
নীল নিপুণ
অনব্রত বাগ
নীল পূর্ণিমার রাশি রাশি নীল জল, ফুঁসে উঠেছে বাতাসের নীল,
সমুদ্রের আধারে বিছানো জলে ধরা পড়েছে – হলুদ চাঁদ আজ বহুদিন পর।
জোছনা শিকারির চকচকে চোখে ,
আজ দীর্ঘ অমাবস্যার প্রতিশোধ,
একঝাঁক মৎসকুমারী মেঘের রূপ –
করে চলেছে জলকেলি, কোথাও আপন এক।
সত্যিকারে বলতো কবে দেখেছিলে জোনাকি?
শেষ কবে দেখেছিলে একঝাঁক চড়াই?
শেষ কবে দেখেছিলে রঙিন প্রজাপতির দল?
সত্যিই কি তারা ছিলো?
যেমন তির্যক সূর্য রশ্মি,
অতল জলধি ভেদী সমুদ্র তলদেশ করে চুম্বন –
মুক্ত অভার মতো ঠিকরে পরে,
কিছু আলো পৃথিবীর সাথে করে আলিঙ্গন।
আলো যেনো বুক পেতে নেয় সেই ছলছল নদী, বিভ্রমে সেই নদীর মাছ বাতাসে গা ভাসায়।
পাতার শিরা উপশিরা পায় আলোর আশ্রয়,
তার কিছু ফাঁক গলে মাটিকে স্পর্শ করে আলগোছে।
সেই আলোয় ভেসে ওঠে পৃথিবীর সব রূপ,
ধরণী সাজায় পশরা যেনো তার রূপসী নিশি কন্যা,
জেগে ওঠে সব নদী যেনো মাকড়শা
রূপালী জালের মতো সুবিন্যস্ত প্রকৃতির শিরা উপশিরা।
কিন্তু কোথায় সেই স্রোতস্বিনী? কোথায় তার প্রবাহ?
অশ্রুস্নাত আমরা নতজানু,
তার যে নিদারুণ প্রয়োজন।
আমাদের ভক্তির ক্ষয় বন পোড়ে ,
নদীগুলি আজ শ্বাসরুদ্ধ দমবন্ধ করা বিষ মন্থনে।
বাঁশি হাতে বাঁশিতেই ছড়ায় সন্যাস
একঝাঁক পরিমগ্ন হয় প্রকৃতির নীল জল।
জোৎস্নার ফিনফিনে মসলিনে মুড়ে – সমুদ্র ঢেউয়ে করে ওঠে বিদ্রোহ।
উদ্বাহু মলিন গাছ পত্র পল্লব তৃষ্ণার্থ,
শুষে নিয়ে যায় সেই প্রবাল করবী সমুদ্র
বন বনানীতে অতকিতে প্লাবনের ছোঁয়ায়,
চিত্রা হরিণীর দল ছোট প্রাণপণে।
জোনাকির মতো জ্বলে ওঠে –
জোড়ায় জ্বলে চিতাবাঘের চোখ।
প্রান্তর আজ রাঙে সিঁদুরে,
ধ্বংসলীলার মত্তে,
আদিমের আদিমতায় আজ সে
নিপীড়িত ধর্ষিত।
কিন্তু সে কি থিতু হওয়ার?,
নিপীড়নের পরেও
দিগন্ত হয় শ্যামলী,
ধূসর আঁধারে ধরে সবুজের সমারোহ,
তার পিঠেও কিছু জোছনা খেলে অগোচরে,নির্ভয়ে –
ফুটে ওঠে স্রষ্টার নিপুণ কারুকাজ।
~অনব্রত বাগ
ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ
(প্রাণীবিদ্যা বিভাগ)