ঢাকা ০১:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ইচ্ছে পূরণ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ Logo বিএনপি নেতা ফেরদৌস আলম মৃধা নিজস্ব অর্থায়নের বলদী গ্রামের বেহাল রাস্তা গুলো পূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেন Logo সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণ করে সিআইপি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া জসিম উদ্দিনকে সংবর্ধনা Logo মুরাদনগরে খামারগ্রাম প্রবাসী সংগঠনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দোয়া মাহফিল Logo বুড়িচং বাকশীমূল স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত Logo খুলনায় যুবককে গুলি করে হত্যার চেষ্টা Logo সিলেট জেলা যুবদলের নেতা আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ Logo ফুলবাড়ীতে প্রি-পেইড মিটার বন্ধের দাবি Logo বরুড়ার দলুয়া তুলাগাও দাখিল মাদ্রাসার ৫৪ তম বার্ষিক বড় খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত Logo ফুলবাড়ীতে কানাহার ডাঙ্গা ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

ধর্ম ও বিজ্ঞানঃ সিয়াম স্রষ্টার সার্বজনীন বিধান

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ও অশ্লীল কাজ সহ সকাল প্রকার নৈতিবাচক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখার মাধ্যমে সিয়াম পালিত হয়। সিয়াম সংযম শিক্ষার প্রাকটিক্যাল অনুশীলন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংযমশীলতা অর্জন সিয়ামের মূল লক্ষ্য। বিশ্বব্যাপী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানবজাতির উপর সিয়াম অপরিহার্য কর্তব্যরূপে পরিগণিত হয়েছে।
পবিত্র আল-কোরআন সুরা বাকারার ১৮৩ থেকে ১৮৯ পর্যন্ত সিয়াম সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়। পর্যায়ক্রমে ঐসমস্ত আয়াতের মুল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আল বাকারা আয়াত ১৮৩ এর ব্যাখ্যা
“হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমাদের পূর্ববতী লোকদের ন্যায় তোমাদের উপরও সিয়ামকে অপরিহার্য কর্তব্য রূপে নির্ধারণ করা হল যেন তোমরা সংযমশীল হতে পারো”-
ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মে সিয়ামের বিধানঃ
সিয়াম পালনের আবশ্যকতা প্রায় সকল ধর্মীয় বিধানে লিপিবদ্ধ ও অপরিহার্য কর্তব্য রূপে পরিগণিত, প্রত্যেক ধর্মানুসারীগণ তাদের নিজস্ব রীতি নীতি অনুযায়ী সিয়াম বা উপোস পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রোজা বা উপোস ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্রষ্টার নৈকট্য লাভ ও পরকালীন পুরষ্কার প্রাপ্তির প্রত্যাশায় অধিকাংশ মানুষ উপোবাস করে থাকে। আল্লাহ, ঈশ্বর, ভগবান ও বিভিন্ন দেবদেবীর সন্তষ্টি লাভের উদ্যেশে স্হান ভেদে উপোবাস পালনের পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আব্রাহামিক ধর্ম অনুসারীদের অধিকাংশ মানুষ বছরের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন রোজা বা উপোবাস পালন করে থাকে। রোজা আত্মশুদ্ধি, অংশ্লীলতা পরিহার, মানবিক শিক্ষা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সৎকর্মশীলতা ও সংযমশীলতার শিক্ষা দেয়।
