
মোনায়েম মন্ডল
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড সর্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭৩ শতক জমির মধ্যে ৫৪ শতক জমিই আওয়ামীলীগের তিন নেতার দখলে রাখার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে! দখলে না থাকায় এখনো উক্ত জমি নামজারি করতে পারেনি বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন। দীর্ঘ ৪০ বছরেও উল্লেখিত ৫৪ শতাংশ জমি রহস্যজনক কারণে দখল মুক্ত করেনি নাকি দখল মুক্ত করতে পারেনি- এ বিষয়ে এলাকার সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে! তারা দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে দীর্ঘদিনেও এই জমি দখল মুক্ত হয়নি। তাই তারা জরুরি ভিত্তিতে উক্ত জমি উদ্ধার করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রকাশ, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় সর্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়টি শুরুতেই রেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের নামে উল্লেখিত ৭৩ শতাংশ জমি দানপত্র করে দেন।
সেই মোতাবেক শুরুতেই ১৯৭৩ সালে জনৈক আলহাজ্ব আব্দুল কাদের ও ছুরতন নেছা নামের দুই ব্যক্তি উক্ত জমি দানপত্রের দলিল করে দেন। ওই সময় বিশেষ কারণ বশতঃ বিদ্যালয়টি তালিকা ভুক্ত করতে পারেনি। পরবর্তিতে বিদ্যালয়টি স্থাপনের তারিখ ১৯৮৫ সাল দেখানো হয় এবং ১৯৯০ ইং সালের ৮ নভেম্বর তারিখে পুনরায় মোট ৫ জন দাতা উল্লেখিত ৭৩ শতাংশ জমি দলিল নং ১০৯৯৩ মুলে দানপত্র করে দেন। জমি দাতারা হলেন- মৃত. বিরাজ উদ্দিনের পুত্র হোসেন আলী, মৃত. ছেবারত উল্লাহর পুত্র মাসুদুর রহমান সরদার, মৃত. তমিজ উদ্দিনের পুত্র হাবিবুর রহমান মন্ডল ও মোজাম্মেল হক মন্ডল, মৃত. শান উল্লাহর পুত্র সুলতান আজমী।
নির্ভরশীল সুত্র জানায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ ইং সালে সারাদেশে একযোগে স্থাপনকৃত সকল রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোকে সরকারি করণ করা হয়। একই সাথে শিক্ষক শিক্ষিকারাও সরকারি তালিকা ভুক্ত হন। ফলে সকল রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষিকাদের ভাগ্যও খুলে যায়।
এমতাবস্থায় বিভিন্ন সময়ে প্রতিটা বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু উল্লেখিত রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজস্ব অর্থায়নে যতটুকু জমির ওপর যতটুকু বিদ্যালয়ের ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল, ঠিক ওইটুকু জমিই বর্তমানে বিদ্যালয়ের দখলে পাওয়া যায়। আর বাকি জমি গুলো জমিদাতা বা তার জ্ঞাতি গোষ্ঠীরা অদ্যাবধি নিজ নিজ দখলে রেখেছে। বল্লমঝাড় সর্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির জমিদাতারাও এই অনিয়মের ব্যতিক্রম করেনি। তারা মাত্র ১৯ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়ের ঘর নির্মাণ করেন। এরপর দীর্ঘ ৪০ বছর পরেও ওই ১৯ শতাংশ জমির মধ্যেই বিদ্যালয়টির অবস্থান রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি স্ব স্ব বিদ্যালয়ের নামে নামজারি বাধ্যতামূলক করা হলেও ভুমি নীতিমালা অনুযায়ী দখলে না থাকলে ওই জমির নামজারি সম্পন্ন হবেনা। বিধায় বিদ্যালয়টি স্থাপনের পর ১৯৯০ ইং সালে জমির দানপত্রের হিসাব মতে ৩৫ বছরেও বিদ্যালয়ের নিজ নামে নামজারি করতে পারেনি।
গত ৩০ এপ্রিল’২০২৫ ইং সরেজমিনে উক্ত বল্লমঝাড় সর্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে কথা হয়। তিনি উক্ত বিদ্যালয়ের জমির দলিলের ফটোকপি দেখিয়ে বলেন, আমাকে এই কাগজপত্র ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাহেব দিয়েছে।
এতদিনেও নামজারি করতে না পারার বিষয়ে বলেন, জমি দখলে না থাকলে নামজারি করি কেমনে!
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রিফাতের বাবা কাশম আলী ৮ শতাংশে বাড়ি, মুনছুর আলী ৮ শতাংশে বাড়ি ও জেলানী একাই ৩৮ শতাংশ জমিতে পুকুর খনন করে বেদখলে রেখেছে। জমির অবৈধ এই দখলকারী ভুমি দস্যুরা সকলেই সাবেক গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক মন্ডলের ভাই- ভাতিজা এবং এই সুবাদে তাদের বাড়ির প্রতিটা সদস্যই সাবেক আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। এ ব্যাপারে নির্ভরশীল একটি সুত্র জানায়, আওয়ামী লীগের পরিচয়ে এতদিন প্রতিটা সেক্টরেই এদের দাপট এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, এদের ভয়ে এলাকায় এতদিন কেউ মুখ খোলেনি। ফলে জমি গুলোও অবৈধ দখল মুক্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে বল্লমঝাড় ক্লাস্টারের দায়িত্ব প্রাপ্ত এটিও শহিদুল্লাহ এর সাথে অদ্য বিকাল পৌনে ৫টায় মোবাইলে কথা হয়। তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন বদলি হয়ে এসেছি। আমি এখনো কোন বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে অনেকটা জানিনা, তবে যত দ্রুত সম্ভব বল্লমঝাড় সর্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবৈধভাবে বেদখলে থাকা জমি গুলো উদ্ধার করার উদ্যোগ নেবো।