
তিন মাসেরও বেশি সময় পর, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানরা আবারও যে ফোনালাপ করেছেন, যা বিশ্বজুড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে ফোনে কথা বলেন, বর্তমান চীন-মার্কিন সম্পর্ক এবং পারস্পরিক উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা ও গভীরভাবে মতবিনিময় করেন, পরবর্তী পর্যায়ে চীন-মার্কিন সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। প্রেসিডেন্ট সি, চীন-মার্কিন সম্পর্কের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে বলেন, দুই দেশ পারস্পরিক সাফল্য এবং অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, যা উভয় দেশ এবং বিশ্বকে উপকৃত করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অনুকূল হবে। তিনি চীনের সাথে দীর্ঘমেয়াদী, ভালো এবং দুর্দান্ত সম্পর্কের আশা প্রকাশ করেন।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এবং ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর মতো মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো এই ফোনালাপটি ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে। হংকংয়ের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট মন্তব্য করেছে যে, এটি দুটি প্রধান শক্তির সম্পর্ক স্থিতিশীল করার জন্য বেইজিং ও ওয়াশিংটনের সর্বশেষ প্রচেষ্টা।
এই বছর চীন এবং মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে এটি তৃতীয় ফোনালাপ এবং সময়টি তাৎপর্যপূর্ণ। ৩ সেপ্টেম্বর চীন, জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা-জনগণের প্রতিরোধ-যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধের বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং বেঁচে থাকা আমেরিকান ভলানটিয়ার গ্রুপ বা এভিজি’র পরিবারগুলোকে সামরিক কুচকাওয়াজ দেখার জন্য থিয়েনআনমেন মহাচত্বরে আমন্ত্রণ জানায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র সামরিকবাদ এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রধান বিজয়ী দেশ হিসেবে, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে সান ফ্রান্সিসকো সাংবিধানিক কনভেনশন শুরু করে এবং জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা করে। গত ৮০ বছর ধরে, জাতিসংঘ-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা যুদ্ধোত্তর বিশ্বে সামগ্রিক শান্তি নিশ্চিত করেছে এবং বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে উৎসাহিত করেছে। এটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথভাবে প্রদত্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক অবদান।
ইতিহাস একটি আয়নার মতো, অতীতকে প্রতিফলিত করে এবং ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা জোগায়। আশি বছর আগে, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র শান্তি ও ন্যায়বিচারের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল। আজ, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রেরও বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা করা উচিত এবং নতুন যুগে প্রধান শক্তির দায়িত্ব পালন করা উচিত। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে শুল্কযুদ্ধ শুরু করেছে, চীনের উচ্চ-প্রযুক্তি শিল্পগুলোর প্রতি বৈরি মনোভাব দেখিয়েছে এবং তথাকথিত ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রে, চীনা কোম্পানিগুলোর উন্নয়নে প্রায়শই বাধা সৃষ্টি করেছে, যার ফলে চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দিয়েছে।
ফোনালাপের সময় প্রেসিডেন্ট সি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে চীনের নীতি এবং অবস্থান স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, উভয়পক্ষকে একে অপরের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করা উচিত্, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকানো উচিত্। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে চীনের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং স্পষ্ট। তা হলো প্রেসিডেন্ট সি’র জোর দেওয়া, “পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং জয়-জয় সহযোগিতা’র” নীতি।
দুই নেতার কৌশলগত নির্দেশনা অটলভাবে মেনে চলা এবং দুই নেতার উপনীত গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যকে আপোষহীনভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র পার্থক্যগুলো সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে এবং নতুন যুগে জয়-জয় সহযোগিতার পথ তৈরি করতে সক্ষম হবে। এটি বিশ্বের জন্য প্রধান শক্তিগুলোর যৌথ দায়িত্ব, যা চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাঁধে নেওয়া উচিত।
সূত্র:লিলি-হাশিম-তুহিনা,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।
আন্তর্জাতিক: 



























