ঢাকা ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের যোগসাজশে ঠিকাদার

বরুড়ায় বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

বরুড়া (কুমিল্লা) সংবাদদাতা

কুমিল্লা জেলা বরুড়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ওয়াশব্লক নির্মাণে নানা অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ের উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ শামীমের কাছে ওয়াশ ব্লক বিষয়ে তথ্য চাইলে তিনি সময় কালক্ষেপণ করেন এবং সর্বশেষ তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে আসলে তারপর তথ্য দিবেন। নয়তো তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। আবেদন করার পরও গড়িমসি করে তথ্য দেন।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বরাদ্দকৃত ওয়াশ ব্লকের কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ শিক্ষিকারা। তথ্য অধিকারে আবেদনের পর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় বরুড়া উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬১টি ওয়াশ ব্লক নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করে কুমিল্লা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রতিটি ওয়াশ ব্লক দোতলা ও একতলা ভবন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর উদাসীনতায় ও ঠিকাদারদের খামখেয়ালিতে একাধিকবার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

যে কাজের মেয়াদ দেখা যাচ্ছে দেড় বছরে করার কথা সে কাজ একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করেও শেষ হয়নি ওয়াশ ব্লকের কাজ। প্রতিটি ওয়াশ ব্লক প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হলে উপজেলার ৬১টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওয়াশ ব্লক মোট নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১০ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা। বড় ধরনের দুর্নীতি তীর তুলেছেন সাধারণ জনগণ উপজেলা জন প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

হাতেগোনা কয়েকটি ওয়াশ ব্লকের কাজ এখন পর্যন্ত সমাপ্ত দেখালেও ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে শুরু হওয়া কাজের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক এখনো আলোর মুখ দেখেনি। উপজেলার মান্দারতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো হাই- কমোড, ফিটিংস ও বিদ্যুৎ সংযোগসহ আরও অনেক কাজ বাকি থাকলেও ঐ স্কুলকে ১০০% কাজ সম্পূর্ণ দেখিয়েছি বরুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসার নূর মোহাম্মদ শামীম। কিন্তু ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার বলেন আমাদের চোখে ৭০% কাজ হয়েছে। তারা ১০০% কাজ হয়েছে এটা কিভাবে উল্লেখ করে? এই ছাড়াও উপজেলার কাসেড্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়, নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামাড্ডা সালুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ভাউকসার প্রাথমিক বিদ্যালয়,ছোটবারেরা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ আরো কয়েকটি বিদ্যালয়ের কাজ ৫০% এর বেশি কর‍তে পারেনি গত ৩/৪ বছরেও।

উপজেলার পয়ালগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলুয়া চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বগাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিতোষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ আরো অনেক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণের কাজ অর্ধেক করে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর। শুধুমাত্র অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করে ভেতরের কাজ সম্পূর্ণ অসমাপ্ত রয়ে গেছে প্রায় ওয়াশ ব্লকের।

বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ওয়াশবক্লের দোতলা অবকাঠামো নির্মাণ করে রেখে দেওয়া হয়েছে। ওয়াশ ব্লকের টাংকির জন্য স্কুলের পাশেই বিশাল গর্ত করে রাখা হয়েছে। যে গর্তে এখন বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে ডেঙ্গু মশার সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। স্কুলে এসে ঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এই স্কুলে এসে আরো জানা যায়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ করতে এসে স্থানীয় বিষ্ণুপুর বাজারের রড সিমেন্টের দোকান,খাবার দোকান সহ আরো কিছু দোকানে প্রায় ১৫ হাজার টাকা বাকী করে রাখে স্কুলের নাম ব্যবহার করে। কাজ সমাপ্তি না করেই হুট করে চলে যাওয়ায় স্থানীয় দোকানিরা স্কুলের শিক্ষক ও স্টাফদের প্রতিনিয়ত বাকী টাকার পরিশোধের জন্য কথা শুনাচ্ছে।

বরুড়ার উত্তরাঞ্চলের দক্ষিণ হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জানান, ভারী বৃষ্টি মৌসুমে, অনবরত বৃষ্টির মধ্যেই আমার বিদ্যালয়ের ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়েছে। আমি তো প্রধানশিক্ষক আমাকেও জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি তারা। আমি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শামীম সাহেবকে বলেছিলাম বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই কেন দিচ্ছেন। তিনি জানান, লোকরা আজকে সকল মেশিন নিয়ে চলে আসছে, আজকেই করতে হবে। তারপর আমি কাজের স্টেটমেন্ট চাইলাম ওনি আমাকে স্কুলের নকশার মত একটা কাগজ দিলো। যেটার মধ্যে কাজের কোন বিস্তারিত কিছুই নেই।ওয়াশব্লকের কাজ করতে এসে দুইজন ঠিকাদার পরিবর্তন হয়েছে আমার এখানে। প্রথম ঠিকাদারের কাজ গুলা খুবই খারাপ ছিলো। সরকার পরিবর্তনের পর আরেকজন এসে কোনমতে দৃশ্যমান করে দিয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারেনি।

