
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৬তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেইজিংয়ের গণ-মহাভবনে এক অভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, দেশের প্রেসিডেন্ট এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিন পিং অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন।
দেশের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চাও ল্য চি, ওয়াং হুনিং, ছাই ছি, তিং শুয়ে সিয়াং, লি সি এবং হান চেং। দেশি-বিদেশি প্রায় ৮০০জন অতিথি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
সি চিন পিং তার ভাষণে প্রথমে সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাষ্ট্রীয় পরিষদের পক্ষ থেকে দেশের সব জাতির মানুষ, গণমুক্তিফৌজ, সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দলের সদস্য এবং দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিবসটির শুভেচ্ছা জানান। তিনি হংকং ও ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের স্বদেশবাসী, তাইওয়ানের স্বদেশবাসী এবং প্রবাসী চীনাদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। যেসব বন্ধুপ্রতীম দেশ ও আন্তর্জাতিক বন্ধুরা চীনের উন্নয়নে দীর্ঘকাল ধরে সমর্থন দিয়ে আসছেন, তাদের প্রতিও তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সি চিন পিং বলেন, নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৬ বছরে সিপিসি’র নেতৃত্বে চীনা জনগণ অবিরাম প্রচেষ্টার মাধ্যমে উজ্জ্বল সাফল্য অর্জন করেছে। সম্প্রতি “জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী” যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। এটি দেশপ্রেমের চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি যুগিয়েছে। তিনি ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশকে আরও ভালোভাবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, এ বছর জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মুখেও আমরা সার্বিকভাবে সংস্কার জোরদার করেছি, উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়েছি এবং জনগণের জীবনমান উন্নত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। এর ফলে সিপিসি ও দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। আগামী মাসে সিপিসি’র ২০তম কেন্দ্রীয় কমিটির চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন আয়োজিত হবে, যেখানে ‘পঞ্চদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা’ বিষয়ক প্রস্তাবনা আলোচনা ও চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের উচিত নতুন যুগে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় লক্ষ্যকে সামনে রেখে ‘পঞ্চদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা’ সময়কালের জন্য উন্নয়ন লক্ষ্য এবং কৌশলগত পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে তৈরি ও বাস্তবায়ন করা, যাতে সমাজতান্ত্রিক আধুনিকায়ন নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নিশ্চিত করা যায়।
সি চিন পিং জানান, নতুন এই যাত্রায় আমাদের উচিত দৃঢ়ভাবে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতি বাস্তবায়ন করা; হংকং ও ম্যাকাওকে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আরও ভালোভাবে যুক্ত হওয়ার জন্য সমর্থন দেওয়া; অর্থনীতি ও জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো; তাইওয়ান প্রণালীর দুই পারের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করা; ‘তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ দেশ বিভক্ত করার চক্রান্ত এবং বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপের দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা করা।
সি চিন পিং জোর দিয়ে আরও বলেন, পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মুখে আমাদের উচিত সমগ্র মানবজাতির অভিন্ন মূল্যবোধ প্রচার করা, প্রকৃত বহুপাক্ষিকতাবাদ বাস্তবায়ন করা এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ, বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ, বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগ ও বৈশ্বিক শাসন উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করে মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন কল্যাণের সমাজ প্রতিষ্ঠা করার কথাও বলেন তিনি।
সূত্র:আকাশ-তৌহিদ-জিনিয়া,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।