ঢাকা ০৪:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নয়াদিল্লিতে জয়শঙ্কর-ওয়াং ই বৈঠক: সম্পর্ক উন্নতির পথে ভারত-চীন

  • আন্তর্জাতিক:
  • আপডেট সময় ০৮:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই স্থানীয় সময় গত ১৮ই আগস্ট সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে বৈঠক করেছেন।

ওয়াং ই বলেন, বর্তমান বিশ্বে শতবর্ষব্যাপী পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে, একতরফা দাদাগিরি ও শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, মুক্ত বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০তম বার্ষিকীতে, মানবজাতি তার ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ২৮০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা নিয়ে চীন ও ভারত বিশ্বের দুটি বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বৈশ্বিক দায়িত্ব পালন করে সমস্ত উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করতে পারে এবং বিশ্বের বহুমেরুকরণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণে অবদান রাখতে পারে।

ওয়াং ই উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাজানে সফল সাক্ষাৎ চীন-ভারত সম্পর্কের নতুন সূচনা করেছে। উভয়পক্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে অর্জিত ঐকমত্য বাস্তবায়ন করছে, বিভিন্ন স্তরের সংলাপ পুনরায় শুরু হয়েছে, সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি বজায় রয়েছে, ভারতীয় তীর্থযাত্রীরা পুনরায় তিব্বতের পবিত্র পর্বত ও হ্রদে যাত্রা করতে পারছেন, চীন-ভারত সম্পর্ক সহযোগিতার মূলস্রোতে ফিরে আসার ইতিবাচক প্রবণতা দেখাচ্ছে।
ওয়াং ই আরো বলেন, এ বছর চীন-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী। উভয়পক্ষকে এই ৭৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা গভীরভাবে আত্মস্থ করতে হবে, সঠিক কৌশলগত উপলব্ধি গড়ে তুলতে হবে, একে অপরকে অংশীদার ও সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে—প্রতিপক্ষ বা হুমকি হিসেবে নয়। আমাদের মূল্যবান সম্পদ উভয় দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নিয়োজিত করতে হবে, যাতে প্রতিবেশী দুই বৃহৎ শক্তি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, যৌথ উন্নয়ন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে উভয়ের জয়লাভের পথ খুঁজে পায়।

ওয়াং ই জোর দিয়ে বলেন, চীন আন্তরিকতা, সদিচ্ছা, পারস্পরিক সুবিধা ও অন্তর্ভুক্তিমূলকতার নীতিতে বিশ্বাসী এবং ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, সৌন্দর্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ‘পাঁচটি বড় বাড়ি’ গড়ে তুলতে চায়। চীন ও ভারত উভয়পক্ষকে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় করতে হবে, একে অপরের দিকে অগ্রসর হতে হবে, সকল বাধা অতিক্রম করে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করতে হবে, চীন-ভারত সম্পর্কের উন্নয়নের গতিশীলতা সুদৃঢ় করতে হবে। এভাবে দুই মহান প্রাচ্য সভ্যতার পুনরুত্থান প্রক্রিয়া পরস্পরকে সহায়তা ও পরিপূর্ণ করবে, যা এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্বের জন্য সর্বাধিক প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা ও নিশ্চয়তা প্রদান করবে।

এস জয়শঙ্কর বলেন, দুই নেতার নির্দেশনায় ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নতির পথে এগোচ্ছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা স্বাভাবিক হচ্ছে। তিনি তিব্বতে ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের সুবিধা প্রদানের জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান। ভারত ও চীনের পরস্পরের কৌশলগত উপলব্ধি উন্নত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, দুটি বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারত ও চীন বহুপাক্ষিকতাবাদে বিশ্বাসী এবং বিশ্বের বহুমেরুকরণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করছে। তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতীয় পক্ষ দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে চীনের সাথে রাজনৈতিক আস্থা গভীরতর করতে, অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সুবিধাপ্রদ সহযোগিতা জোরদার করতে, সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি করতে এবং সীমান্ত অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় একত্রে কাজ করতে আগ্রহী। ভারতীয় পক্ষ চীন কর্তৃক সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার থিয়ানচিন শীর্ষ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের পূর্ণ সমর্থন জানায় এবং ব্রিক্সসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক কাঠামোয় চীনের সাথে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক।
উভয়পক্ষ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যু নিয়েও মতবিনিময় করেছে।

