
বাগেরহাট প্রতিনিধি
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ শরণখোলায় সহ ৯উপজেলায় বইয়ের দোকানগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণির নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বই। এসব বই ব্যবসায়ীদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে অভিভাবকের পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গাইড বই ছাড়া সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের বই শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়না। অধিক মূল্যের গাইড বই কিনতে অভিভাবকরা হিমশিম খাচ্ছেন। নির্দ্দিষ্ট বই প্রকাশনী থেকে লাখ লাখ টাকা অনুদান নিয়ে উপজেলার তিনটি শিক্ষক সমিতি ও কয়েকটি লাইব্রেরী মালিক বেআইনীভাবে এই ব্যবসা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, শরণখোলা উপজেলার সরকারী প্র্থামিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা সমূহে শিক্ষার্থীদের গাইড বই পড়ানো হয়। সরকারের দেওয়া বই পড়ানো হয়না।
অধিক মূল্য মানের গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হচ্ছে। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে পাঞ্জেরী প্রকাশনী, অনুপম প্রকাশনী ও লেকচার প্রকাশনীর গাইড এবং মাদ্রাসা সমূহে আলফাতাহ প্রকাশনীর গাইড বই পড়ানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগেরহাটের বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ শরণখোলায়সহ ৯ উপজেলায় বইয়ের দোকানগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণির নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বই। এসব বই ব্যবসায়ীদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে অভিভাবকের পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঞ্জেরী, জুপিটার, গ্যালাক্সি, লেকচার, অনুপম, জননীসহ বিভিন্ন নোট ও গাইড বই বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। শিক্ষাথীদের অভিযোগ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এসব গাইড ও নোট বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন। পুস্তক ব্যবসায়ী এবং পুস্তক প্রকাশনীর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং শিক্ষকদের আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এসব নিষিদ্ধ নোট এবং গাইড কিনতে বাধ্য করছেন।
এজন্য পুস্তক প্রকাশনীর মালিকরা মোটা অঙ্কের ডোনেশন দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোকে ম্যানেজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে অভিভাবকরা বলেন, সরকার বিনামূল্যে বই দিলেও অনেক টাকা দিয়ে আমাদের নোট বইগুলো কিনতে হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন ,প্রাইভেট কোচিং ছাড়া ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা করতে চাচ্ছে না। অর্থের অভাবে প্রাইভেট কোচিং এ পড়াতে না পারায় বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের কিনে দিতে হচ্ছে নোট ও গাইড গুলো।
এদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত নোট ও গাইড বই বিক্রিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় লাইব্রেরীর মালিকেরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে অবাধে প্রতিনিয়তই নোট ও গাইড বই বিক্রি করে আসছে।
জানা গেছে, সরকার ১৯৮০ সালে আইন করে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের নোট বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশনা, আমদানী, বিতরণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া উচ্চ আদালতের এক রায়ে গাইড ও নোট বই মুদ্রণ ও বাজারজাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অপরদিকে, ২০০৮ সালে নির্বাহী এক আদেশে নোট ও গাইড নিষিদ্ধ করা হয় এবং ২০০৯ সালে দেশের সব্বোর্চ আদালতের এক নির্দেশে নোট ও গাইড বই বিক্রয় সম্পুর্ন নিষিদ্ধ করে এক রায় প্রদান করেন। মাধ্যমিক স্তরে শ্রেণীভেদে আড়াই হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে একসেট গাইডবই কিনতে হয়। মাদ্রাসা স্তরে ৯ম থেকে ১০ম শ্রেণীতে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় গাইডবই কিনতে হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩শ থেকে ৯শ টাকায় গাইডবই বিক্রি হয়। উপজেলার খোন্তাকাটা গ্রামের ছাত্র অভিভাবক আঃ খালেক, রাজাপুর গ্রামের সরোয়ার হোসেন, সোনাতলা গ্রামের ছালেহা বেগম বলেন, শিক্ষকরা সরকারী বই না পড়িয়ে গাইডবই কিনতে বাধ্য করছেন। বেশি দাম দিয়ে গাইডবই কিনতে তাদের খুবই কষ্ট হয় বলে ঐ অভিভাবকরা জানান।মোরেলগঞ্জ এলাকার মেসার্স সিয়াম লাইব্রেরির সত্ত্বাধিকারী বলেন, ‘বাগেরহাট পুস্তক ব্যবসায়ীর নেতারা আদালতের এক কাগজ দিয়ে বলে গেছে, নোট গাইড বই বিক্রিতে কোন বাধা নেই। তাই আমরা এসব নোট গাইড বই বিক্রি করছি।মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান,আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই, তবে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারে পাঞ্জেরী প্রকাশনীর এজেন্ট ও ইসলামিয়া লাইব্রেরীর মালিক আকন আলমগীর বলেন, সারাদেশে সহায়ক বই হিসেবে গাইড বিক্রি হয়। এতে মনে হয়,সরকারের অনুমতি আছে। পাঞ্জেরী প্রকাশনীর অপর এজেন্ট হৃদয় লাইব্রেরীর মালিক আঃ রহিম বলেন, গাইডবই ১৯৯০ সাল থেকে নিষিদ্ধ কিন্তু লোকজন চায় তাই আমরা কিনে এনে বিক্রি করে থাকি।
শরণখোলার সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামান ও খাদা গগন মেমোরিয়াল দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ওবায়দুল হক বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে কোন গাইডবই পড়ানো হয়না।
শরণখোলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ধননজয় মন্ডল বলেন, গাইডবই ক্রয় বিক্রয় আইনতঃ নিষিদ্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাইডবই পড়ানোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুদীপ্ত কুমার সিংহ বলেন, গাইডবই বিক্রি ও পড়ানোর কোন নিয়ম নেই। বিষয়টি তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বাগেরহাট পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘পত্রিকায় যদি প্রশ্ন উত্তর দিয়ে সাজেশন নাম দিয়ে ছাপা হয় তাহলে আমরা বিক্রি করলে তাতে দোষ হবে কেন। আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন জানিয়েছি, তার কপি বাগেরহাটের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে দিয়েছি।
মুক্তির লড়াই ডেস্ক : 

























