
বেইজিংয়ের থিয়েনআনমেন স্কয়ারে ৩ সেপ্টেম্বর সকালে জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনের জনগণের প্রতিরোধ-যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী স্মরণে একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়েছে। সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিন পিং অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন এবং বর্ণাঢ্য সামরিক -কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।
প্রেসিডেন্ট সি’র আমন্ত্রণে ২৬ জন বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অনুষ্ঠানে যোগ দেন। চীন সরকারের আমন্ত্রণে বেশ কয়েকটি দেশের সংসদের স্পিকার, উপ-প্রধানমন্ত্রী, উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এবং বিভিন্ন দেশের প্রাক্তন রাজনৈতিক নেতারাও অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ ছাড়াও, চীনে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত, সামরিক অ্যাটাশে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডাসহ ১৪টি দেশের ৫০ জন সহায়তাকারী বন্ধু বা তাদের পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে ভাষণে সি চিন পিং, জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রবীণ সৈন্য, প্রবীণ কমরেড, দেশপ্রেমিক এবং জাপান-বিরোধী জেনারেলদের এবং জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ-যুদ্ধে বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী দেশ-বিদেশে থাকা চীনা নাগরিকদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। আগ্রাসন প্রতিরোধে চীনা জনগণকে সমর্থন ও সাহায্যকারী বিদেশি সরকার এবং আন্তর্জাতিক বন্ধুদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। আজকের সভায় উপস্থিত বিদেশি অতিথিদের উষ্ণ স্বাগত জানান চীনের প্রেসিডেন্ট।
সি চিন পিং বলেন, জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ-যুদ্ধ ছিল একটি মহান এবং কঠিন যুদ্ধ, এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনা জনগণ মহান জাতীয় ত্যাগের বিনিময়ে মানবসভ্যতা এবং বিশ্বশান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, আজ, মানবতা আবারও শান্তি অথবা যুদ্ধ, সংলাপ অথবা সংঘর্ষ, এবং জয়-জয় অথবা শূন্য-সমষ্টির মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার মুখোমুখি। চীনা জনগণ ইতিহাসের সঠিক দিকে এবং মানবসভ্যতার অগ্রগতির দিকে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে অবিচল রয়েছে এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য সকল দেশের জনগণের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।
এরপর, থিয়েনআনমেন মহাচত্বরে একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল চীনের ব্যাপকভাবে চীনা শৈলীর আধুনিকীকরণকে এগিয়ে যাওয়ার যাত্রার পর প্রথম সামরিক কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজ মার্চিং কলাম, যুদ্ধ পতাকা কলাম, সরঞ্জাম কলাম এবং বিমান কলাম নিয়ে গঠিত।
কুচকাওয়াজে কেবল নতুন প্রজন্মের উন্নত সমরাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়নি, বরং সামরিক পরিষেবার নতুন কাঠামোও প্রদর্শন করা হয়েছে। প্রদর্শিত সমস্ত অস্ত্র এবং সরঞ্জামগুলো দেশীয়ভাবে তৈরি, গৃহীত দেশীয় প্রধান যুদ্ধ সরঞ্জাম ছিল। সরঞ্জামের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্বোধন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কিছু স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ-ভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র, উচ্চ-নির্ভুলতার স্ট্রাইক সিস্টেম এবং মানবহীন-বিধ্বংসী সিস্টেম, যা জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে চীনা গণমুক্তি ফৌজের অসাধারণ ক্ষমতাকে সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শন করে।
গত (বুধবার) রাতে বেইজিংয়ের মহাগণভবনে জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা গণপ্রতিরোধ-যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী স্মরণে ‘ন্যায়বিচার বিজয়ী হবে’—শিরোনামে এক সাংস্কৃতি সন্ধ্যার আয়োজন করা হবে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং স্মরণসভায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন।সূত্র:লিলি-হাশিম-তুহিনা,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।