সূত্র: স্বর্ণা-হাশিম-লিলি,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

নয়াদিল্লিতে জয়শঙ্কর-ওয়াং ই বৈঠক: সম্পর্ক উন্নতির পথে ভারত-চীন

আপডেট সময় ০৮:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই স্থানীয় সময় গত ১৮ই আগস্ট সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে বৈঠক করেছেন।

ওয়াং ই বলেন, বর্তমান বিশ্বে শতবর্ষব্যাপী পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে, একতরফা দাদাগিরি ও শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, মুক্ত বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০তম বার্ষিকীতে, মানবজাতি তার ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ২৮০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা নিয়ে চীন ও ভারত বিশ্বের দুটি বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বৈশ্বিক দায়িত্ব পালন করে সমস্ত উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করতে পারে এবং বিশ্বের বহুমেরুকরণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণে অবদান রাখতে পারে।

ওয়াং ই উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাজানে সফল সাক্ষাৎ চীন-ভারত সম্পর্কের নতুন সূচনা করেছে। উভয়পক্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে অর্জিত ঐকমত্য বাস্তবায়ন করছে, বিভিন্ন স্তরের সংলাপ পুনরায় শুরু হয়েছে, সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি বজায় রয়েছে, ভারতীয় তীর্থযাত্রীরা পুনরায় তিব্বতের পবিত্র পর্বত ও হ্রদে যাত্রা করতে পারছেন, চীন-ভারত সম্পর্ক সহযোগিতার মূলস্রোতে ফিরে আসার ইতিবাচক প্রবণতা দেখাচ্ছে।
ওয়াং ই আরো বলেন, এ বছর চীন-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী। উভয়পক্ষকে এই ৭৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা গভীরভাবে আত্মস্থ করতে হবে, সঠিক কৌশলগত উপলব্ধি গড়ে তুলতে হবে, একে অপরকে অংশীদার ও সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে—প্রতিপক্ষ বা হুমকি হিসেবে নয়। আমাদের মূল্যবান সম্পদ উভয় দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নিয়োজিত করতে হবে, যাতে প্রতিবেশী দুই বৃহৎ শক্তি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, যৌথ উন্নয়ন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে উভয়ের জয়লাভের পথ খুঁজে পায়।

ওয়াং ই জোর দিয়ে বলেন, চীন আন্তরিকতা, সদিচ্ছা, পারস্পরিক সুবিধা ও অন্তর্ভুক্তিমূলকতার নীতিতে বিশ্বাসী এবং ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, সৌন্দর্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ‘পাঁচটি বড় বাড়ি’ গড়ে তুলতে চায়। চীন ও ভারত উভয়পক্ষকে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় করতে হবে, একে অপরের দিকে অগ্রসর হতে হবে, সকল বাধা অতিক্রম করে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করতে হবে, চীন-ভারত সম্পর্কের উন্নয়নের গতিশীলতা সুদৃঢ় করতে হবে। এভাবে দুই মহান প্রাচ্য সভ্যতার পুনরুত্থান প্রক্রিয়া পরস্পরকে সহায়তা ও পরিপূর্ণ করবে, যা এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্বের জন্য সর্বাধিক প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা ও নিশ্চয়তা প্রদান করবে।

এস জয়শঙ্কর বলেন, দুই নেতার নির্দেশনায় ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নতির পথে এগোচ্ছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা স্বাভাবিক হচ্ছে। তিনি তিব্বতে ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের সুবিধা প্রদানের জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান। ভারত ও চীনের পরস্পরের কৌশলগত উপলব্ধি উন্নত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, দুটি বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারত ও চীন বহুপাক্ষিকতাবাদে বিশ্বাসী এবং বিশ্বের বহুমেরুকরণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করছে। তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতীয় পক্ষ দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে চীনের সাথে রাজনৈতিক আস্থা গভীরতর করতে, অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সুবিধাপ্রদ সহযোগিতা জোরদার করতে, সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি করতে এবং সীমান্ত অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় একত্রে কাজ করতে আগ্রহী। ভারতীয় পক্ষ চীন কর্তৃক সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার থিয়ানচিন শীর্ষ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের পূর্ণ সমর্থন জানায় এবং ব্রিক্সসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক কাঠামোয় চীনের সাথে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক।
উভয়পক্ষ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যু নিয়েও মতবিনিময় করেছে।

সূত্র: স্বর্ণা-হাশিম-লিলি,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।