
মোঃ শরীফ উদ্দিন
কুমিল্লার বরুড়ায় থাইল্যান্ড প্রবাসী নিহত আনোয়ার হোসেনের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নু-এমং মারমা মং।
বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নু-এমং মারমা মং ও নিহত আনোয়ার হোসেন এর পরিবারের তথ্য অনুযায়ী জানা যায় বরুড়া উপজেলার নলুয়া চাঁদপুর পাঁচপাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল এর ছেলে আনোয়ার হোসেন জীবিকার তাগিতে মালয়েশিয়া গমন করেন ২০২৩ সালে। সুস্থ অবস্থায় প্রায় দুই বছর প্রবাস জীবন কাটান আনোয়ার হোসেন।
পরিবার ও সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তা করে নিজের শরীরের দিকে খেয়াল না রেখেও প্রবাসের মাটিতে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে পরিবারের মাঝে রেমিট্যান্স পাঠাতেন প্রবাসী আনোয়ার হোসেন। এরই মধ্যে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ হঠাৎ মালয়েশিয়ায় হার্ট ব্লক হয়ে অসুস্থ হয়ে যান তিনি। বিদেশে স্থানীয়ভাবে হসপিটালে চিকিৎসায় প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ করেও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। অসুস্থ থাকা অবস্থায় তার আকামা ও ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাওয়ায় মালয়েশিয়ায় অসুস্থ অবস্থায় অবৈধ যাপন করেন। সুস্থ জীবন ফিরে পাওয়ার আশায় দেশে আসার সুবিধার্থে পরবর্তীতে লোক মারফতে থাইল্যান্ড পাড়ী জমান। সে দেশে ৯ দিন থাকার পর ৩১ জানুয়ারি ভিসা ও টিকিট পেয়ে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশনে প্রবেশের পর জানতে পারেন তিনি দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে জাল ভিসা ও টিকিট পেয়েছেন। অসুস্থতা অবস্থায় ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করে নিয়ে যায় সেই খবর তার পরিবারের কাছে যোগাযোগ মাধ্যম ইমুতে মোবাইলে ভয়েস রেকর্ড পাঠান। ১ ফেব্রুয়ারি তাকে থাইল্যান্ডের আদালতে তোলা হয়। এই সংবাদ পর্যন্ত পরিবার জানার পর এরপর থেকে তার পরিবারের সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার পরিবার বেশ কিছুদিন যাবত তার ফোনের অপেক্ষায় থাকে। অস্থিরতা আর সহ্য না হয়ে প্রবাসী আনোয়ার হোসেন এর স্ত্রী পান্না বেগম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তার স্বামীর কোন সন্ধান পান নাই।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি নিহত আনোয়ার হোসেন এর স্ত্রী বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নু-এমং মারমা মং কে বিস্তারিত তথ্য জানায়। তিনি মানবিক বিষয় গুলো বিবেচনা করে প্রচেষ্টা চালিয়ে থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যাংকক পুলিশ কর্তৃক জানা যায় তিনি জেলে থাকা অবস্থায় মারা যান এবং পরবর্তীতে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন তাকে দাফন করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
এ খবরটি বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন এর স্ত্রী পান্না আক্তার সহ পরিবারের সদস্যদের খোজ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তার পরিবারকে জানান। তারপর থেকে নিহত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সন্তানকে বিভিন্ন সময় নানা ভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সহ একটি ব্যাগ একটি লাগেজ নিজ উদ্যোগে থাইল্যান্ড এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন এর মাধ্যমে সংগ্রহ করে অক্ষয় অবস্থায় সামান্য কিছু অর্থ, খাদ্য সামগ্রী সহ বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায় বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে পরিবারের হাতে তুলে দেন।
নিহত আনোয়ার হোসেনের বর্তমানে এক স্ত্রী ও চারটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ভবিষ্যতে পরিবারটির পাশে কে দাঁড়াবে এ দায়িত্ব নেবে যার নেই কোন ভরসা। এরই মধ্যে বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে বিধবা ভাতা, টিসিবি কার্ড, সহ বিভিন্ন সরকারি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং বরুড়া উপজেলার তথা লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বৃত্তবানদের এ অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।