ঢাকা ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লা বিভাগ—একটি যৌক্তিক ও সময়োপযোগী দাবি

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও নাগরিক সেবার প্রসারের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন বিভাগ গঠন হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা বিভাগ গঠনের দাবি উঠলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ এই দাবি কোনো আবেগের নয়—এটি একটি সময়োপযোগী ও যৌক্তিক দাবি, যা দেশের উন্নয়ন কাঠামোকে আরও গতিশীল করতে পারে।

কুমিল্লা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে ভরপুর একটি জনপদ। শালবন বিহার, ময়নামতি, লালমাই পাহাড়—এসব নিদর্শন শুধু পর্যটনের নয়, বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার গৌরবের প্রতীক। কুমিল্লা সেই অঞ্চল, যেখান থেকে শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ—সব ক্ষেত্রেই দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে অসংখ্য গুণী মানুষ। এত সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল আজও কেন আলাদা বিভাগ পাচ্ছে না, তা অনেকের কাছেই বিস্ময়ের বিষয়।

চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনে থাকা কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার মানুষকে প্রশাসনিক সেবা নিতে প্রায়ই চট্টগ্রাম পর্যন্ত যেতে হয়। এতে সময়, অর্থ ও শ্রম—সবকিছুই নষ্ট হয়। অথচ কুমিল্লা এখন প্রশাসনিকভাবে, অবকাঠামোগতভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে নিজেই একটি বিভাগ হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। কুমিল্লা শহরে রয়েছে বিভাগীয় পর্যায়ের সব ধরনের প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উপযুক্ত স্থান, রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা—ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রেললাইন, এবং নির্মীয়মাণ বিমানবন্দরসহ।

অর্থনীতির দিক থেকে কুমিল্লা দেশের অন্যতম শক্তিশালী অঞ্চল। এখানে রয়েছে রপ্তানিমুখী শিল্পাঞ্চল (ইপিজেড), সক্রিয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষিজ উৎপাদন, এবং বিপুল প্রবাসী আয়। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক গতি দেশের রাজস্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আলাদা বিভাগ হলে এসব খাত আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসবে, এবং স্থানীয় জনগণ সরাসরি সুফল পাবে।

সবচেয়ে বড় কথা, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ কেবল সরকারের কাজের গতি বাড়ায় না—এটি জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কুমিল্লা বিভাগ গঠন মানে শুধু একটি প্রশাসনিক ইউনিট বাড়ানো নয়, বরং এটি হবে উন্নয়ন, ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও নাগরিক স্বপ্ন বাস্তবায়নের নতুন সূচনা।

তাই আজ সময় এসেছে এই যৌক্তিক দাবিটিকে আর অবহেলা না করার। বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষ বছরের পর বছর ধরে এই প্রত্যাশা বুকে নিয়ে আছে। সরকারের সদিচ্ছা ও দূরদর্শী পদক্ষেপই পারে সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে।

লেখক: মোহাম্মদ আলী সুমন, সাংবাদিক।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কুমিল্লা বিভাগ—একটি যৌক্তিক ও সময়োপযোগী দাবি

আপডেট সময় ১০:২৭:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও নাগরিক সেবার প্রসারের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন বিভাগ গঠন হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা বিভাগ গঠনের দাবি উঠলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ এই দাবি কোনো আবেগের নয়—এটি একটি সময়োপযোগী ও যৌক্তিক দাবি, যা দেশের উন্নয়ন কাঠামোকে আরও গতিশীল করতে পারে।

কুমিল্লা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে ভরপুর একটি জনপদ। শালবন বিহার, ময়নামতি, লালমাই পাহাড়—এসব নিদর্শন শুধু পর্যটনের নয়, বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার গৌরবের প্রতীক। কুমিল্লা সেই অঞ্চল, যেখান থেকে শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ—সব ক্ষেত্রেই দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে অসংখ্য গুণী মানুষ। এত সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল আজও কেন আলাদা বিভাগ পাচ্ছে না, তা অনেকের কাছেই বিস্ময়ের বিষয়।

চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনে থাকা কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার মানুষকে প্রশাসনিক সেবা নিতে প্রায়ই চট্টগ্রাম পর্যন্ত যেতে হয়। এতে সময়, অর্থ ও শ্রম—সবকিছুই নষ্ট হয়। অথচ কুমিল্লা এখন প্রশাসনিকভাবে, অবকাঠামোগতভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে নিজেই একটি বিভাগ হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। কুমিল্লা শহরে রয়েছে বিভাগীয় পর্যায়ের সব ধরনের প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উপযুক্ত স্থান, রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা—ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রেললাইন, এবং নির্মীয়মাণ বিমানবন্দরসহ।

অর্থনীতির দিক থেকে কুমিল্লা দেশের অন্যতম শক্তিশালী অঞ্চল। এখানে রয়েছে রপ্তানিমুখী শিল্পাঞ্চল (ইপিজেড), সক্রিয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষিজ উৎপাদন, এবং বিপুল প্রবাসী আয়। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক গতি দেশের রাজস্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আলাদা বিভাগ হলে এসব খাত আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসবে, এবং স্থানীয় জনগণ সরাসরি সুফল পাবে।

সবচেয়ে বড় কথা, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ কেবল সরকারের কাজের গতি বাড়ায় না—এটি জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কুমিল্লা বিভাগ গঠন মানে শুধু একটি প্রশাসনিক ইউনিট বাড়ানো নয়, বরং এটি হবে উন্নয়ন, ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও নাগরিক স্বপ্ন বাস্তবায়নের নতুন সূচনা।

তাই আজ সময় এসেছে এই যৌক্তিক দাবিটিকে আর অবহেলা না করার। বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষ বছরের পর বছর ধরে এই প্রত্যাশা বুকে নিয়ে আছে। সরকারের সদিচ্ছা ও দূরদর্শী পদক্ষেপই পারে সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে।

লেখক: মোহাম্মদ আলী সুমন, সাংবাদিক।