পূর্ব নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার বলেন, কাজের মান ভালো হয়নি। নিম্নমানের কাজ। কোনরকম শেষ করেছে। গুদামঘরের মত করে ফেলেছে। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, ভেন্টিলেটর কই? পরে আবার দেয়াল কেটে ভেন্টিলেটর জায়গা করে। রং ভালো মানের দেওয়া হয়নি। সব মিলে নয়ছয় করে কাজ সমাপ্তি করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে।

বাড়াইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির হোসেন বলেন, কাজ শেষ হইছে, আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আমরা ব্যবহার করতেছি। কিন্তু আমাদেরকে অনেক উপকরণ দেয়নি। যেমন- লাইট, বালতি, মগসহ আরও অন্যান্য উপকরণ। বৃষ্টি আসলে বাহিরে পানি ভিতরে ডুকে যায়। দরজা ভালো না। আরও টুকিটাকি সমস্যা। পার্সেন্টিস অনুসারে ৭০% ধরা যায় কাজের মান।

এই প্রকল্পে কাজ করা আবুল কালাম আজাদ নামের এক ঠিকাদার মুঠোফোনে জানান,আমরা খুব দ্রুতই অসম্পূর্ণ কাজ গুলো করে দিবো। আরও কয়েকজ ৪ জন ঠিকাদারদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম এই বিষয়ে বলেন, অনেক স্কুল থেকেই প্রতিনিয়ত অভিযোগ আসছে ওয়াশব্লক নিয়ে। জনস্বাস্থ্য অফিস যে সকল স্কুলের কাজ ১০০% বলেছে সে স্কুল গুলাতে আমরা পরিদর্শন করে দেখি হাই-কমোড এর পাশে এস এস পাইপের একটা অ্যাঙ্গেল বসানোর কথা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য। সেটাও ছিলোনা।কাজের মান গুলাও ছিলো নিম্ন মানের।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ শামিম বলেন, আমাদের কাজগুলো চলমান। এই ছাড়া বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি নন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কচুয়ার ফরহাদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না

SBN

SBN

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের যোগসাজশে ঠিকাদার

বরুড়ায় বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

আপডেট সময় ০১:৩২:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

বরুড়া (কুমিল্লা) সংবাদদাতা

কুমিল্লা জেলা বরুড়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ওয়াশব্লক নির্মাণে নানা অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ের উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ শামীমের কাছে ওয়াশ ব্লক বিষয়ে তথ্য চাইলে তিনি সময় কালক্ষেপণ করেন এবং সর্বশেষ তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে আসলে তারপর তথ্য দিবেন। নয়তো তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। আবেদন করার পরও গড়িমসি করে তথ্য দেন।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বরাদ্দকৃত ওয়াশ ব্লকের কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ শিক্ষিকারা। তথ্য অধিকারে আবেদনের পর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় বরুড়া উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬১টি ওয়াশ ব্লক নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করে কুমিল্লা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রতিটি ওয়াশ ব্লক দোতলা ও একতলা ভবন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর উদাসীনতায় ও ঠিকাদারদের খামখেয়ালিতে একাধিকবার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

যে কাজের মেয়াদ দেখা যাচ্ছে দেড় বছরে করার কথা সে কাজ একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করেও শেষ হয়নি ওয়াশ ব্লকের কাজ। প্রতিটি ওয়াশ ব্লক প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হলে উপজেলার ৬১টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওয়াশ ব্লক মোট নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১০ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা। বড় ধরনের দুর্নীতি তীর তুলেছেন সাধারণ জনগণ উপজেলা জন প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

হাতেগোনা কয়েকটি ওয়াশ ব্লকের কাজ এখন পর্যন্ত সমাপ্ত দেখালেও ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে শুরু হওয়া কাজের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক এখনো আলোর মুখ দেখেনি। উপজেলার মান্দারতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো হাই- কমোড, ফিটিংস ও বিদ্যুৎ সংযোগসহ আরও অনেক কাজ বাকি থাকলেও ঐ স্কুলকে ১০০% কাজ সম্পূর্ণ দেখিয়েছি বরুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসার নূর মোহাম্মদ শামীম। কিন্তু ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার বলেন আমাদের চোখে ৭০% কাজ হয়েছে। তারা ১০০% কাজ হয়েছে এটা কিভাবে উল্লেখ করে? এই ছাড়াও উপজেলার কাসেড্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়, নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামাড্ডা সালুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ভাউকসার প্রাথমিক বিদ্যালয়,ছোটবারেরা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ আরো কয়েকটি বিদ্যালয়ের কাজ ৫০% এর বেশি কর‍তে পারেনি গত ৩/৪ বছরেও।

