ঢাকা ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo চান্দিনা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অস্বাভাবিক বরাদ্দ Logo আশ্রয়ণ প্রকল্পের থাকা চিত্রনায়িকা বনশ্রী আর নেই Logo এনসিপি নেতা নাহিদের ওপর প্রকাশ্য হত্যার হুমকি Logo নীলফামারীতে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার Logo মনোহরগঞ্জে ৪ গাড়ির সংঘর্ষে নিহত ১ Logo ঝিনাইগাতীতে তিন ফার্মিসিতে জরিমানা Logo প্রবাসী ছেলেদের কোটি টাকার মালিকানা, তবুও ভাত খাওয়ায়নি কেউ : অবহেলায় মায়ের মৃত্যু Logo গাইবান্ধায় নদী থেকে স্কুল শিক্ষিকার ভাসমান লাশ উদ্ধার Logo জুলাই চেতনায় ‘সু-শাসন ও মানবাধিকার উন্নয়নে প্রজন্মের ভুমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে Logo শিল্প সাহিত্য সংযোগের উদ্যোগে “বিজ্ঞান যুগের সাহিত্যচর্চা” বিষয়ক আলোচনা ও কবিতা পাঠ

ছয় দরজা, জানালা ও তিন কক্ষের টাইলস সংস্কার কাজে ২০ লাখ টাকা

চান্দিনা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অস্বাভাবিক বরাদ্দ

টি. আর. দিদার, চান্দিনা (কুমিল্লা)

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ শাসনামলের ‘বালিশ কান্ডের’ ন্যায় চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয় দরজা, ছয় জানালা ও তিন কক্ষের টাইলস লাগানোর সংস্কার কাজে ২০ লাখ টাকার অস্বাভাবিক বরাদ্দ দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও নামমাত্র কাজ করে চান্দিনা উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশলীর যোগসাজসে টাকা হজমের পাঁয়তারা করছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ওই বিদ্যালয়ের নানা সংস্কারের জন্য ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ দিয়ে দরপত্র আহবান করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। মেসার্স এম এনায়েত উল্লাহ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজটি পায়। ওই বিদ্যালয়ের একটি ভবনের ২টি শ্রেণি কক্ষের ৪টি দরজা ও ৬টি জানালা, ছাদ সংস্কার এবং একটি অফিস কক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন ও একটি নামাজের কক্ষের ১৩শ বর্গফুট টাইলস লাগানো এবং নামমাত্র রংয়ের কাজ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। তাতেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করে বরাদ্দের ২০ লাখ টাকা হজমের পায়তারা করছে ঠিকাদার।

অথচ ওই বিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়- দুইটি শ্রেণি কক্ষ ও একটি নামাজের কক্ষে লোহার সিঙ্গেল পার্টের ৬টি দরজায় ৩৫ হাজার টাকা, ৬টি জানালায় সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং একটি কক্ষের জানালায় সিট লাগানোর খরচ ১০ হাজার টাকা ধরলে ১ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ৩টি কক্ষে ১৩শ বর্গফুট ১৬/১৬ ইঞ্চি টাইলস লাগানোর খরচ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, একটি কক্ষ ও একটি ভবনের ছাদে সিলেকশন পাথর, বালু ও সিমেন্টে এক ইঞ্চিরও কম ঢালাই দেয়ার খরচ ৫০ হাজার এবং নামমাত্র রংয়ের কাজসহ অন্যান্য কাজে আরও সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা হিসেব করলেও সর্বমোট ৪ লাখ টাকার বেশি খরচ হওয়া কথা না। ওইসব সংস্কার করে উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশলীর যোগসাজসে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।

