ঢাকা ১১:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষিত না হওয়ায় অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক: বৃহত্তর সুন্নী জোট

মোঃ ইলিয়াছ আহমদ, বিশেষ প্রতিনিধি

নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো ঘোষণা না হওয়ায় অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বৃহত্তর সুন্নী জোট। আজ সোমবার (৩ নভেম্বর ২০২৫) সকাল ১১টায় ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুরুল হক হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জোট নেতৃবৃন্দ এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব অধ্যক্ষ স. উ. ম. আবদুস সামাদ। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা দিয়েছিল যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা না করায় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

বক্তারা বলেন, গত দেড় দশকের জাতীয় নির্বাচনগুলো ছিল বিতর্কিত, জনগণ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। প্রশাসনে অতীতের পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে—রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, বিনা বিচারে হত্যা, মব সহিংসতা ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

জোট নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ১৫ মাস অতিক্রান্ত হলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিচারব্যবস্থায় অবৈধ হস্তক্ষেপ, সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তাহীনতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে—শিল্পকারখানা বন্ধ, বেকারত্ব বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানি শ্লথতা, ডলার সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে বলে তারা মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর সুন্নী জোটের ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
১. নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন।
২. জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের আয়োজন।
৩. রাষ্ট্রীয় বৈঠকে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
৪. নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা।
৫. দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক ও দণ্ডিতদের অযোগ্য ঘোষণা।
৬. জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা।
৭. পার্বত্য জেলায় বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ।
৮. চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল।
৯. আরাকান আর্মিকে করিডোর না দেয়া।
১০. মাজার, খানকা, দরবার শরীফ ও ধর্মীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১১. মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ।
১২. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১৩. নির্বাচনকালীন প্রশাসন দলনিরপেক্ষভাবে পুনর্গঠন করা।

জোট তাদের দাবির পক্ষে জনমত গঠনে মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে—

১৫ নভেম্বর ২০২৫: চট্টগ্রামে বিশাল জনসভা

২৯ নভেম্বর ২০২৫: কুমিল্লায় জনসভা

৩০ নভেম্বর ২০২৫: হবিগঞ্জে জনসভা

৩ ডিসেম্বর ২০২৫: নারায়ণগঞ্জে জনসভা

২০ ডিসেম্বর ২০২৫: ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ফ্রন্টের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এম ইবরাহীম আখতারী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাওলানা আশেকুর রহমান হাশেমী, মাওলানা রুহুল আমিন ভূঁইয়া চাঁদপুরী, আল্লামা মোশাররফ হোসেন হেলালী, এডভোকেট ইকবাল হাসান, ঢালি কামরুজ্জামান হারুন, মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম, মোহাম্মদ ইব্রাহীম মিয়া, ডা. অধ্যক্ষ এস এম সরওয়ার, এস এম তারেক হোসাইন, অধ্যক্ষ আবু নাসের মোহাম্মদ ও এস এম বারী মুসাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষিত না হওয়ায় অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক: বৃহত্তর সুন্নী জোট

আপডেট সময় ০৫:১০:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

মোঃ ইলিয়াছ আহমদ, বিশেষ প্রতিনিধি

নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো ঘোষণা না হওয়ায় অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বৃহত্তর সুন্নী জোট। আজ সোমবার (৩ নভেম্বর ২০২৫) সকাল ১১টায় ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুরুল হক হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জোট নেতৃবৃন্দ এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব অধ্যক্ষ স. উ. ম. আবদুস সামাদ। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা দিয়েছিল যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা না করায় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

বক্তারা বলেন, গত দেড় দশকের জাতীয় নির্বাচনগুলো ছিল বিতর্কিত, জনগণ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। প্রশাসনে অতীতের পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে—রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, বিনা বিচারে হত্যা, মব সহিংসতা ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

জোট নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ১৫ মাস অতিক্রান্ত হলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিচারব্যবস্থায় অবৈধ হস্তক্ষেপ, সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তাহীনতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে—শিল্পকারখানা বন্ধ, বেকারত্ব বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানি শ্লথতা, ডলার সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে বলে তারা মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর সুন্নী জোটের ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
১. নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন।
২. জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের আয়োজন।
৩. রাষ্ট্রীয় বৈঠকে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
৪. নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা।
৫. দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক ও দণ্ডিতদের অযোগ্য ঘোষণা।
৬. জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা।
৭. পার্বত্য জেলায় বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ।
৮. চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল।
৯. আরাকান আর্মিকে করিডোর না দেয়া।
১০. মাজার, খানকা, দরবার শরীফ ও ধর্মীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১১. মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ।
১২. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১৩. নির্বাচনকালীন প্রশাসন দলনিরপেক্ষভাবে পুনর্গঠন করা।

জোট তাদের দাবির পক্ষে জনমত গঠনে মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে—

১৫ নভেম্বর ২০২৫: চট্টগ্রামে বিশাল জনসভা

২৯ নভেম্বর ২০২৫: কুমিল্লায় জনসভা

৩০ নভেম্বর ২০২৫: হবিগঞ্জে জনসভা

৩ ডিসেম্বর ২০২৫: নারায়ণগঞ্জে জনসভা

২০ ডিসেম্বর ২০২৫: ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ফ্রন্টের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এম ইবরাহীম আখতারী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাওলানা আশেকুর রহমান হাশেমী, মাওলানা রুহুল আমিন ভূঁইয়া চাঁদপুরী, আল্লামা মোশাররফ হোসেন হেলালী, এডভোকেট ইকবাল হাসান, ঢালি কামরুজ্জামান হারুন, মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম, মোহাম্মদ ইব্রাহীম মিয়া, ডা. অধ্যক্ষ এস এম সরওয়ার, এস এম তারেক হোসাইন, অধ্যক্ষ আবু নাসের মোহাম্মদ ও এস এম বারী মুসাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।