
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
তিস্তার পানি কমলেও ভোগান্তি কমেনি বানভাসি মানুষের । লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি। তাদের সীমাহীন দুর্ভোগের পাশাপাশি গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছেন মানুষজন। বন্ধ রয়েছে কয়েকটি বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রমও। এ ছাড়া পানি কমার পর দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এতে নদীতীরবর্তী এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এতে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে গতকাল বুধবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করে। বিকেল ৩টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কমে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই পয়েন্টে সন্ধ্যা ৬টা থেকে পানিপ্রবাহ অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে রাতে পানি বাড়ার আশঙ্কা করছে তিস্তাবাসী।
এদিকে গত মঙ্গলবার রাত থেকে হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোয় দেখা দিয়েছে বন্যা। আকস্মিক বন্যায় হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, গড্ডিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোর ১৫টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পরে পানি কিছুটা কমে গেলেও এখনো প্রায় ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
বসতবাড়িতে পানি ওঠে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন ওসব এলাকার মানুষ। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে রাস্তাঘাটও। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় রাস্তায় চুলা জ্বালিয়ে কেউ করছেন রান্নার কাজ, আবার কেউ ওই রাস্তার ধারে একচালা ঘর করে গরু ছাগল নিয়ে একই ঘরে বিছানা পেতেছেন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। তবে আজ (গতকাল) সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে।
জেলার ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি উঠেছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষেও পানি প্রবেশ করেছে। এ কারণে বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী আসতে পারেনি। জেলা সদরে ৬টি ও আদিতমারী উপজেলায় ৬টি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের স্কুলে না আসার পরামর্শ দেন শিক্ষকরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিটন দাস বলেন, যে সব বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য ওইসব স্কুল ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বন্যার পানি নেমে যাওয়া পর্যন্ত পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, বন্যার্তদের সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র। তালিকা করা হচ্ছে বন্যার্তদের। খুব তারাতাড়ি বন্যার্তদের সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে।