মুজিবুল হক- কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। চারবারের এ সংসদ সদস্য ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ই আগষ্ট দেশ ছেড়ে পালান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর থেকে কুমিল্লা-১১ চৌদ্দগ্রাম আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক মুজিব লাপাত্তা। বিক্ষুব্ধ জনতা তার গ্রামের বাড়ি বসুয়ারা ও রাজনৈতিক কার্যালয় ভাংচুর করে। ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় তার দাম্ভিকতা।
নিজেকে কৃষকের সন্তান পরিচয়দানকারী মোঃ মুজিবুল হক এমন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। শূন্য থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এই মুজিবুল হক মুজিবের সম্পদের বিবরণ শুনলে যে কারোও চোখ কপালে উঠবে।
তার সম্পদের হিসাব চেয়ে দুদকে একাধিক অভিযোগ হলেও মুজিবুল হকের প্রভাব ও ক্ষমতার কারণে আলোর মুখ দেখেনি এসকল তদন্ত।
চৌদ্দগ্রামে এমন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করেনি। তার হামলা-মামলার অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়নি নিজ দলের নেতা-কর্মীরাও।
অনুসন্ধানে জানা যায়- তার আত্নীয়-স্বজন যারা দিনে এনে দিনে খেত তারাও এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। গ্রামের বাড়ি চৌদ্দগ্রামের বসুয়ারাতে সকলের এখন তিন তলা বাড়ি। কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেঞ্চ।
মুজিবুল হক এমপির ভাতিজা তোফায়েল আহাম্মেদ নিজেকে চৌদ্দগ্রামের অঘোষিত এমপি দাবি করেন। তার প্রভাব এতো বেশি যে- অনেক সময় তিনি দলের ত্যাগী নেতাদের পাকিস্থান পাঠানোর হুমকি দিতেন।
চৌদ্দগ্রামের বড় বড় প্রকল্পের যত কাজ সবকিছুই তোফায়েল নিয়ন্ত্রন করতেন। সরকারি পরিত্যক্ত বিভিন্ন স্থাপনা, মানুষের জায়গা দখলসহ হুমকি-ধমকি, মামলার আসামি করাসহ একটি দানবীয় জলুম চালিয়েছেন সাধারণ মানুষের উপর।
এদের আয়ের উৎস কি? জানা নেই কারোও।
মুজিবুল হকের কুমিল্লা নজরুল এভিনিউতে ডুপ্লেক্স বাড়ি, বাণিজ্যিক ভবন, গ্রামে আলিশান বাড়ি এবং কুমিল্লায় রয়েছে বেশকিছু ফ্ল্যাট।
ঢাকায় রয়েছে বেশকিছু বাড়ি ও অসংখ্য ফ্ল্যাট। যে বাসায় মুজিবুল হক থাকতেন সেটাও প্রায় ৮০০০ স্কয়ার ফিটের।
চান্দিনায় শ্বশুর বাড়ির এলাকায় ক্রয় করেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
তার স্ত্রী হনুফা আক্তার রিক্তার নামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। বড় কোম্পানির ডিরেক্টরশীপ এ যেন আলাদিনের প্রদীপকেও হার মানায়। মেঘনা এলাকায় রয়েছে বিঘা বিঘা জায়গা, সিএনজি ফিলিং ষ্টেশনসহ রয়েছে দেশ বিদেশে শত কোটি টাকার ব্যবসা বাণিজ্য।
এ মহুত্¦ে মুজিবুল ও তার স্ত্রী হনুফা আক্তার রিক্তার ঢাকায় আত্নগোপনে রয়েছে বলে জানা যায়। তার মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মুজিবুল হকের একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হাস্যকর ও মনগড়া একটি হলফনামা। যেখানে ২০১৮ সালে মুজিবুল হক ও তার স্ত্রীর কোনো অ্যাপার্টমেন্ট ছিল না। ২০২৩ সালে মুজিবুল হকের এক কোটি ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ও তাঁর স্ত্রী হনুফা আক্তারের এক কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্জনমূল্যের একটি করে দুটি অ্যাপার্টমেন্টের কথা হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
একসময় মুজিবুল হক ছিলেন আয়কর আইনজীবি। তাই চুরি কিভাবে করতে হয় তা তিনি ভালো ভাবেই জানতেন!
রেলপথমন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর রেলের খালাসী পদে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে।
রেলের খালাসী পদে বেতন মাত্র ৪১০০ টাকা। অথচ এজন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়েছে। ডেমো ট্রেন ক্রয়ে রয়েছে তার বিরুদ্ধে বিশাল অভিযোগ। এসকল বিষয় তৎকালীন জাতীয় পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক আকারে প্রকাশিত হয়।
পূর্বাচলে রয়েছে তার ১০কাঠা জমি। গড়ে তোলেছেন বাংলো বাড়ি।
কুমিল্লায় রয়েছে ‘আইরিশ হিল’ নামক অনেক বড় রেষ্টুরেন্ট। মিঞাবাজারে রয়েছে কাকড়ি টাওয়ার।
যারা তার এই সকল বিষয়ে যারাই মুখ খুলেছেন তারাই হামলা মামলা জেল-জলুমের শিকার হয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক আকতার হোসেন সাদ্দামসহ ৪সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ২টি চাঁদাবাজি, মার্ডার মামলা ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামি করা হয়।