
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত বুধবার বিকেলে বেইজিংয়ের মহাগণভবনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জারদারির সাথে বৈঠক করেন।
বৈঠকে সি চিন পিং উল্লেখ করেছেন যে, চীন ও পাকিস্তান পরস্পরের বন্ধু এবং সর্বকালের কৌশলগত অংশীদার। চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে স্থায়ী ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব দুই দেশের পুরনো প্রজন্মের নেতাদের দ্বারা তৈরি এবং এটি দুই দেশ এবং জনগণের এক মূল্যবান সম্পদ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, উভয়পক্ষ রাজনৈতিকভাবে একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছে, ঘনিষ্ঠ উচ্চ-স্তরের বিনিময় বজায় রেখেছে এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর করেছে। চীন পাকিস্তানের সাথে আধুনিকীকরণের নিজ নিজ পথে কাজ করতে, নতুন যুগে একটি অভিন্ন কল্যাণের চীন-পাকিস্তান কমিউনিটি নির্মাণকে ত্বরান্বিত করতে, দুই জনগণের আরও ভালোভাবে উপকার করতে এবং আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধিতে আরও বেশি অবদান রাখতে ইচ্ছুক।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন যে, চীন সর্বদা চীন-পাকিস্তান সম্পর্ককে কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, পাকিস্তানের প্রতি তার বন্ধুত্বপূর্ণ নীতিতে উচ্চমাত্রার স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে এবং সর্বদা সমগ্র পাকিস্তানি জনগণের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে। দু’পক্ষের উচিৎ উন্নয়ন কৌশল এবং রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সমন্বয় আরও গভীর করা, সকল স্তরে এবং বিভাগ জুড়ে বিনিময় জোরদার করা এবং চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তি ক্রমাগত সুসংহত করা।
চীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সাথে বাস্তব সহযোগিতা আরও গভীর করতে, যৌথভাবে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে সহযোগিতার একটি ‘উন্নত সংস্করণ’ তৈরি করতে এবং পাকিস্তানকে তার উন্নয়নের ভিত্তি সুসংহত করতে এবং তার উন্নয়ন সম্ভাবনা উন্মোচন করতে সহায়তা করতে ইচ্ছুক। আমরা আশা করি পাকিস্তানে চীনা কর্মী, প্রকল্প এবং প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় পাকিস্তান সুরক্ষা জোরদার করবে এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে। আগামী বছর চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী। উভয়পক্ষের উচিত সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং গণমাধ্যমের মতো ক্ষেত্রে বিনিময় এবং সহযোগিতা আরও গভীর করা, যাতে চীন-পাকিস্তান বন্ধুত্ব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হতে পারে। তিনটি প্রধান বৈশ্বিক উদ্যোগের প্রতি পাকিস্তানের সক্রিয় সমর্থন এবং প্রাসঙ্গিক সহযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য চীন কৃতজ্ঞ। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি সমুন্নত রাখতে, একতরফাবাদ এবং আধিপত্যবাদী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে, বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করতে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাধারণ স্বার্থ রক্ষা করতে চীন পাকিস্তানের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।
জারদারি বলেন, পাকিস্তান ও চীন ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং আরও বেশি করে সর্বকালের বন্ধু এবং অংশীদার। পরিস্থিতি যেভাবেই পরিবর্তিত হোক না কেন, পাকিস্তান অবিচলভাবে চীনের পাশে থাকবে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নিঃস্বার্থ সাহায্যের জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানায় পাকিস্তান এবং চীনের সফল অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের উচ্চমানের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রচার করতে এবং পাকিস্তানকে শিল্পায়ন ও আধুনিকীকরণ অর্জনে সহায়তা পেতে ইচ্ছুক।
রাষ্ট্রপতি সি চিন পিংয়ের বিজ্ঞ নির্দেশনায়, চীন আন্তর্জাতিক বিষয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা পালন করেছে এবং বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠছে। পাকিস্তান বহুপাক্ষিকতা বজায় রাখতে, মুক্ত বাণিজ্য রক্ষা করতে এবং দুই দেশ এবং বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাধারণ স্বার্থকে উন্নীত করতে চীনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে ইচ্ছুক।
আলোচনার পর, দুই রাষ্ট্রপ্রধান যৌথভাবে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেডিও ও টেলিভিশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা দলিল স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন।
সূত্র:স্বর্ণা-হাশিম-লিলি,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।