যে সমস্ত ধর্মে উপোবাস পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধর্মগুলি হল-
ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম, বাহাই ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, জৈন ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, শিখ ধর্ম, তাওবাদ ইত্যাদি (সুত্র: উইকিপিডিয়া)
ইসলাম ধর্ম:
ভোর রাত্রি থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। রমজান মাসের শুরু থেকে শেষ অবধি সকল পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ মুসলিম নরনারীর রোজা পালন অপরিহার্য কর্তব্য রূপে নির্ধারণ করা হয়েছে।
খ্রিস্টান ধর্ম: খ্রিষ্টান ধর্মে ঈশ্বরের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ও বিশ্বাস প্রকাশে পানাহার থেকে বিরত থাকাকে উপবাস বলে। প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে অনুসরন করে ৪০ দিন উপবাস পালন করার রীতি প্রচলিত আছে।
প্রভু যীশুও ঈশ্বরের বানী প্রচারের কাজ শুরু করার আগে চল্লিশ দিন পর্যন্ত উপবাস থেকেছেন।
“তখন যীশু, দিয়াবল দ্বারা পরীক্ষিত হইবার জন্য, আত্মা দ্বারা প্রান্তরে নীত হইলেন। আর তিনি চল্লিশ দিবারাত্র অনাহারে থাকিয়া শেষে ক্ষুধিত হইলেন। তখন পরীক্ষক নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে বল, যেন এই পাথরগুলি রুটি হইয়া যায়। কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, লেখা আছে, ‘‘মনুষ্য কেবল রুটিতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।“ তথ্য সুত্র: মথি ৪ অধ্যায় : ১ থেকে ৪ পদ।
“যখন তোমরা উপবাস কর, তখন ভণ্ডদের মতো মুখ শুকনো করে রেখো না৷ তারা যে উপবাস করেছে তা লোকেদের দেখাবার জন্য, তারা মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়ায়৷ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে৷ কিন্তু তুমি যখন উপবাস করবে, তোমার মাথায় তেল দিও আর মুখ ধুয়ো৷ যেন অন্য লোকে জানতে না পারে যে তুমি উপবাস করছ৷ তাহলে তোমার পিতা ঈশ্বর, যাঁকে তুমি চোখে দেখতে পাচ্ছ না, তিনি দেখবেন৷ তোমার পিতা ঈশ্বর যিনি গোপন বিষয়ও দেখতে পান, তিনি তোমায় পুরস্কার দেবেন।
তথ্য সুত্র: ৬ অধ্যায়: ১৬ থেকে ১৮ পদ
ইহুদি ধর্ম: খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকে উপবাস পালন করে। ইহুদি সম্প্রদায়ের অনুসারীগণ বছরে ছয়দিন রোজা রাখার বিধান পুন্খানুপূন্খরূপে পালন করে থাকে। ইয়াম কিপ্পুর হচ্ছে ইহুদি বর্ষপঞ্জিকার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন সকল পূর্ণবয়স্ক নারী পুরুষ উপবাস পালন করে থাকে।
হিন্দু ধর্ম: হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী অনুসারীগণ মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিন উপবাস পালন করে থাকে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো একাদশী। বিভিন্ন দেবতার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে সপ্তাহের বিভিন্ন দিন উপবাস পালন করার রীতি প্রচলিত।
(চলমান)
লেখক-
মোঃ ওবায়েদ উল্যাহ
বিএসসি (অনার্স) এম এসসি, রসায়ন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইচ্ছে পূরণ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