যেখানে ওই কাজটি ৩-৪ লাখ টাকায় করা সম্ভব সেখানে ২০ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে ‘বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামত’ প্রকল্পের ২০ লাখ টাকা হজম করার চেষ্টাকে অস্বাভাবিক এবং স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ শাসনামলের ‘বালিশ কান্ডের’ ঘটনার ন্যায় বলছেন বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র ভৌমিক জানান- বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ শুরু করার পর থেকে আমি ঠিকাদারকে সিডিউল দেখাতে বললে তিনি আজও আমাকে সিডিউল দেখাননি। নিজের ইচ্ছেমত লোক পাঠিয়ে কখনও বালু সিমেন্টর কাজ করছেন, কখনও দরজা জানালা লাগান আবার কখনও টাইলস ও রংয়ের কাজ করেন। যে দুইটি শ্রেণি কক্ষের কাজ করেছেন সেখানে বারান্দার কিছু অংশের ঢালাই উঠিয়ে নতুন করে ঢালাই দিলেও সেগুলো ২দিন পরেই উঠতে শুরু করে। হাত দিয়ে খোঁচা দিলে বালু ছাড়া আর কিছু বের হচ্ছে না। একটি কক্ষের ছাদের উপর মেরামত করেছে সেই কক্ষে আবারও বৃষ্টির পানি পড়ছে। কিন্তু যখন জানতে পারি এই কাজের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ তখন আমরা হতবাক হই! কাজের এমন অনিয়ম নিয়ে আমি উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশলীকে বিষয়টি অবহিত করেছি।

মেসার্স এম এনায়েত উল্লাহ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির সত্বাধিকারী মো. এনায়েত উল্লাহ এনাম জানান- আমি খুব শীঘ্রই প্রধান শিক্ষককে কাজের সিডিউল পাঠিয়ে দিব। কাজের মান খারাপ সম্পর্কে তিনি বলেন- আমাদের কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি, আরও কিছু রংয়ের কাজ বাকি আছে। আর ঠিকাদারির কাজ তো, কিছু ১৯/২০ হবেই।

এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী লক্ষণ সূত্রধর জানান- মূলত ওই টেন্ডারটি হয়েছে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে। বিদ্যালয়টির দুইটি কক্ষ, একটি নামাজের স্থান এবং ছাদের কিছু অংশের সংস্কার করার জন্য ইস্টিমেট করা হয়। ওই ইস্টিমেটেই কাজ করা হয়েছে। এখন কিছু রংয়ের কাজ বাকি আছে।

চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান- বিষয়টি আমি শুনেছি। যেহেতু ওই বিদ্যালয়টি সভাপতিও আমি সেহেতু আমি সিডিউল অনুযায়ী কাজের মান না দেখে স্বাক্ষর করবো না।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চান্দিনা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অস্বাভাবিক বরাদ্দ

SBN

SBN

ছয় দরজা, জানালা ও তিন কক্ষের টাইলস সংস্কার কাজে ২০ লাখ টাকা

চান্দিনা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অস্বাভাবিক বরাদ্দ

আপডেট সময় ১০:৪৫:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

টি. আর. দিদার, চান্দিনা (কুমিল্লা)

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ শাসনামলের ‘বালিশ কান্ডের’ ন্যায় চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয় দরজা, ছয় জানালা ও তিন কক্ষের টাইলস লাগানোর সংস্কার কাজে ২০ লাখ টাকার অস্বাভাবিক বরাদ্দ দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও নামমাত্র কাজ করে চান্দিনা উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশলীর যোগসাজসে টাকা হজমের পাঁয়তারা করছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ওই বিদ্যালয়ের নানা সংস্কারের জন্য ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ দিয়ে দরপত্র আহবান করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। মেসার্স এম এনায়েত উল্লাহ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজটি পায়। ওই বিদ্যালয়ের একটি ভবনের ২টি শ্রেণি কক্ষের ৪টি দরজা ও ৬টি জানালা, ছাদ সংস্কার এবং একটি অফিস কক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন ও একটি নামাজের কক্ষের ১৩শ বর্গফুট টাইলস লাগানো এবং নামমাত্র রংয়ের কাজ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। তাতেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করে বরাদ্দের ২০ লাখ টাকা হজমের পায়তারা করছে ঠিকাদার।

