
খুলনা প্রতিনিধি
র্যাব -৬ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১ টা ৩০ মিনিটের সময় র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানাধীন সাচিবুনিয়া রেল ক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় জঙ্গি সংগঠনের সদস্য একত্রে মিলিত হয়ে গোপন বৈঠক করছে। এরই প্রেক্ষিতে খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানাধীন সাচিবুনিয়া রেল ক্রসিং সংলগ্ন একটি টিনসেড ঘরে অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন “আনসার আল ইসলাম” এর ০৩ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করে। আসামীদের ঠিকানা ঃ ইলিয়াস দাস আব্দুল্লাহ ওরফে হুজাইফা উসামা পিতা-জিতেন দাস, গ্রাম-উওর ঠাকুরগাও, থানা-সদর, জেলা-ঠাকুরগাও, ২। মোঃ সাব্বিরুল ইসলামওরফে সাব্বির আবু সাব্বির আল বাঙালি পিতা-মোঃ রবিউল ইসলাম, গ্রাম-খয়েরসুতি, থানা ও জেলা-পাবনা, ৩। শামিম লস্কর পিতা- ইলিয়াস লস্কর, গ্রাম-কুলপাড়া, থানা- কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
তাদের হেফাজত হতে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই,লিফলেট ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।এ সময় অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জন সদস্য পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন “আনসার আল ইসলাম” এর সদস্য। তারা আফগানিস্থানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন “আনসার আল ইসলাম” এর র্কাযক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা নিজেরাই সংগঠনের সদস্য সংগ্রহে দাওয়াতি র্কাযক্রম পরিচালনা করছিল। এ উদ্দেশ্য সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদি পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো। অন্যদিকে তারা সংগঠনের র্কাযক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য প্রদান করে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতো। এর পাশাপাশি তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করে বিভিন্ন তথ্যের অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সর্ম্পকে বিরুপ মনোভাব তৈরি করে তথাকথিত ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো।
গ্রেফতারকৃত ইলিয়াস দাস আব্দুল্লাহ ওরফে হুজাইফা উসামার বাড়ি ঠাকুরগাঁও হলেও সে মিরপুরে অবস্থান করে একটি পণ্যের মার্কেটিং এ চাকরি করতো। সে একজন নব্য মুসলিম ছিল। ২০১৮ সালে সে খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। প্রথমে ইন্টারনেটে বিভিন্ন দেশের নির্যাতিত মুসলমানদের উপর নির্যাতনের ভিডিও দেখে সে জিহাদে উদ্ভূদ্ধ হয় এবং পরবর্তীতে পাশ্ববর্তী দেশের সমমনা একজনের সাথে তার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পাশ্ববর্তী দেশের উক্ত ব্যক্তি তাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আনসার আল ইসলামের হয়ে সদস্য সংগ্রহ করে প্রশিক্ষনের উদ্দেশ্য পাশ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতে বলে। আব্দুল্লাহ তার নিজ এলাকা ঠাকুরগাও এ উক্ত দাওয়াতি কাজ শুরু করে এবং বর্তমানে গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত ঠাকুরগাও এর দাওয়াতি শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। “কিতাল ফি ছাবিলিল্লাহ” নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপের এ্যাডমিন এই আব্দুল্লাহ। এই গ্রুপে বিভিন্ন উগ্রবাদী ছবি, ভিডিও ও কন্টেন্ট শেয়ার করে সদস্যদের উগ্রবাদে উদ্ভূদ্ধ করা হত। ঠাকুরগাঁও ছাড়াও সংগঠনের অন্যান্য জেলার সদস্যদের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং মাঝে মধ্যেই সে অন্য জেলার সদস্যদের সাথে গোপন বৈঠক করতো। সে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে গাজোয়া-তুল হিন্দ প্রতিষ্ঠার নামে হিংসা বিদ্বেষ ছাড়াতো। পাশ্ববর্তী দেশের উগ্র জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করে বক্তব্য প্রদানকারী কয়েকজনের সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ সাবিরুল ইসলাম সাব্বির ওরফে আবু সাব্বির আল বাঙ্গালি একজন ছাত্র। তার বড়ি পাবনা জেলায়। সে পূর্বে গ্রেফতারকৃত আনসার আল ইসলামের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মোঃ ইয়াকুব হুজুর এর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। সে ইয়াকুব হুজুরের সাথে একাধিকবার দেশের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াত ও বয়ান দেয়ার জন্য গমন করেছে। তার সাথে আনসার আল ইসলামের অন্য একটি দেশে অবস্থানরত মনিরুল ইসলামের যোগাযোগ রয়েছে। তাদের ভাষ্য মতে গণতন্ত্র হচ্ছে কুফরি মতবাদ এবং এই গণতন্ত্রের নামে ভোটাভুটিও তাগুদের কাজ। তাই এই কুফরি কাজ নস্যাৎ করার জন্য তারা বদ্ধপরিকর ছিল।
গ্রেফতারকৃত শামিম লস্করও একজন ছাত্র। সে ধৃত ইলিয়াস দাস আব্দুল্লাহ হুজাইফা উসামা এর মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতী র্কাযক্রম করতে থাকে। সে তার নিজ এলাকা -গোপালগঞ্জে দাওয়াতী র্কাযক্রম পরিচালনা করত। এছাড়াও সে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সংগঠনের প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে সাধারণ মানুষদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে আসছিল। এছাড়াও সে তার নিজ এলাকা গোপালগঞ্জে দাওয়াতী র্কাযক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা প্রদান এবং সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের নিকট হতে চাঁদা সংগ্রহ করতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতদের সাথে প্রাথমিকভাবে কথা বলে জানা যায় যে তাদের সকলের নামেই র্পূবে জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। একারনে তারা বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে ছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।