
মোঃ ইলিয়াছ আহমদ
কুমিল্লা জেলার শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত বরুড়া উপজেলায় এবারের প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও সড়কের বিভিন্ন খাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৪ সেক্টরে মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমান ১ শ ১৩ কোটি টাকা।
ইতিমধ্যে উপজেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্য চাষীরা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও মৎস্য বিভাগ বীজ, সার ও মাছের পোনা দিয়ে সামান্য সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যাহা ক্ষতির পরিমানের চেয়ে অনেক কম।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবারের বন্যায় এই উপজেলায় ১ টি পৌরসভা ও ১৫ টি ইউনিয়ন ব্যাপক বন্যায় প্লাবিত হয়। এতে কৃষকদের ২৩৭ হেক্টর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতিকর পরিমান দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ১ হাজার ৪২২ হেক্টর পরিমাণ রোপা আমনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ শ ৫০ হেক্টর। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ২০ কোটি ১ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন জাতের আবাদ কৃত শাকসবজি ১৯২ হেক্টর এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪২ হেক্টর। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা। বুনা আমন ৮০ হেক্টর এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫ হেক্টর।
এতে ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ২৬ লাখ ৪ হাজার টাকা। কৃষকদের আবাদ কৃত ১৫০ হেক্টর আমন ফসলের মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২ হেক্টর। এতে ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এবারের বন্যায় কৃষিতে ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ৪০ কোটি ৫৫ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা। ফলে অতি বৃষ্টি ও বন্যায় বরুড়া উপজেলায় ১২ হাজার কৃষক আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ হাজার ৮ শ কৃষক কে ৫ কেজি উচ্চ ফলন আমনের বীজ ১০ কেজি করে ডিএপি ও এমওপি সার বিতরণ করা হয়েছে।
সিনজেন্টা কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত ২ শ কৃষকের মাঝে উচ্চ ফলন আমনের বীজ ও সার দিয়েছে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন ধানের ছাড়া দিয়ে সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, বরুড়া উপজেলার ক্ষতির পরিমান নিরুপন করে উর্দ্বোতণ কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি। ২ হাজার কৃষকের মাঝে বীজ ও সার দিতে পেরেছি। সরকারের বরাদ্দ আসলে সঠিক ভাবে বিতরণের জন্য কাজ করবো।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ৪৫১,৫০ হেক্টর আয়তন পুকুর ও দীঘি সহ ২ হাজার ১৪২ টি চাষকৃত মাছ অতি বৃষ্টি বর্ষণ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ২ হাজার ২৬২,৮ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ১৮ লাখ পোনা পানিতে ভেসে গেছে। যার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। মাছ চাষে অবকাঠামো ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মৎস্য খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ১১ কোটি ১৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। মৎস্য চাষে ৫ শ চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইতিমধ্যে ১ শ জন চাষীর মাঝে ১ হাজার কেজি কার্প মিস্র পোনা বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুরাইয়া জামান নিতু বলেন, চাষীদের ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা হয়েছে। ১ শ চাষীদের মাঝে ১ হাজার কেজি কার্প মিস্র পোনা বিতরণ করেছি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট ক্ষতির তালিকা পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ সূত্রে জানা যায়, এবারের বন্যা ও ভারি বৃষ্টি বর্ষণের ফলে ৬ টি গরু সহ হাস মুরগী ৩১ হাজার ৩৭৫ টি মারা যায়। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ৩১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। গবাদি পশুর অবকাঠামো ক্ষতির পরিমান ৩৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। গবাদি পশু এবং পাখির দানাদার খাদ্য বিনষ্ট হয় ১৩,৯৭৫ টন। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। গবাদিপশুর ঘাস বন্যায় নষ্ট হয় ৫১৫,৪৯ টন। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার ২ শ টাকা। সব মিলিয়ে এবারের বন্যায় প্রাণিসম্পদ এর ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ১ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ১৬৯ টাকা। ১২০ জন খামারী ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে তথ্য সূত্রে জানা যায়।
এ বিষয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্ককর্তা ডাঃ নাসরিন সুলতানা তনু বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করেে উর্দ্বোতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। এখনো কাউকে সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারিনি।
বরুড়া উপজেলায় এবারের ভারী বৃষ্টি বর্ষণ ও বন্যায় ১ শ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৭৩ টি পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ৬০ কোটি টাকা। উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০ কোটি টাকার আশ্বাস পেয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য। বরাদ্দ আসলে গুরুত্ব বিবেচনা করে সড়ক মেরামতের কাজ করা হবে বলে দায়িত্বশীলরা জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নু এমং মারমা মং বলেন, বরুড়া উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা সৃষ্টি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে সরকার দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। যথাযথ ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে স্ব স্ব বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বৃত্তবানদের কে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি। সাময়িক সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে কৃষি নির্ভর বরুড়া উপজেলা আবার ও হাসি ফুটাইবে কুমিল্লা সহ সারা বাংলাদেশে।
মুক্তির লড়াই ডেস্ক : 

























