক্তার ও প্রশিক্ষণ সেন্টার সূত্রে জানা যায়, অল্প বয়সে বিয়ে হয় খুশি আক্তারের। স্বামীর সংসারে সুখ হয়নি তার। বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে বাবার বাড়িতে থাকতেন তিনি। এসময় নিজে সামলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি গ্রামের মেয়ে বলে পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল না তার। পারু বেগম নামে একজনের কাছ থেকে জানতে পারেন আনসার বাহিনী বিনামূল্যে সেলাই ও ফ্যাশন ডিজাইন (অতিরিক্ত নকশী কাঁথা) প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এই খবর পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সাফল্যের সনদ পেয়েছেন তিনি। প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত জ্ঞানের মাধ্যমে তিনি বাড়িতে গিয়ে সেলাইর কাজ করবেন। খুশি আক্তার প্রধান লক্ষ্য কাপড় সেলাই ও নকশী কাঁথা বানানো। এসব তৈরী করে তিনি তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়ানো ও স্বামীকেও আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করতে পারবেন।

খুশি আক্তার বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদের পর দেশের অন্য নারীদের কপালে যা জুটেছে আমার কপালেও তাই হয়েছে। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে যে প্রশিক্ষণ পেয়েছি, তা দিয়ে নিজে সাবলম্বী হতে পারব। এরমধ্যে অন্যতম সেলোয়ার-কামিজ, হিজাব, নকশী কাঁথা অন্যতম। আমাকে কেউ পরিবারের বোঝা বলতে পারবে না। নিজে অর্থ উপার্জন করলে সবারই ভালো লাগে। প্রশিক্ষণ শেষে আমাকে সনদসহ একটি সেলাই মেশিন দিয়েছে। চাইলে ঋণ সহায়তা করবে আনসার বাহিনী। আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এখন আমার কাছাকাছি। স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার পালা এখন। বাড়িতে গিয়ে রুমের মধ্যেই সেলাই মেশিন বসিয়ে কাপড় সেলাই শুরু করব। ধীরে ধীরে পাইকারিতে কাপড় এনে তাও সেলাই করব। আমার এখন আর কোনো কষ্ট থাকবে না। মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়াতে পারব, পরিবারকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করতে পারব। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই আমার কাছে।

রাজিয়া সুুলতানা নামে আরেক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, যে কোনো বাহিনীই সুন্দর। বাহিনীর কাজও সুন্দর। আনসার বাহিনী থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছি সুন্দর ভাবে। এত সুন্দর করে অন্য কেউ শিখায় না। প্রশিক্ষণ নিয়েছি, এখন আমি নিজের বাড়িতেই দোকান করব। গ্রামের মেয়েরা কাপড় সেলাই করার জন্য এখন আর শহরে বা বাজারে যেতে চায় না। বাড়ির পাশ থেকেই সেলাই করতে পছন্দ করে। একারণে বিক্রি বেশি হবে। সেলাই , নকশী কাঁথা তৈরী করে এখন আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব।

সেলাই ও ফ্যাশন ডিজাইন (অতিরিক্ত নকশী কাঁথা) প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রসহ ভিডিপি প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর শরীয়তপুর জেলা কমান্ড্যান্ট মো. মইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা রেঞ্জ কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শরীয়তপুর জেলার সহকারী কমান্ড্যান্ট মো. ফারুক ইসলাম, সার্কেল এ্যাডজুট্যান্ট আব্দুল মান্নান মিয়া, ভেদরগঞ্জ উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারসহ অন্যান্যরা।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নলছিটিতে ৪০টি টিউবওয়েল বিতরণ

SBN

SBN

কাপড় সেলাই ও নকশী কাঁথা বুনে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন পূরণ খুশি আক্তারের

