
মোঃ বিশাল উদ্দিন, পবা (রাজশাহী)
পবা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়েছে। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারী) মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই বরাবরের মত একুশের প্রথম প্রহরে উপজেলা চত্তরে অবস্থিত শহীদ মিনারে প্রথমে শ্রদ্ধা জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাত আমান আজিজ।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এসময় মাইকে বাজছিল অমর সেই গান ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি। উপজেলা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তখন বেদনাবিধুর এক আবহ তৈরি হয়।
দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারী) সকালে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আলোচনা সভা ও শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল করা হয়েছে। আলোচনা সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাত আমান আজিজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন বাজি রেখে আন্দোলন-সংগ্রামে বুকের রক্ত ঝরিয়েছেন যারা, ফুলেল শ্রদ্ধায় সেই সব বীরদের চিরকাল স্মরণ করবে বাংলাদেশের মানুষশেরা। সেই লক্ষ্যে একুশের শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান ও শান্তিপূর্ণভাবে পালনের লক্ষ্যে একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের স্মৃতির মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে পবা উপজেলা প্রশাসন। জুলাই-অগাস্টে ছাত্র জনতার তুমুল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একুশে ফেব্রুয়ারীতে এবার শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনে রয়েছে সেই অভ্যুত্থানের ছাপ। প্রতি বছর শহীদ মিনার এলাকার দেয়ালে বিভিন্ন গান, কবিতা ও গানের লাইন লেখা হলেও এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে গ্রাফিতি। কোনো কোনো দেয়ালের উপরে ব্যানার বসানো হয়েছে, যেগুলোয় বিভিন্ন গান ও কবিতার লাইন কিংবা নানা গানে একুশকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালির আত্মত্যাগের এ দিন এখন আর বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। বাঙালির ভাষার সংগ্রামের একুশ এখন বিশ্বের সব ভাষাভাষীর অধিকার রক্ষার দিন। সারাদেশে প্রথম প্রহরেই সকল শহীদ মিনারে শুরু হয়েছে শ্রদ্ধা জানানোর পালা, ফুলে-ফুলে ভরে উঠতে শুরু করেছে স্মৃতির মিনার। প্রথম প্রহরের অনুষ্ঠানের পর শুক্রবার দিনব্যাপী উপজেলা চত্তরে অবস্থিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবেন সবাই।
এসময় উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা মোসা. শামসুন্নাহার এর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহিদ হাসান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোতাহার হোসেন, উপজেলা প্রকৌশলী মুকবুল হোসেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডা. সুব্রত কুমার সরকার, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাবিবা খাতুন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসনিম। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মো. সরকার দুলাল মাহবুব সহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের ভিন্ন প্রেক্ষাপটে স্মৃতির মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন। এসময় নওহাটা পৌর বিএনপি’র সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম রফিক এর নেতৃত্বে শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এরপর ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে একে একে শ্রদ্ধা জানান উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা।