
মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
এলাকার প্রভাবশালী ড্রেজার ব্যবসায়ী জোরপূর্বক কৃষি জমির মাটি কেটে নেয়ায় জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে একজন অসহায় বৃদ্ধ কৃষক। কেটে নেয়া জমির টাকা পাওয়ার আশায় এখন এলাকার সর্দারসহ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।
জমির টাকা পাওয়ার কোন আশার আলো দেখতে না পেয়ে কেঁদে কেঁদে দিনপাড় করছেন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের মটকিরচর গ্রামের স্ত্রী-সন্তানহারা এই বৃদ্ধ কৃষক আনু মিয়া। তিনি মটকিরচর গ্রামের মৃত সাহেব আলী মাস্টারের ছেলে। এঘটনায় তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মুরাদনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না বলে জানান।
কৃষকের জমির মাটি কেটে নেয়া প্রভাবশালী ড্রেজার ব্যাবসায়ী রফিকুল ইসলাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইউসুফনগর গ্রামের মোন্তাজ মিয়ার ছেলে।
কৃষক আনু মিয়া জানান, দুই বছর ধরে মটকিরচর মৌজায় আমার ৬৭শতক কৃষি জমিতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইউসুফনগর গ্রামের ড্রেজার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তাকে অনেকবার বাধা দেয়ার পরেও সে কথা শুনছে না। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলে লোকজন এসে ড্রেজার ভেঙ্গে দিয়ে যায় কিন্তু কয়েকদিন পরে আবারও মেশিন লাগিয়ে মাটি কাটা শুরু করে। বাধ্য হয়ে এলাকার লোকজন নিয়ে কয়েকবার দেন-দরবার করেও জমির টাকা আদায় করতে পারিনি। আমার স্ত্রী ও ছেলে মারা গেছে, নিজেও অসুস্থ হয়ে আছি, কখন মরে যাবো যানিনা। সকলের কাছে অনুরোধ আমার কেটে নেয়া জমির টাকা পেতে সহায়তা করুন। টাকা গুলোও যদি পাই তাহলে আমার কিছুটা সহায় হবে।
স্থানীয় কৃষক তারু মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ইউসুফনগর গ্রামের রফিক ও জাকির বিলের মধ্যে ড্রেজার লাগিয়ে আমাদের জমি থেকে মাটি কাটা শুরু করে। আমরা অনেক বাধা দিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি। অন্তবর্তী সরকারের সময়ও এখন আবারো জমি কাটা শুরু করছে। আমাদের পাড়ার মসজিদের জমিটাও কেটে নিয়েছে। আমরা তাদের বিচার চাই। আমাদের জমি ফেরত চাই।
মটকিরচর গ্রামের আয়নল মিয়া বলেন, রফিক আর জাকির মিলে আমাদের বিলের জমি গুলো বছরের পর বছর ধরে কেটে নিচ্ছে। আমার অসহায় হয়ে শুধু দেখে যাচ্ছি। দেশে কি কোন ন্যায় বিচার নাই। এদের বিচার কে করবে।
এবিষয়ে ড্রেজার ব্যবসায়ী রফিক মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমির টাকা নিয়ে আনু মিয়ার সাথে কথা হয়েছে, টাকার দেয়ার তারিখ একটা গেছে, সামনে আরেকটা তারিখ আছে। আমি আপনার সাথে সরাসরি এসে কথা বলবো।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাছান খান বলেন, ড্রেজার নির্মূলে আমাদের ধারাবাহিক অভিযান চলমান রয়েছে। ইউসুফনগরের বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তহসিদার পাঠিয়ে ড্রেজার তুলে নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এর পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা আদালতে মামলা করতে পারে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে ছাত্র সমাজ, শিক্ষক প্রতিনিধি এবং গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এলাকায় কমিটি করে এটা কৃষি জমি গুলো রক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করবো।
মুক্তির লড়াই ডেস্ক : 



























