ঢাকা ০৯:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“জিনের পুতুল” দেখিয়ে প্রতারণা, অভিযোগের পরেও মিলছে না প্রতিকার

মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ জীনের সোনার পুতুল ও রুপার টাকা দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈলে উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের কোচল এলাকার নাজমা ওরফে ছুুটুনি বুড়িসহ একটি চক্র লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে থানায় জানিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না অভিযোগকারীদের।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, নাজমা রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের কোচল এলাকার আব্দুল বারেকের স্ত্রী। তিনি সম্প্রতি উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের মহারাজাহাট এলাকার মোজাফ্ফর রহমানের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে গিয়ে তাঁর অভাব-অনটনের বিষয় মোজাফ্ফরকে বলেন। একপর্যায়ে তাঁকে ধর্মের ছেলে বানিয়ে আত্মীয়তা তৈরি করেন। ১০ নভেম্বর রাতে মোজাফ্ফর স্ত্রীসহ নাজমার বাড়িতে গেলে নাজমা বলেন, তাঁর ঘরে ‘জিনের পুতুল’সহ বিভিন্ন স্বর্ণালংকার রয়েছে। এগুলো মাটি থেকে তুলতে জিনের নির্দেশনা অনুযায়ী চার মসজিদে মোট ৪ লক্ষ টাকা দান করতে হবে। আর এসব টাকা মোজাফ্ফর রহমানের কাছে ধার বাবদ চান ছুটুনি বুড়ি। তিনি যদি ধার দিতেন তাহলে দেওয়ার এক ঘণ্টা পরই পুতুলসহ স্বর্ণালংকার তুলে বিক্রি করে তাঁকে টাকাটা ফেরত দেবেন। এত টাকা দিতে রাজি হয়নি তিনি। পরে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করে ছুটুনি বুড়ি। এতে পরে মোজাফ্ফর রহমান চিন্তা করে যেহেতু ধার চেয়েছে তাই কিছু দিয়ে সহযোগীতা করি। যেহেতু সে কিছুক্ষণ পরে টাকা দিয়ে দিবে। তাই তিনি স্ত্রী’সহ ধার দেনা করে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায় ছুটুনি বুড়ির বাসায়। এরপর মোজাফ্ফর তাঁকে ওই টাকা ধার দেন।

টাকা নেওয়ার পর মোজাফ্ফর ও তাঁর স্ত্রীকে বাড়িতে বসতে বলেন। একপর্যায়ে বাড়িতে কয়েকজন এসে বলেন, ‘আপনারা এত রাতে এখানে কী করেন। এখান থেকে চলে যান, না হলে সমস্যা আছে। অবস্থা বেগতিক দেখে মোজাফ্ফর তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। পরে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের পরামর্শে পরদিন নাজমাসহ আটজনকে আসামি করে রানীশংকৈল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন মোজাফ্ফর।

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, এই ছুটুনিবুড়ি দীর্ঘদিন যাবত প্রায় মানুষদের সাথে জিনের পুতুলের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছে। তাকে সহায়তায় তার বাড়ীর আশপাশজুড়ে রয়েছে একটি বিশাল অপরাধ জগতের চক্র।

ছুটুনি বুড়ির প্রতারনার জালে ধরা পড়ে রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের শাহানাবাদ এলাকার রশিদুল ইসলাম জানান, তাঁকেও জিনের পুতুলের কথা বলে ১ লাখ টাকা প্রতারণা করেছেন নাজমা। একইভাবে উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের রাঘবপুর গ্রামের ভম্বল বানিয়া বলেন, জিনের পুতুলের স্বর্ণ তাঁর কাছে বিক্রি করবেন এমন প্রলোভন দেখিয়ে নাজমার বাড়ি কোচলে ডেকে নিয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা নিয়ে নেন। পরে তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেন নাজমার লোকজন।

এদিকে অভিযোগ দেওয়ার কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর রাণীশংকৈল থানার ওসি জাহিদ ইকবাল ও সহকারী পুলিশ সুপার(রাণীশংকৈল সার্কেল) কামরুল হাসান জানান, ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় না, তাছাড়াও এ ঘটনার কোন স্বাক্ষী প্রমাণ নেই। এ কারণে তারা মামলাটি নিতে পারছেন না।

