ঢাকা ১০:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় প্রতিবন্ধীর জমি আত্মসাতে নারী-ছেলেকে মারধরের অভিযোগ

মো: রায়হান আলী, নওগাঁ

নওগাঁর রাণীনগরে জমি আত্মসাত ও দখলকে কেন্দ্র করে মোছাঃ রেশমা বিবি (৪০) ও তার ছেলে রিমন হোসেন (১৭) মারধরের শিকার হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তারা বর্তমানে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনার একটি ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে, যেখানে দেখা যায় রেশমা বিবিকে মাটিতে ফেলে কয়েকজন ব্যক্তি এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করছে। স্থানীয়রা বলছেন, ভিডিওতে যে নির্যাতনের দৃশ্য ধরা পড়েছে, তা নারী নির্যাতনের শামিল।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রেশমার স্বামী মোঃ আব্দুস সালাম মানসিক প্রতিবন্ধী। তার নামে গুয়াতা মৌজায় প্রায় ৮ শতাংশ জমি রয়েছে। ২০২৪ সালে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি মোঃ ছামছুজ্জামান প্রাং মাত্র ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় জমিটি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেন, যদিও জমিটির প্রকৃত বাজারমূল্য ছিল প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ছামছুজ্জামান জমিটি স্থানীয় আরেক ব্যক্তি মোঃ রিপনের কাছে হস্তান্তর করেন। এতে প্রতারিত হয়ে ভুক্তভোগী পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করেন।

২০২৪ সালের নভেম্বরে রেশমা বিবি নওগাঁ সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, জমি দখলের পর ছামছুজ্জামান তার সহযোগী সাজ্জাকুলের বাড়িতে আব্দুস সালামকে আটকে রাখে। সাজ্জাকুল তাকে ফোনে কুপ্রস্তাব দিয়ে জানায়, প্রস্তাবে রাজি হলে স্বামীকে বাড়ি ফেরত দেওয়া হবে, অন্যথায় তাকে আটকে রাখা হবে। রেশমা এতে সাড়া না দেওয়ায় তার ওপর একাধিকবার হুমকি আসে।

সবশেষে গত ১৬ আগস্ট সকালে ছামছুজ্জামান ও তার সহযোগী এনামুল হক জোরপূর্বক ওই জমিতে ধান রোপণের চেষ্টা করে। এ সময় রেশমা বাধা দিলে ছামছুজ্জামান তার চুল ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর এনামুলসহ কয়েকজন এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে ছামছুজ্জামানের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে রেশমা গুরুতর জখম হন। চিকিৎসকরা তার মাথায় ছয়টি সেলাই দেন। মাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে ছেলে রিমনকেও মারধর করা হয়, এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিলাফোলা ও রক্তাক্ত জখম হয়।

চিৎকার শুনে স্থানীয়রা মা–ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকে প্রকাশ্যে সাক্ষ্য দিতে সাহস পাচ্ছেন না। রেশমা বিবি অভিযোগ করে বলেন, “আমার স্বামী মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তারা সুযোগ নিয়ে জমি আত্মসাত করেছে। এখন আবার সেই জমি দখল করতে এসে আমাকে ও আমার ছেলেকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমি সেনা ক্যাম্প ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি ন্যায়বিচার চাই।”

প্রকাশ্যে এমন হামলার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, অভিযুক্তরা এলাকায় চিহ্নিত দাঙ্গাবাজ। তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।
ইতোমধ্যে রেশমা বিবি সেনা ক্যাম্প ও রাণীনগর থানায় পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাফিজ মোঃ রায়হান বলেন, “উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধের ঘটনায় আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নওগাঁয় প্রতিবন্ধীর জমি আত্মসাতে নারী-ছেলেকে মারধরের অভিযোগ

আপডেট সময় ০৮:২৯:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

মো: রায়হান আলী, নওগাঁ

নওগাঁর রাণীনগরে জমি আত্মসাত ও দখলকে কেন্দ্র করে মোছাঃ রেশমা বিবি (৪০) ও তার ছেলে রিমন হোসেন (১৭) মারধরের শিকার হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তারা বর্তমানে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনার একটি ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে, যেখানে দেখা যায় রেশমা বিবিকে মাটিতে ফেলে কয়েকজন ব্যক্তি এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করছে। স্থানীয়রা বলছেন, ভিডিওতে যে নির্যাতনের দৃশ্য ধরা পড়েছে, তা নারী নির্যাতনের শামিল।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রেশমার স্বামী মোঃ আব্দুস সালাম মানসিক প্রতিবন্ধী। তার নামে গুয়াতা মৌজায় প্রায় ৮ শতাংশ জমি রয়েছে। ২০২৪ সালে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি মোঃ ছামছুজ্জামান প্রাং মাত্র ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় জমিটি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেন, যদিও জমিটির প্রকৃত বাজারমূল্য ছিল প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ছামছুজ্জামান জমিটি স্থানীয় আরেক ব্যক্তি মোঃ রিপনের কাছে হস্তান্তর করেন। এতে প্রতারিত হয়ে ভুক্তভোগী পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করেন।

২০২৪ সালের নভেম্বরে রেশমা বিবি নওগাঁ সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, জমি দখলের পর ছামছুজ্জামান তার সহযোগী সাজ্জাকুলের বাড়িতে আব্দুস সালামকে আটকে রাখে। সাজ্জাকুল তাকে ফোনে কুপ্রস্তাব দিয়ে জানায়, প্রস্তাবে রাজি হলে স্বামীকে বাড়ি ফেরত দেওয়া হবে, অন্যথায় তাকে আটকে রাখা হবে। রেশমা এতে সাড়া না দেওয়ায় তার ওপর একাধিকবার হুমকি আসে।

সবশেষে গত ১৬ আগস্ট সকালে ছামছুজ্জামান ও তার সহযোগী এনামুল হক জোরপূর্বক ওই জমিতে ধান রোপণের চেষ্টা করে। এ সময় রেশমা বাধা দিলে ছামছুজ্জামান তার চুল ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর এনামুলসহ কয়েকজন এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে ছামছুজ্জামানের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে রেশমা গুরুতর জখম হন। চিকিৎসকরা তার মাথায় ছয়টি সেলাই দেন। মাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে ছেলে রিমনকেও মারধর করা হয়, এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিলাফোলা ও রক্তাক্ত জখম হয়।

চিৎকার শুনে স্থানীয়রা মা–ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকে প্রকাশ্যে সাক্ষ্য দিতে সাহস পাচ্ছেন না। রেশমা বিবি অভিযোগ করে বলেন, “আমার স্বামী মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তারা সুযোগ নিয়ে জমি আত্মসাত করেছে। এখন আবার সেই জমি দখল করতে এসে আমাকে ও আমার ছেলেকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমি সেনা ক্যাম্প ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি ন্যায়বিচার চাই।”

প্রকাশ্যে এমন হামলার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, অভিযুক্তরা এলাকায় চিহ্নিত দাঙ্গাবাজ। তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।
ইতোমধ্যে রেশমা বিবি সেনা ক্যাম্প ও রাণীনগর থানায় পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাফিজ মোঃ রায়হান বলেন, “উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধের ঘটনায় আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”