SBN

SBN

ধর্ম ও বিজ্ঞানঃ সিয়াম স্রষ্টার সার্বজনীন বিধান

আপডেট সময় ১০:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ও অশ্লীল কাজ সহ সকাল প্রকার নৈতিবাচক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখার মাধ্যমে সিয়াম পালিত হয়। সিয়াম সংযম শিক্ষার প্রাকটিক্যাল অনুশীলন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংযমশীলতা অর্জন সিয়ামের মূল লক্ষ্য। বিশ্বব্যাপী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানবজাতির উপর সিয়াম অপরিহার্য কর্তব্যরূপে পরিগণিত হয়েছে।
পবিত্র আল-কোরআন সুরা বাকারার ১৮৩ থেকে ১৮৯ পর্যন্ত সিয়াম সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়। পর্যায়ক্রমে ঐসমস্ত আয়াতের মুল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আল বাকারা আয়াত ১৮৩ এর ব্যাখ্যা
“হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমাদের পূর্ববতী লোকদের ন্যায় তোমাদের উপরও সিয়ামকে অপরিহার্য কর্তব্য রূপে নির্ধারণ করা হল যেন তোমরা সংযমশীল হতে পারো”-
ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মে সিয়ামের বিধানঃ
সিয়াম পালনের আবশ্যকতা প্রায় সকল ধর্মীয় বিধানে লিপিবদ্ধ ও অপরিহার্য কর্তব্য রূপে পরিগণিত, প্রত্যেক ধর্মানুসারীগণ তাদের নিজস্ব রীতি নীতি অনুযায়ী সিয়াম বা উপোস পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রোজা বা উপোস ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্রষ্টার নৈকট্য লাভ ও পরকালীন পুরষ্কার প্রাপ্তির প্রত্যাশায় অধিকাংশ মানুষ উপোবাস করে থাকে। আল্লাহ, ঈশ্বর, ভগবান ও বিভিন্ন দেবদেবীর সন্তষ্টি লাভের উদ্যেশে স্হান ভেদে উপোবাস পালনের পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আব্রাহামিক ধর্ম অনুসারীদের অধিকাংশ মানুষ বছরের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন রোজা বা উপোবাস পালন করে থাকে। রোজা আত্মশুদ্ধি, অংশ্লীলতা পরিহার, মানবিক শিক্ষা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সৎকর্মশীলতা ও সংযমশীলতার শিক্ষা দেয়।
যে সমস্ত ধর্মে উপোবাস পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধর্মগুলি হল-
ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম, বাহাই ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, জৈন ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, শিখ ধর্ম, তাওবাদ ইত্যাদি (সুত্র: উইকিপিডিয়া)
ইসলাম ধর্ম:
ভোর রাত্রি থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। রমজান মাসের শুরু থেকে শেষ অবধি সকল পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ মুসলিম নরনারীর রোজা পালন অপরিহার্য কর্তব্য রূপে নির্ধারণ করা হয়েছে।
খ্রিস্টান ধর্ম: খ্রিষ্টান ধর্মে ঈশ্বরের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ও বিশ্বাস প্রকাশে পানাহার থেকে বিরত থাকাকে উপবাস বলে। প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে অনুসরন করে ৪০ দিন উপবাস পালন করার রীতি প্রচলিত আছে।
প্রভু যীশুও ঈশ্বরের বানী প্রচারের কাজ শুরু করার আগে চল্লিশ দিন পর্যন্ত উপবাস থেকেছেন।
“তখন যীশু, দিয়াবল দ্বারা পরীক্ষিত হইবার জন্য, আত্মা দ্বারা প্রান্তরে নীত হইলেন। আর তিনি চল্লিশ দিবারাত্র অনাহারে থাকিয়া শেষে ক্ষুধিত হইলেন। তখন পরীক্ষক নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে বল, যেন এই পাথরগুলি রুটি হইয়া যায়। কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, লেখা আছে, ‘‘মনুষ্য কেবল রুটিতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।“ তথ্য সুত্র: মথি ৪ অধ্যায় : ১ থেকে ৪ পদ।
“যখন তোমরা উপবাস কর, তখন ভণ্ডদের মতো মুখ শুকনো করে রেখো না৷ তারা যে উপবাস করেছে তা লোকেদের দেখাবার জন্য, তারা মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়ায়৷ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে৷ কিন্তু তুমি যখন উপবাস করবে, তোমার মাথায় তেল দিও আর মুখ ধুয়ো৷ যেন অন্য লোকে জানতে না পারে যে তুমি উপবাস করছ৷ তাহলে তোমার পিতা ঈশ্বর, যাঁকে তুমি চোখে দেখতে পাচ্ছ না, তিনি দেখবেন৷ তোমার পিতা ঈশ্বর যিনি গোপন বিষয়ও দেখতে পান, তিনি তোমায় পুরস্কার দেবেন।
তথ্য সুত্র: ৬ অধ্যায়: ১৬ থেকে ১৮ পদ
ইহুদি ধর্ম: খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকে উপবাস পালন করে। ইহুদি সম্প্রদায়ের অনুসারীগণ বছরে ছয়দিন রোজা রাখার বিধান পুন্খানুপূন্খরূপে পালন করে থাকে। ইয়াম কিপ্পুর হচ্ছে ইহুদি বর্ষপঞ্জিকার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন সকল পূর্ণবয়স্ক নারী পুরুষ উপবাস পালন করে থাকে।
হিন্দু ধর্ম: হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী অনুসারীগণ মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিন উপবাস পালন করে থাকে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো একাদশী। বিভিন্ন দেবতার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে সপ্তাহের বিভিন্ন দিন উপবাস পালন করার রীতি প্রচলিত।
(চলমান)
লেখক-
মোঃ ওবায়েদ উল্যাহ
বিএসসি (অনার্স) এম এসসি, রসায়ন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।