
এম এ মাইকেলঃ
গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় গোটা শহরজুড়ে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে এনসিপির একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশ শেষে মাদারীপুরের পথে যাত্রাকালে নেতাদের গাড়িবহরের ওপর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জ শহর ত্যাগ করার মুহূর্তে এনসিপি নেতাদের বহরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। একাধিক গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। হামলার পরপরই এনসিপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এর রেশ গিয়ে পড়ে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার পর্যন্ত। সন্ধ্যার দিকে সংঘবদ্ধ একটি দল কারাগারের মূল ফটকে হামলা চালায়। তাদের বাধা দিতে গিয়ে কয়েকজন কারা রক্ষী আহত হন। এ সময় হামলাকারীরা কারাগারের সামনে থাকা মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ভাঙচুর চালায় কারাগারের গেটসহ আশপাশের স্থাপনায়।
পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উচ্চ সতর্কতায় চলে যায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। শহরের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয়।
একপর্যায়ে পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট ও সেনাসদস্যদেরকে এনসিপি নেতাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে দেখা যায়। হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে শুরু হয়েছে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং গোয়েন্দা নজরদারি।
ঘটনার পর গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন শহরজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে সকল ধরনের রাজনৈতিক জমায়েত, মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি জানান, “পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সে লক্ষ্যে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।”
এদিকে গোটা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগেভাগেই বন্ধ হয়ে যায়। শহরের প্রধান সড়কগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।
এনসিপি নেতারা একে পরিকল্পিত হামলা বলে দাবি করে দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, “সরকারপন্থী সংগঠনগুলো আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার জন্যই এই বর্বর হামলা চালিয়েছে।”
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। শহরজুড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।