আপডেট সময় ০৮:৪৩:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩

মিরাজ পালোয়ান
শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

সাত বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে খুশি আক্তারের। এরপর থেকে মেয়ে মরিয়ম আক্তারকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন তিনি। বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে সব সময় সুযোগ খুঁজতেন তিনি। কিন্তু সুযোগ হয়নি তার। খুশি আক্তার ২০২১ সালে আবার বিয়ে করেছেন কৃষক এনামুল হককে। মেয়েকে নিয়ে এনামুল হকের সাথে বসবাস করলেও সেই স্বপ্নের পিছু ছাড়েননি তিনি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে নিয়েছেন সেলাই ও ফ্যাশন ডিজাইন (অতিরিক্ত নকশী কাঁথা) প্রশিক্ষণ। এখন তিনি নিজ বাড়িতে বসে সেলাই ও নকশী কাঁথা বুনে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর শরীয়তপুর জেলা কমান্ড্যান্ট কার্যালয়ে খুশি আক্তারের মত ৩০ জন নারীকে সামলম্বী করার লক্ষ্যে ৭৫ দিন ব্যাপী সেলাই ও ফ্যাশন ডিজাইন (অতিরিক্ত নকশী কাঁথা) প্রশিক্ষণ ও ৭০ জন পুরুষকে অস্ত্রসহ ২১ দিনের ভিডিপি প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। এরমধ্যে নারীদেরকে সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়েছে।

খুশি আক্তার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার পশ্চিম লোনসিং গ্রামের আবুল হাসেম ফকিরের মেয়ে।

খুশি আক্তার ও প্রশিক্ষণ সেন্টার সূত্রে জানা যায়, অল্প বয়সে বিয়ে হয় খুশি আক্তারের। স্বামীর সংসারে সুখ হয়নি তার। বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে বাবার বাড়িতে থাকতেন তিনি। এসময় নিজে সামলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি গ্রামের মেয়ে বলে পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল না তার। পারু বেগম নামে একজনের কাছ থেকে জানতে পারেন আনসার বাহিনী বিনামূল্যে সেলাই ও ফ্যাশন ডিজাইন (অতিরিক্ত নকশী কাঁথা) প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এই খবর পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সাফল্যের সনদ পেয়েছেন তিনি। প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত জ্ঞানের মাধ্যমে তিনি বাড়িতে গিয়ে সেলাইর কাজ করবেন। খুশি আক্তার প্রধান লক্ষ্য কাপড় সেলাই ও নকশী কাঁথা বানানো। এসব তৈরী করে তিনি তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়ানো ও স্বামীকেও আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করতে পারবেন।

খুশি আক্তার বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদের পর দেশের অন্য নারীদের কপালে যা জুটেছে আমার কপালেও তাই হয়েছে। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে যে প্রশিক্ষণ পেয়েছি, তা দিয়ে নিজে সাবলম্বী হতে পারব। এরমধ্যে অন্যতম সেলোয়ার-কামিজ, হিজাব, নকশী কাঁথা অন্যতম। আমাকে কেউ পরিবারের বোঝা বলতে পারবে না। নিজে অর্থ উপার্জন করলে সবারই ভালো লাগে। প্রশিক্ষণ শেষে আমাকে সনদসহ একটি সেলাই মেশিন দিয়েছে। চাইলে ঋণ সহায়তা করবে আনসার বাহিনী। আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এখন আমার কাছাকাছি। স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার পালা এখন। বাড়িতে গিয়ে রুমের মধ্যেই সেলাই মেশিন বসিয়ে কাপড় সেলাই শুরু করব। ধীরে ধীরে পাইকারিতে কাপড় এনে তাও সেলাই করব। আমার এখন আর কোনো কষ্ট থাকবে না। মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়াতে পারব, পরিবারকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করতে পারব। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই আমার কাছে।

রাজিয়া সুুলতানা নামে আরেক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, যে কোনো বাহিনীই সুন্দর। বাহিনীর কাজও সুন্দর। আনসার বাহিনী থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছি সুন্দর ভাবে। এত সুন্দর করে অন্য কেউ শিখায় না। প্রশিক্ষণ নিয়েছি, এখন আমি নিজের বাড়িতেই দোকান করব। গ্রামের মেয়েরা কাপড় সেলাই করার জন্য এখন আর শহরে বা বাজারে যেতে চায় না। বাড়ির পাশ থেকেই সেলাই করতে পছন্দ করে। একারণে বিক্রি বেশি হবে। সেলাই , নকশী কাঁথা তৈরী করে এখন আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব।

সেলাই ও ফ্যাশন ডিজাইন (অতিরিক্ত নকশী কাঁথা) প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রসহ ভিডিপি প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর শরীয়তপুর জেলা কমান্ড্যান্ট মো. মইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা রেঞ্জ কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শরীয়তপুর জেলার সহকারী কমান্ড্যান্ট মো. ফারুক ইসলাম, সার্কেল এ্যাডজুট্যান্ট আব্দুল মান্নান মিয়া, ভেদরগঞ্জ উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারসহ অন্যান্যরা।