
শাহিন আলম আশিক
গত বছরের পাঁচই আগষ্ট ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকার পতনের পর,গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩১ ডিসেম্বর, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণা পত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। পরে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আশ্বাসে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষনে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুস জানান, আগামী জুলাই মাসে সকল রাজনৈতিক দলের, ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি জুলাই সনদ প্রস্তুত করে, জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন।
ইতিপূর্বেই অন্তবর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। যার অংশ হিসেবে ১১ টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন গুলো সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে সুপারিশ সমূহ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে। এই সংস্কারসমূহ পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ৩১ জুলাই ২০২৫ প্রর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় ২৩ তম দিনের বৈঠক শেষ হয়।
জুলাই সনদের খসরা প্রস্তাবে উল্লেখ্য,
আমরা নিম্ন স্বাক্ষর কারীগণ এই মর্মে অঙ্গিকার করছি যে,
১.হাজারো মানুষের জীবন ও রক্ত এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎ প্রেক্ষিতে জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫”- এর পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবো।
২.” জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫”-এ দেশের শাসনব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচারব্যবস্হা, নির্বাচনব্যবস্হা, জনপ্রশাসন, পুলিশিব্যবস্হা ও দূর্নীতি দমন ব্যবস্হার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব / সুপারিশ এই সনদে লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন,পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রনয়ণ বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
৩. “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫”- এ দেশের শাসনব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচারব্যবস্হা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্হা ও দূর্নীতি দমন ব্যবস্হার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব / সুপারিশ এই সনদে লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন এই সনদ গৃহীত হওয়ার পরে, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ করতে এবং এসব সংস্কার টেকসই করতে অঙ্গীকার করছি।
৪. এই সনদ গৃহীত হওয়ার পর এতে যেসব প্রস্তাব / সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো পরবর্তী দুই (২) বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ;
৫.” জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫” বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষার পূর্ণ নিশ্চয়তা বিধান করবো।
৬.” জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫” বাস্তবায়নে এবং এর আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদানে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ; এবং
৭. ২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে অঙ্গিকারবদ্ব থাকব।
দীর্ঘ আলোচনা ও নিরলস প্রচেষ্টায় খসড়া প্রস্তুত হলে প্রতীয়মান হয় যে,
“জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫”-এ উল্লেখ্য, সংস্কার, টিকসই,সংযোজন, বাস্তবায়ন এবং
সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে, অন্তত দুই বছর সময় প্রয়োজন।
জুলাই আগষ্টে শহীদদের পরিবার ও আহতদের দাবি, জুলাই আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকার, জুলাই সনদ বা জাতীয় সনদ যথাযোগ্য মর্যাদায়, সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করবেন।