অথচ ওই বিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়- দুইটি শ্রেণি কক্ষ ও একটি নামাজের কক্ষে লোহার সিঙ্গেল পার্টের ৬টি দরজায় ৩৫ হাজার টাকা, ৬টি জানালায় সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং একটি কক্ষের জানালায় সিট লাগানোর খরচ ১০ হাজার টাকা ধরলে ১ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ৩টি কক্ষে ১৩শ বর্গফুট ১৬/১৬ ইঞ্চি টাইলস লাগানোর খরচ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, একটি কক্ষ ও একটি ভবনের ছাদে সিলেকশন পাথর, বালু ও সিমেন্টে এক ইঞ্চিরও কম ঢালাই দেয়ার খরচ ৫০ হাজার এবং নামমাত্র রংয়ের কাজসহ অন্যান্য কাজে আরও সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা হিসেব করলেও সর্বমোট ৪ লাখ টাকার বেশি খরচ হওয়া কথা না। ওইসব সংস্কার করে উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশলীর যোগসাজসে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।

যেখানে ওই কাজটি ৩-৪ লাখ টাকায় করা সম্ভব সেখানে ২০ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে ‘বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামত’ প্রকল্পের ২০ লাখ টাকা হজম করার চেষ্টাকে অস্বাভাবিক এবং স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ শাসনামলের ‘বালিশ কান্ডের’ ঘটনার ন্যায় বলছেন বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র ভৌমিক জানান- বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ শুরু করার পর থেকে আমি ঠিকাদারকে সিডিউল দেখাতে বললে তিনি আজও আমাকে সিডিউল দেখাননি। নিজের ইচ্ছেমত লোক পাঠিয়ে কখনও বালু সিমেন্টর কাজ করছেন, কখনও দরজা জানালা লাগান আবার কখনও টাইলস ও রংয়ের কাজ করেন। যে দুইটি শ্রেণি কক্ষের কাজ করেছেন সেখানে বারান্দার কিছু অংশের ঢালাই উঠিয়ে নতুন করে ঢালাই দিলেও সেগুলো ২দিন পরেই উঠতে শুরু করে। হাত দিয়ে খোঁচা দিলে বালু ছাড়া আর কিছু বের হচ্ছে না। একটি কক্ষের ছাদের উপর মেরামত করেছে সেই কক্ষে আবারও বৃষ্টির পানি পড়ছে। কিন্তু যখন জানতে পারি এই কাজের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ তখন আমরা হতবাক হই! কাজের এমন অনিয়ম নিয়ে আমি উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশলীকে বিষয়টি অবহিত করেছি।

মেসার্স এম এনায়েত উল্লাহ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির সত্বাধিকারী মো. এনায়েত উল্লাহ এনাম জানান- আমি খুব শীঘ্রই প্রধান শিক্ষককে কাজের সিডিউল পাঠিয়ে দিব। কাজের মান খারাপ সম্পর্কে তিনি বলেন- আমাদের কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি, আরও কিছু রংয়ের কাজ বাকি আছে। আর ঠিকাদারির কাজ তো, কিছু ১৯/২০ হবেই।

এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী লক্ষণ সূত্রধর জানান- মূলত ওই টেন্ডারটি হয়েছে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে। বিদ্যালয়টির দুইটি কক্ষ, একটি নামাজের স্থান এবং ছাদের কিছু অংশের সংস্কার করার জন্য ইস্টিমেট করা হয়। ওই ইস্টিমেটেই কাজ করা হয়েছে। এখন কিছু রংয়ের কাজ বাকি আছে।

চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান- বিষয়টি আমি শুনেছি। যেহেতু ওই বিদ্যালয়টি সভাপতিও আমি সেহেতু আমি সিডিউল অনুযায়ী কাজের মান না দেখে স্বাক্ষর করবো না।