
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে অস্ত্র, মাদক ও স্বর্ণের চোরাচালান কোনোভাবেই থামছে না। বিজিবির নিয়মিত অভিযানে একের পর এক বিপুল পরিমাণ মালামাল জব্দ হলেও পাচারকারীরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জব্দকৃত মাল ‘মালিকবিহীন’ হিসেবে নথিভুক্ত হওয়ায় রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এতে সীমান্তবাসীর মনে শঙ্কা ও প্রশ্ন চোরাই মাল যখন নিয়মিত ধরা পড়ছে, তবে মূল হোতারা কোথায়?
গত ১১ সেপ্টেম্বর মহেশপুরের বাঘাডাঙ্গা গ্রামে খড়ের গাদা থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে বিজিবি। এর আগে ১৭ জুলাই মাটিলা বিওপি এলাকায় বিদেশি পিস্তল, ওয়ানশুটার গান, গুলি ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারিতেও একই সীমান্ত থেকে দেশীয় পিস্তল ও গুলি উদ্ধার হয়েছিল। প্রতিটি ঘটনায় অস্ত্র মিললেও মালিক বা বহনকারী কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পাচারকারীদের পরিচয় প্রশাসনের অজানা নয়। কিন্তু মামলাগুলো দুর্বল ধারায় সাজানো হয়। ফলে অভিযুক্তরা সহজেই জামিনে বের হয়ে আবারও পুরোনো চক্রে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এতে পাচার কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার বদলে আরও বেড়েই চলছে।
সরজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহেশপুর সীমান্তের বাঘাডাঙ্গা, কুসুমপুর, বেনীপুর, মাটিলা ও রাজাপুরসহ অন্তত আটটি অপরাধপ্রবণ ঘাটে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সিন্ডিকেট বাণিজ্য চলছে। সূত্র বলছে, এসব ঘাটসহ সীমান্তে মাদক, স্বর্ণ ও মানব পাচারে ১০ ভারতীয় নাগরিকসহ অন্তত ১১৭ জন বাংলাদেশি জড়িত। মাসোহারা বানিজ্যে প্রতিটি ঘাট ইজারা দেওয়া হচ্ছে ১০-১৫ লাখ টাকায়।
এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে না আসায় প্রাণহানিও ঘটছে প্রায়ই। ২০১৮ সালে গরু চোরাচালানকে কেন্দ্র করে খুন হন মহেশপুর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত সোর্স ওয়াসিম। সেই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে শ্যামকুড় গ্রামের মোমিন, মনি মেম্বর ও সাইদুরের নাম উঠে এলেও মামলাটি বর্তমানে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে।
অন্যদিকে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার ইয়ারুল, জিয়ারুল, সাহেব আলী, জাকির, আজগার মন্ডল, মুজাফ্ফর, মতিবুল ও মান্য বিশ্বাসসহ কয়েকজন বাংলাদেশি পাচারকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে বিএসএফের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম একান্ত সাক্ষাৎকারে সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, সীমান্তের বিশাল এলাকায় অনেক অংশ এখনো অরক্ষিত এবং কাঁটাতারের বেড়া নেই। তিনি বলেন,সীমিত লোকবল দিয়েই আমরা দেশের নিরাপত্তার জন্য দিন-রাত কাজ করছি। অভিযানের তৎপরতা আগের তুলনায় বৃদ্ধি করায় বেশি পরিমাণ চোরাই মালামাল উদ্ধার হচ্ছে। পাচার প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তবে সীমান্তবাসীর প্রশ্ন, যখন নিয়মিত মাল জব্দ হয় তখন সিন্ডিকেটরে মূল গডফাদাররা কেন অধরাই থেকে যায়?