মোর্শেদা চৌধুরী এ্যানি
এইতো কয়েক মাস অইল আমার নতুন বিয়া অইছে
চারিদিকে যু্দ্ধ শুরু অইছে, গ্রামে-গঞ্জে, মাঠে-ঘাটে হগ্যলে খালি দৌঁড়াদৌঁড়ি করতাছে আর বলতাছে, পাশের গ্রামে কারা যেনো বাড়িতে আগুন
লাগাইয়া দিছে। আর বলতাছে, “আগুন রে আগুন
কে কই আচছ আগুন নিবাইতে আয়রে আগুন নিবাইতে আয়”সবাই ছুটাছুটি করে আগুন নিবাইতে গেলো। আমরা দুইজন শ্বাশুড়ি বউ শুধু এ বাড়িতে। শুনি গোলাগুলির আওয়াজে বুট জুতার থপথপ ধ্বনিতে কয়েকজন রাজাকার সহ আমাগু বাড়ি ডুকছে। আমার শ্বাশুড়ি আগাইয়া যায় আর বলে,” আমনেরা কেডা? আমি তো বয়স্ক মানুষ ভালো কইরা ঠাওর করতে পারতাছিনা,” পাকবাহিনীর একজন বলে, “হেই বুড়ি মা তোমার ছেলে নাকি মুক্তিযুুদ্ধে যুক্ত হইছে? “, শ্বাশুড়ি তো সত্য কথা বলে দিয়েছে হ্যাঁ। এ কথা বলার সাথে সাথেই শ্বাশুড়ির পেটে একটা রাইফেল দিয়ে আঘাত দেয় পাকবাহিনীরা। পাশেই একজন রাজাকার বলতাছে, “মারেন স্যার ঐ কু সন্তানের মাকে” আবার উপর্যুপরি লাথি ও গুলি মারে শ্বাশুড়ি লুটিয়ে পড়ি মাটিতে! আমি ঘরের দড়জার চিকন ছিদ্র দিয়া দেইখ্যা নিজেকে সামলাতে পারনি।
মুখ চেপে কান্না করতে গিয়ে একটু কান্নার আওয়াজ একজন রাজাকারের কানে ভেসে যায়। শুনার সাথে সাথেই ৮/১০ জন পাকবাহিনীসহ ঘরে ডুইক্যা আমারে নির্যাতন করে আর বলে, “তোর স্বামী কাহাহে, হামরা তোর স্বামী।” এ কথা বলে সব গুলো কুকুর আমাকে খুবলে খাইল আর আমার শরীর রক্তাক্ত আর জখম করলো। ইস! কি যে যন্ত্রণা! কি যে আঘাত করলো!
আমার বুঝি আর স্বামীর ঘর করা হইলনা? প্রায় ১ ঘন্টা চিৎকার করতে করতে রক্ত মাখা বিবস্ত্র শরীরে এক টুকরো লাল সবুজ কাপড় কম্পিত হাতে নিয়ে পতাকা উড়িয়ে দিয়ে মটিতে লুটিয়ে পড়লাম! আর আস্তে আস্তে বলতে লাগলাম, “জয় জন্মভূমি, আমার সোনার বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।” চিরতরে বিদায় নিলাম আমি সেই অভাগা বিরঙ্গনা!