
সৌরভ মাহমুদ হারুন
টানা দুদিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি হঠাৎ বেড়েই চলছে। গোমতীনদী আবারও গত বছরের মত চোখ রাঙাচ্ছে, এতে মানুষ আবারও ভয়ভীতিস্থ অবস্থায় রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গোমতীর চরে বস বাসরত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে এখনো পানি বিপদসীমার প্রায় ১০ ফুট (আড়াই মিটার) নিচে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি দ্রুত বেড়ে চলার ফলে কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া সহ গোমতীনদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে গত বছরের মত বন্যার আন্তক বিরাজ করছে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খাঁন মোহাম্মদ ওয়ালী উজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। কুমিল্লায় এত পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল না। উজান, অর্থাৎ ভারতের অংশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় গোমতী নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ থেকে ৫ মিটার বেড়েছে। উজানের পানি আমাদের এখানে পৌঁছাতে প্রায় ১৮ ঘণ্টা সময় লাগে। বিকেল নাগাদ গোমতীর পানির সর্বশেষ পরিস্থিতি স্পষ্ট হবে।’
বুধবার বিকেল ৩টায় গোমতী নদীর বুড়িচং, কামার খাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার ও বুড়বুড়িয়া (গত বছর নদীর বাঁধ ভেঙ্গে বম্যার সৃষ্টি হয়), ব্রাহ্মণপাড়ার মনোহরপুর, রামনগত, মালাপাড় কংশনগরব, আদর্শ সদর, টিক্কার চর, চানপুর ব্রিজ ও সংরাইশ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু স্থানে চরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।
সংরাইশ এলাকার বাসিন্দা নূরে আলম বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পানি ঘরের একদম কাছাকাছি চলে এসেছে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। গত বছর বন্যায় আমাদের ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছিল। এলাকার লোকজন মিলে আমাদের নতুন ঘর তুলে দিয়েছিল। আবার যদি ঘর ভেসে যায়, তাহলে আমাদের পথে পথে থাকতে হবে।’
টিক্কার চর এলাকার পারভেজ আলম জানান, ‘গতকাল বিকেলেও এত পানি ছিল না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পানি অনেক বেড়েছে। এভাবে বাড়তে থাকলে বিকেলের মধ্যে পানি বিপদসীমার ওপরে চলে যেতে পারে।’
এ বিষয়ে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভির আহমেদ বলেন, ‘গোমতীর পানি এখনো বিপদসীমার আড়াই মিটার নিচে আছে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে পানি না এলে পরিস্থিতি তেমন খারাপ হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘গোমতীর চরে বস বাসরত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকা বেলায় প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। হঠাৎ পানি এভাবে বাড়বে, তা আমরা আগে বুঝতে পারিনি। আমরা সরেজমিনে গোমতীর পাড় ঘুরে দেখছি।’