
মোঃ বিশাল উদ্দিন পবা, (রাজশাহী)
“তুমি একবার বলছো না, আবার বলছ ক্যান। শালারে মাইরাল্যামু, আগা আগা।” এই কথা বলতে বলতে রিকশা চালককে প্রথমে জুতা এবং পরে নিজের ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার থেকে মোটা লাঠি নিয়ে বেধড়ক রিকশা চালককে পিটাতে দেখা যায় এক ভদ্রলোককে। তিনি হলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেল।
সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসুবকে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায় ঐ সমাজসেবা কর্মকর্তা রিকশা চালককে ভাড়া দিয়ে রিকশা থেকে নেমে যায়। কিছুক্ষণ পরে ভাড়া নিয়ে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হলে ঐ কর্মকর্তা রিকশার দিকে তেড়ে গিয়ে রিকশা চালককে প্রথমে পা থেকে জুতা খুলে মুখে এবং মাথায় আঘাত করে। পরে পাশেই থাকা নিজের প্রাইভেটকার থেকে মোটা লাঠি বের করে রিকশা চালককে বেধড়ক পিটাতে থাকে এবং রিকশা চালককে চলে যেতে বলেন।
জাহিদ হাসান রাসেল রাজশাহীর পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে ২০২৩ সালে যোগদান করেন। যোগদান করার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিলো সেবা গ্রহীতাদের। কর্মচারীদের সাথে দূর্ব্যবহার ছিলো তার নিত্যদিনের ঘটনা। এছাড়াও ব্যক্তিগত প্রাইভেট গাড়িতে অফিসে যাওয়া করতো এবং সেই গাড়িতে ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ লিখা ছিলো। জানা গেছে সেই গাড়িটি বিচারক স্ত্রীর। এই বিষয়ে উপজেলার কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা ঘটনা সত্য বলে জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেলের স্ত্রী রাজশাহী কোর্টের একজন বিচারক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি রাজশাহী থেকে ঢাকায় বদলী হয়েছেন। সে সূত্রে রাসেল সাহেব নিজেকে অনেক ক্ষমতাবান ভাবতো। সে কোন কিছুতেই পরোয়া করতো করতো না। সে যে রিকশা চালককে মারধর করলো, কোন ক্ষমতা বলে এই কাজ করলো? তার বউ ম্যাজিস্ট্রেট সেজন্য তার এত ক্ষমতা?
এই ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত আমান আজিজ মুঠোফোনে বলেন, “আমি এইমাত্র জুম্মার নামাজ শেষে বাসায় এসে শুনি এই ঘটনা। এইমাত্র জানলাম। সমাজসেবা কর্মকর্তা হয়ে এই ধরণের কাজ তার শোভা পায় না।” তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, “এটাতো সমাজসেবা ডিপার্টমেন্টের কাজ। আমি মন্ত্রণালয়ে অবগত করেছি। এখন তাদের সিদ্ধান্ত।”
সমাজসেবা কর্মকর্তার ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ লিখা গাড়ি নিয়ে চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে আরাফাত আমান আজিজ বলেন, “আমি তো এই উপজেলায় নতুন আসছি। তবে শুনেছি উনি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন এই পর্যন্তই। তবে ব্যাপার হচ্ছে উনার মিসেস আমি যতটুকু জানি জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট। আমি আগে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই।”
পবা উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের মানসিক অত্যাচার ও দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যত্র বদলী নিয়ে গেছে অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, তার অধীনে আমাদের কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ভাষা খারাপ করে কথা বলেন। ভাতাভোগীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তিনি নিজের নিয়মে অফিস পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ। এমন অফিসার থাকলে গরিব অসহায় মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি বড়গাছী ইউনিয়নের প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সময় ৫জনকে নোটিশ করেছিলেন এবং খোদ পবা উপজেলা সমাজসেবা অফিসের অফিস সহায়ক হাসানুর রহমানকে অযথা নোটিশ করে ভয় দেখায়।
এব্যাপারে অভিযুক্ত অফিসার জাহিদ হাসান রাসেল বলেন, রিকশাচালক বেয়াদবিমূলক কথা বার্তা বলায় আমার রাগ হয়েছিল। তবে আমার অবস্থান অনুযায়ী এমন কাজ করা উচিত হয়নি। আমি খুবই মর্মাহত ও লজ্জিত।
মুক্তির লড়াই ডেস্ক : 


