ভুক্তভোগী মোজাফ্ফর রহমান বলেন, ছুটুনি বুড়ির কাছে যারা প্রতারিত হয়েছে তাঁরা স্বর্ণ পুতুল ও রুপার টাকা নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি তাঁকে সরল মনে টাকা ধার দিয়ে সহযোগীতা করতে চেয়েছিলাম। কিন্ত এভাবে প্রতারিত হব ভাবতে অবাক লাগে। ঘটনার পরের দিন ১১ নভেম্বর সকালে যখন ঘটনাস্থলে যাই। সেখানকার এলাকার লোকজন বলল এটা দীর্ঘদিন যাবত এমন প্রতারিত করার কাজ করে। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলা করে লাভ নেই। কারণ এরা শক্তিশালী চক্র।

থানায় অভিযোগ দেওয়া সহ সকল কাজে প্রথম থেকেই ভুক্তভোগীর সাথে ছিলেন তাঁর আত্মীয় হদয়। তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি। প্রতারক চক্রটি প্রতারিত করার ঘটনা ঘটায় রাণীশংকৈল থানার সীমানার ১০০ গজ পার হয়ে পীরগঞ্জ থানায়। আর বসবাস করে রাণীশংকৈল থানায়। এবং প্রতারিত করেন রাণীশংকৈল থানার লোকজনকে। কারণ ভুক্তভোগীরা যাতে কোন ব্যবস্থা নিতে বিলম্বনায় পরে। এই প্রতারক চক্রের ভয়ে এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে যাই না। এর শেষ দেখার জন্য ভুক্তভোগী থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়। কিন্তু রাণীশংকৈল থানা পুলিশ লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় বলেছিল ব্যবস্থা নিব। কিন্তু ৬দিন ঘুরার পরে এখন তারা বলে পীরগঞ্জ থানায় মামলা করতে।

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ওসি এস এম জাহিদ ইকবাল মুঠোফোনে বলেন, ভুক্তভোগীকে থানায় আসতে বলছি। সে আসলে আমরা পীরগঞ্জ থানায় বলে দিব সেখানেই মামলা হবে।

সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি,রাণীশংকৈল সার্কেল) কামরুল হাসান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি ,পীরগঞ্জ থানায় বলে দিয়েছি সেখানে গেলেই মামলাটি হবে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অব্যশই অপরাধীকে আইনের আওতায় নিতে পুলিশ বদ্ধ পরিকর। কোন অবস্থাতেই অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না। তবে মোজাফ্ফর রহমানের অভিযোগের বিষয়টি আমি গত দুদিন ধরে শুনেছি, তারা আগে কতদিন থানায় ঘুরেছে তা তার তেমন জানা নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

“জিনের পুতুল” দেখিয়ে প্রতারণা, অভিযোগের পরেও মিলছে না প্রতিকার

আপডেট সময় ০২:৩০:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২

মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ জীনের সোনার পুতুল ও রুপার টাকা দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈলে উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের কোচল এলাকার নাজমা ওরফে ছুুটুনি বুড়িসহ একটি চক্র লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে থানায় জানিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না অভিযোগকারীদের।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, নাজমা রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের কোচল এলাকার আব্দুল বারেকের স্ত্রী। তিনি সম্প্রতি উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের মহারাজাহাট এলাকার মোজাফ্ফর রহমানের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে গিয়ে তাঁর অভাব-অনটনের বিষয় মোজাফ্ফরকে বলেন। একপর্যায়ে তাঁকে ধর্মের ছেলে বানিয়ে আত্মীয়তা তৈরি করেন। ১০ নভেম্বর রাতে মোজাফ্ফর স্ত্রীসহ নাজমার বাড়িতে গেলে নাজমা বলেন, তাঁর ঘরে ‘জিনের পুতুল’সহ বিভিন্ন স্বর্ণালংকার রয়েছে। এগুলো মাটি থেকে তুলতে জিনের নির্দেশনা অনুযায়ী চার মসজিদে মোট ৪ লক্ষ টাকা দান করতে হবে। আর এসব টাকা মোজাফ্ফর রহমানের কাছে ধার বাবদ চান ছুটুনি বুড়ি। তিনি যদি ধার দিতেন তাহলে দেওয়ার এক ঘণ্টা পরই পুতুলসহ স্বর্ণালংকার তুলে বিক্রি করে তাঁকে টাকাটা ফেরত দেবেন। এত টাকা দিতে রাজি হয়নি তিনি। পরে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করে ছুটুনি বুড়ি। এতে পরে মোজাফ্ফর রহমান চিন্তা করে যেহেতু ধার চেয়েছে তাই কিছু দিয়ে সহযোগীতা করি। যেহেতু সে কিছুক্ষণ পরে টাকা দিয়ে দিবে। তাই তিনি স্ত্রী’সহ ধার দেনা করে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায় ছুটুনি বুড়ির বাসায়। এরপর মোজাফ্ফর তাঁকে ওই টাকা ধার দেন।

টাকা নেওয়ার পর মোজাফ্ফর ও তাঁর স্ত্রীকে বাড়িতে বসতে বলেন। একপর্যায়ে বাড়িতে কয়েকজন এসে বলেন, ‘আপনারা এত রাতে এখানে কী করেন। এখান থেকে চলে যান, না হলে সমস্যা আছে। অবস্থা বেগতিক দেখে মোজাফ্ফর তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। পরে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের পরামর্শে পরদিন নাজমাসহ আটজনকে আসামি করে রানীশংকৈল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন মোজাফ্ফর।

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, এই ছুটুনিবুড়ি দীর্ঘদিন যাবত প্রায় মানুষদের সাথে জিনের পুতুলের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছে। তাকে সহায়তায় তার বাড়ীর আশপাশজুড়ে রয়েছে একটি বিশাল অপরাধ জগতের চক্র।

ছুটুনি বুড়ির প্রতারনার জালে ধরা পড়ে রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের শাহানাবাদ এলাকার রশিদুল ইসলাম জানান, তাঁকেও জিনের পুতুলের কথা বলে ১ লাখ টাকা প্রতারণা করেছেন নাজমা। একইভাবে উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের রাঘবপুর গ্রামের ভম্বল বানিয়া বলেন, জিনের পুতুলের স্বর্ণ তাঁর কাছে বিক্রি করবেন এমন প্রলোভন দেখিয়ে নাজমার বাড়ি কোচলে ডেকে নিয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা নিয়ে নেন। পরে তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেন নাজমার লোকজন।

এদিকে অভিযোগ দেওয়ার কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর রাণীশংকৈল থানার ওসি জাহিদ ইকবাল ও সহকারী পুলিশ সুপার(রাণীশংকৈল সার্কেল) কামরুল হাসান জানান, ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় না, তাছাড়াও এ ঘটনার কোন স্বাক্ষী প্রমাণ নেই। এ কারণে তারা মামলাটি নিতে পারছেন না।

ভুক্তভোগী মোজাফ্ফর রহমান বলেন, ছুটুনি বুড়ির কাছে যারা প্রতারিত হয়েছে তাঁরা স্বর্ণ পুতুল ও রুপার টাকা নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি তাঁকে সরল মনে টাকা ধার দিয়ে সহযোগীতা করতে চেয়েছিলাম। কিন্ত এভাবে প্রতারিত হব ভাবতে অবাক লাগে। ঘটনার পরের দিন ১১ নভেম্বর সকালে যখন ঘটনাস্থলে যাই। সেখানকার এলাকার লোকজন বলল এটা দীর্ঘদিন যাবত এমন প্রতারিত করার কাজ করে। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলা করে লাভ নেই। কারণ এরা শক্তিশালী চক্র।

থানায় অভিযোগ দেওয়া সহ সকল কাজে প্রথম থেকেই ভুক্তভোগীর সাথে ছিলেন তাঁর আত্মীয় হদয়। তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি। প্রতারক চক্রটি প্রতারিত করার ঘটনা ঘটায় রাণীশংকৈল থানার সীমানার ১০০ গজ পার হয়ে পীরগঞ্জ থানায়। আর বসবাস করে রাণীশংকৈল থানায়। এবং প্রতারিত করেন রাণীশংকৈল থানার লোকজনকে। কারণ ভুক্তভোগীরা যাতে কোন ব্যবস্থা নিতে বিলম্বনায় পরে। এই প্রতারক চক্রের ভয়ে এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে যাই না। এর শেষ দেখার জন্য ভুক্তভোগী থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়। কিন্তু রাণীশংকৈল থানা পুলিশ লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় বলেছিল ব্যবস্থা নিব। কিন্তু ৬দিন ঘুরার পরে এখন তারা বলে পীরগঞ্জ থানায় মামলা করতে।

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ওসি এস এম জাহিদ ইকবাল মুঠোফোনে বলেন, ভুক্তভোগীকে থানায় আসতে বলছি। সে আসলে আমরা পীরগঞ্জ থানায় বলে দিব সেখানেই মামলা হবে।

সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি,রাণীশংকৈল সার্কেল) কামরুল হাসান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি ,পীরগঞ্জ থানায় বলে দিয়েছি সেখানে গেলেই মামলাটি হবে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অব্যশই অপরাধীকে আইনের আওতায় নিতে পুলিশ বদ্ধ পরিকর। কোন অবস্থাতেই অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না। তবে মোজাফ্ফর রহমানের অভিযোগের বিষয়টি আমি গত দুদিন ধরে শুনেছি, তারা আগে কতদিন থানায় ঘুরেছে তা তার তেমন জানা নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।