
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব অঞ্চল-৩ এ কর্মরত ঢাকা সমিতির সেক্রেটারি হাফিজুর রহমান ও একে এম মেজবাউর রহমান শাকিলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সাইড বাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে যে, তারা সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নিজের মতো করে অফিস পরিচালনা করছেন এবং রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন। কর্মচারীদের বক্তব্য, তিনি নিজেকে শ্রমিক ইউনিয়নের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি নিজেকে “দ্যা কিং অফ ঢাকা” হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। ” দ্যা কিং অফ ঢাকা ওয়াসা হাফিজুর রহমান ” নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পেইজ ও খোলা হয়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, হাফিজ ও শাকিল গং তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বিএনপির কোনো দায়িত্বশীল পদে না থাকলেও দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা আদায় ও সাইট বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন উপ-প্রদান রাজস্ব কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল। হাফিজ, শাকিল ও খলিল গং এমডি, সচিব,এবং উপর মহলের দোহাই দিয়ে ঘন ঘন সাইড পরিবর্তন করেন যার মূল উদ্দেশ্য অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এতে করে রাজস্ব বিলিং ও আদায়ের ব্যাঘাত ঘটছে। ওয়াসার রাজস্ব অঞ্চল-৩ এ পদের অতিরিক্ত জনবল থাকায় পুরাতন কোডগুলো ভেঙে নতুন কোড তৈরির মাধ্যমে দায়িত্ব বন্টন করা হলেও হাফিজ একাধিক এলাকার দায়িত্ব কোড নং ২১১ও ২১৪ হোল্ডিং সংখা ৫৬২ টি নিজের দখলে রেখেছেন।
পাশাপাশি মেজবাউর রহমান শাকিল যার কোড নং ৪২০ হোল্ডিং সংখ্যা ৭০৪ টি প্রভাব খাটিয়ে নিজের দখলে রেখেছেন। যা স্পষ্টত প্রশাসনিক নিয়মের লঙ্ঘন। তথ্য রয়েছে যে, হাফিজ পাম্প চালক পদ থেকে রাজস্ব পরিদর্শক চলতি দায়িত্ব পাওয়ার পর উপার্জিত অবৈধ অর্থ দিয়ে ঢাকা সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেওয়ার পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আউটসোর্সিং নিয়োগ, বদলি, সাইড বানিজ্য সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সকাল ৯ টায় অফিস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, হাফিজুর রহমানের মাসিক বায়োমেট্রিক হাজিরা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিনি কখনোই সকাল ১১টা বা ১২টার আগে অফিসে আসেন না। তিনি মূল অফিস ফেলে ইউনিয়ন অফিসে বসে তার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
কর্মচারীদের বক্তব্য, এই ইউনিয়ন অফিসটি এখন চাঁদা আদায়ের “টোল বক্স” হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেখানে শ্রমিকদের উপর অন্যায় অত্যাচার করা হয়।
একাধিক অভিযোগে উঠে এসেছে, হাফিজ প্রতি ‘সাইড’ বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছ থেকে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করেন বলে জানা যায়। এই প্রক্রিয়ায় তাকে সহযোগিতা করছেন রাজস্ব অঞ্চল-৩ এর উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজস্ব পরিদর্শক বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের অর্ডার অনুযায়ী রাজস্ব জোন ৩ এ বদলি হয়ে আসার পর প্রত্যেককে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও হাফিজ ও শাকিলের কারনে সেটা সম্ভব হয়নি। হাফিজ গংদের চাহিদা অনুযায়ী ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা ঘুষ না দেওয়া পর্যন্ত কাউকে কোন দায়িত্ব না দিতে অফিস প্রধানকে চাপ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে কিং হাফিজ প্রায়শই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অফিসে উপস্থিত থাকেন এবং সহকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। বিষয়গুলো নিয়ে ইউনিয়ন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একাধিকবার তাদেরকে সতর্ক করলেও কোন পাত্তা দেয়নি।
যদিও হাফিজুর রহমান বিএনপির কোনো সাংগঠনিক পদে নেই, তবুও রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে তিনি নিজেকে একজন কেন্দ্রীয় নেতার মর্যাদায় উপস্থাপন করেন এবং এই পরিচয়ের জোরে দাপ্তরিক নিয়ম ভঙ্গসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের মাঝে এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অন্যান্য জোনগুলোর একই চিত্র যা পরবর্তী রিপোর্টে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা সচিব মোঃ মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিশিষ্ট নাগরিকদের মতে শ্রমিক ইউনিয়নের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ঢাকা ওয়সায় কিছু অসৎ কর্মচারীরা দুর্নীতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত করা উচিত বলে মনে করেন।
ঢাকা ওয়াসার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এমন ব্যক্তি কর্তৃক নিয়ম লঙ্ঘন, ঘুষ বাণিজ্য ও কর্মচারীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে করে প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায় এবং জনসেবামূলক কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হয়।