উপজেলার পয়ালগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলুয়া চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বগাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিতোষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ আরো অনেক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণের কাজ অর্ধেক করে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর। শুধুমাত্র অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করে ভেতরের কাজ সম্পূর্ণ অসমাপ্ত রয়ে গেছে প্রায় ওয়াশ ব্লকের।

বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ওয়াশবক্লের দোতলা অবকাঠামো নির্মাণ করে রেখে দেওয়া হয়েছে। ওয়াশ ব্লকের টাংকির জন্য স্কুলের পাশেই বিশাল গর্ত করে রাখা হয়েছে। যে গর্তে এখন বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে ডেঙ্গু মশার সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। স্কুলে এসে ঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এই স্কুলে এসে আরো জানা যায়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ করতে এসে স্থানীয় বিষ্ণুপুর বাজারের রড সিমেন্টের দোকান,খাবার দোকান সহ আরো কিছু দোকানে প্রায় ১৫ হাজার টাকা বাকী করে রাখে স্কুলের নাম ব্যবহার করে। কাজ সমাপ্তি না করেই হুট করে চলে যাওয়ায় স্থানীয় দোকানিরা স্কুলের শিক্ষক ও স্টাফদের প্রতিনিয়ত বাকী টাকার পরিশোধের জন্য কথা শুনাচ্ছে।

বরুড়ার উত্তরাঞ্চলের দক্ষিণ হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জানান, ভারী বৃষ্টি মৌসুমে, অনবরত বৃষ্টির মধ্যেই আমার বিদ্যালয়ের ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়েছে। আমি তো প্রধানশিক্ষক আমাকেও জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি তারা। আমি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শামীম সাহেবকে বলেছিলাম বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই কেন দিচ্ছেন। তিনি জানান, লোকরা আজকে সকল মেশিন নিয়ে চলে আসছে, আজকেই করতে হবে। তারপর আমি কাজের স্টেটমেন্ট চাইলাম ওনি আমাকে স্কুলের নকশার মত একটা কাগজ দিলো। যেটার মধ্যে কাজের কোন বিস্তারিত কিছুই নেই।ওয়াশব্লকের কাজ করতে এসে দুইজন ঠিকাদার পরিবর্তন হয়েছে আমার এখানে। প্রথম ঠিকাদারের কাজ গুলা খুবই খারাপ ছিলো। সরকার পরিবর্তনের পর আরেকজন এসে কোনমতে দৃশ্যমান করে দিয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারেনি।

পূর্ব নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার বলেন, কাজের মান ভালো হয়নি। নিম্নমানের কাজ। কোনরকম শেষ করেছে। গুদামঘরের মত করে ফেলেছে। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, ভেন্টিলেটর কই? পরে আবার দেয়াল কেটে ভেন্টিলেটর জায়গা করে। রং ভালো মানের দেওয়া হয়নি। সব মিলে নয়ছয় করে কাজ সমাপ্তি করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে।

বাড়াইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির হোসেন বলেন, কাজ শেষ হইছে, আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আমরা ব্যবহার করতেছি। কিন্তু আমাদেরকে অনেক উপকরণ দেয়নি। যেমন- লাইট, বালতি, মগসহ আরও অন্যান্য উপকরণ। বৃষ্টি আসলে বাহিরে পানি ভিতরে ডুকে যায়। দরজা ভালো না। আরও টুকিটাকি সমস্যা। পার্সেন্টিস অনুসারে ৭০% ধরা যায় কাজের মান।

এই প্রকল্পে কাজ করা আবুল কালাম আজাদ নামের এক ঠিকাদার মুঠোফোনে জানান,আমরা খুব দ্রুতই অসম্পূর্ণ কাজ গুলো করে দিবো। আরও কয়েকজ ৪ জন ঠিকাদারদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম এই বিষয়ে বলেন, অনেক স্কুল থেকেই প্রতিনিয়ত অভিযোগ আসছে ওয়াশব্লক নিয়ে। জনস্বাস্থ্য অফিস যে সকল স্কুলের কাজ ১০০% বলেছে সে স্কুল গুলাতে আমরা পরিদর্শন করে দেখি হাই-কমোড এর পাশে এস এস পাইপের একটা অ্যাঙ্গেল বসানোর কথা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য। সেটাও ছিলোনা।কাজের মান গুলাও ছিলো নিম্ন মানের।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ শামিম বলেন, আমাদের কাজগুলো চলমান। এই ছাড়া বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি নন।