
সরকার জামাল :
শনিবার ৬ সেপ্টেম্বর সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড প্রেস সোসাইটির আয়োজনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, “জুলাই ছাত্র হত্যা” মামলার অন্যতম আসামি সাইফুল ইসলাম সজীব একাধিক গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং অপরাধের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাইফুল ইসলাম সজীবের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ—ছাত্র হত্যা, মাদক ব্যবসা, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, যৌন নিপীড়ন, অপহরণ, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা। রামপুরা ও ভাটারা থানায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র হত্যার মামলায় তিনি যথাক্রমে ৭ ও ৬৯ নম্বর আসামি হিসেবে তালিকাভুক্ত। মামলা নম্বর যথাক্রমে ৩৪৮/২০২৫ এবং ১৩৯/২০২৫।
২০২৪ সালের ৬ আগস্ট রাত ৮টার দিকে কাকরাইলের কর্নফুলী গার্ডেন সিটি অ্যাপার্টমেন্টে মোঃ মিজানুর রহমান লফিজের বাসায় বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালান সজীব। হামলার সময় বাসায় মিজানুর রহমান না থাকলেও, তার ছেলে, মেয়ে ও গৃহকর্মীকে শারীরিকভাবে মারধর করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক বাসায় প্রবেশ করে প্রথমেই সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে, যাতে লুটপাটের কোনো প্রমাণ না থাকে। এরপর বাসা থেকে মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার, আইফোন, আইপ্যাড, অতিথির লাগেজসহ বহু মূল্যবান জিনিস লুট করে নিয়ে যায়। এমনকি ভবনের গেটের সিসি ক্যামেরা, মসজিদের মাইকের স্ট্যান্ড ও ফ্যান পর্যন্ত নিয়ে যায়।
হামলার খবর পেয়ে এলাকাবাসী সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাইলে সেনা সদস্যরা এসে সজীবের ভাড়া করা সাতজন সন্ত্রাসীকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ৫১ জন ফ্ল্যাট মালিকের উপস্থিতিতে এক সভা হয় এবং ৬ জন বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ২, তারিখ: ১৮/০৮/২০২৪)।
সজীবের বিরুদ্ধে অতীতে বহু মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত এক নারী অ্যাডভোকেট তাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করেন (মামলা নং ২৩, তারিখ: ২৪/১২/২০১৫)। ২০২৩ সালে হাতিরঝিল এলাকায় তৌহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ২০ লক্ষ টাকা লোন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেন এবং প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যার হুমকি দেন। ভুক্তভোগী এরপর হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং সিআর-৭২৭, তারিখ: ২১/০৮/২০২৩)।
এছাড়াও, মৌলভীবাজার সদর থানায় ২০২৪ সালে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়, যাতে তিনি গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন। ২০২৩ সালে রামপুরা থানায় চাঁদাবাজি মামলায়ও তিনি গ্রেফতার হন (মামলা নং সিআর-৩৯০/২০২৩)। একই বছর ২ আগস্ট তিনি হাতিরঝিল থানায় মাদক মামলায় গ্রেফতার হন, যেখানে আদালত তার জামিন আবেদন বাতিল করে এবং তিনি রিমান্ডে নিয়ে জেল খাটেন (হাতিরঝিল থানার এফআইআর নং ৩৩, পেনাল কোড ১৮৬০ অনুযায়ী)।
সজীব কর্নফুলী গার্ডেন সিটি অ্যাপার্টমেন্টে প্রায়ই লাঠি হাতে চলাফেরা করেন, যা বাসিন্দাদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে ফ্ল্যাটে হুমকি প্রদান ও শারীরিক নির্যাতন করেন। এক গৃহবধূ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানিয়েছেন, সজীব তাকে ফোনে হুমকি দিয়ে বলেন—“তোমার ফ্ল্যাটে ঢুকে সবাইকে মেরে ফেলে, পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেবো।” এই ভয়ের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
সজীব সম্প্রতি কর্নফুলী গার্ডেন সিটি মালিক সমবায় সমিতির অফিস থেকে ম্যানেজার মোঃ সামসুদ্দিনকে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে অফিস কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন এবং হুমকি দেন যে তালা খুলতে দেওয়া হবে না। অথচ মোঃ সামসুদ্দিন ৬০ জন ফ্ল্যাট মালিকের নির্বাচিত প্রতিনিধি। সমবায় সমিতির সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় সবার সম্মতিক্রমে, একক সিদ্ধান্তে নয়।
বিভিন্ন মামলায় জেল খাটা এবং জামিনে মুক্তি পাওয়া সত্ত্বেও সজীব বারবার অপরাধে লিপ্ত হচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তার সহায়তায় তিনি আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন এবং অপরাধের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পেছনের শক্তির উৎস কোথায়—তা এখন জনমনে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যদি এমন একজন বহুমুখী অপরাধী দিনের আলোয় ঘুরে বেড়াতে পারে এবং সাধারণ মানুষকে হুমকি দিয়ে দমন করতে পারে, তবে দেশের আইন-শৃঙ্খলার প্রতি মানুষের বিশ্বাস কীভাবে থাকবে? তারা দ্রুত এই অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।