বাগেরহাটে গ্রাহকের দেড় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের যাত্রাপুর বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান হাদী। খবর পেয়ে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে গ্রাহকরা সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজারস্থ এই ব্যাংকের কার্যালয়ে ভিড় করেন।
অনলাইনে নিজের হিসাবে টাকা দেখতে না পেয়ে, কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। এসময় এজেন্ট ব্যাংকিং ইনচার্জ ও অন্যান্য কর্মচারীদের কাছে নিজেদের জমা রাখা টাকা দাবি করেন গ্রাহকরা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে প্রতারক উদ্যোক্তার নামে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে, আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
গ্রাহকদের দাবি, ইসলামী ব্যাংকের সুনাম থাকায় তারা এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। ব্যাংক থেকে জমা রশিদও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান হাদি এই টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। হাদিউজ্জামানকে আটক করে টাকা আদায় করার দাবি জানান তারা।
সাবানা বেগম নামের এক নারী গ্রাহক বলেন, ‘সাড়ে চার লাখ টাকা রেখেছিলাম ব্যাংকে। এই টাকার লাভে আমার সংসারের খরচ চলতো। কিন্তু ব্যাংকে এসে জানলাম আমার হিসাবে কোনো টাকা জমা নেই। আমাদের কোনো আয় নেই, স্বামী পঙ্গু হাঁটতে পারেন না। এখন আমাদের কীভাবে চলবে।’
যাত্রাপুর এলাকার মনোয়ারা বেগম নামের আরেক নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘চাচা, ফুপু ও আমাদের সবার মিলে ২৩ লাখ টাকা আছে এই ব্যাংকে। কিন্তু অ্যাকাউন্টে দেখছি এখন কোনো টাকা নেই। এত টাকা হারিয়ে পরিবারের সবাই এখন খুবই চিন্তিত, কী হবে জানি না।’
বাগদিয়া এলাকার আজিজুল হক নামের এক কৃষক বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলাম। এখন শুনছি টাকা নেই। এভাবে হলে কীভাবে আমরা টাকা-পয়সা সঞ্চয় করবো?’
চাপাতলা এলাকার মিনারা বেগম নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘১ লাখ ১০ টাকা রেখেছিলাম। কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। এভাবে আমাদের টাকা উদ্যোক্তা আত্মসাৎ করছেন। এ বিষয়টি ব্যাংকের ইনচার্জ বা ক্যাশিয়ার কখনও আমাদের জানাননি। এটা আমাদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।’
এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ইনচার্জ মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘ওই শাখা পাঁচ বছর ধরে চলছে। তানিশা এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী হাদিউজ্জামান হাদি ওই আউটলেট নেন। আমাদের দুই হাজার ৬০০ এর মতো গ্রাহক রয়েছেন। যাদের ডিপোজিটের পরিমাণ ছয় কোটি টাকার ওপরে। এসব গ্রাহকের জমা দেয়া টাকা আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকে জমা দিয়েছি। কিন্তু কিছু সংখ্যক গ্রাহকদের টাকা ব্যাংকের উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান হাদী নিজে নিয়ে অন্যখাতে ব্যয় করেছেন। এই টাকার বিপরীতে উদ্যোক্তা নিজে এবং আমাদের দিয়ে গ্রাহকদের ব্যাংকের স্লিপ দিয়েছেন। উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামানের নেয়া গ্রাহকদের টাকার পরিমাণ দেড় কোটির মতো হতে পারে।’
মো. আব্দুল হালিম আরও বলেন, ‘হাদিউজ্জামান প্রায় দুই মাস ধরে ব্যাংকে আসেন না। গ্রাহকরা টাকা নিতে এলে অন্য গ্রাহকদের টাকা দিয়ে সমন্বয় করতে বলেন। আমরা সেভাবেই করেছি। সর্বশেষ কয়েকদিন আগে অনেক চেষ্টা করে তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদেরকে বলেছেন যত দ্রুত সম্ভব জমি বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করে দেবেন।’
আব্দুল হালিম আরও বলেন, ‘কিছু গ্রাহক আছেন যারা অতিরিক্ত লাভের আশায় ব্যাংকে টাকা না রেখে উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামানের সঙ্গে চুক্তি করে টাকা রেখেছেন, তারা লাভও নিয়েছেন। এসব গ্রাহকের বিষয়ে আমরা ঠিকঠাক জানি না। এখন লাপাত্তার খবর শুনে তারা এসেছেন।’
এদিকে, হাদিউজ্জামান হাদি ও তার পরিবারের লোকজন কয়েকদিন ধরে এলাকা ছাড়া রয়েছেন। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বাগেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা বাগেরহাট মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’