শ্যমল বিশ্বাস
ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ৬ জন শহিদের মধ্যে একজন হলেন অহি উল্লাহ। ২২ ফেব্রæয়ারি ১৯৫২ তারিখে নবাবপুর রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে যে-দুজন শহিদ হন, তাঁদের মধ্যে একজনের নাম শফিউর রহমান এবং অপর জনের নাম অহি উল্লাহ। শহিদ হওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ৮ বছর।
শহিদ অহি উল্লাহ’র পিতার নাম ছিল হাবিবুর রহমান, যিনি পেশায় ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। পুরাতন ঢাকার ১৫২ নং সুরিটোলা তাদের বাসস্থান ছিল। শহিদ হওয়ার সময় তিনি নবাবাপুর রোডস্থ খোশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাগজ চিবুচ্ছিলেন।
১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রæয়ারিতে গায়েবানা জানাযা শেষে একটি মিছিল নবাবপুর রোড অতিক্রম করার সময় অহি উল্লাহ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নেড়ে মিছিলকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন। এমন সময় পুলিশ গুলি চালায় এবং অকূস্থলেই গুলিবিদ্ধ অহি উল্লাহ রক্তাক্ত অবস্থায় মারা জান। তাঁর লাশ আজিমপুর কবরস্থানে অস্থায়ী কবরে সমাহিত করা হয়। কিন্তু পরে কবরটির হদিস পাওয়া যায়নি।
শহিদ অহি উল্লাহ’র বর্ণনাভিত্তিক ছবি আঁকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন ভাষা-আন্দোলন মিউজিয়ামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ বার্ণিক। কারণ, ১৯৯৯ সালে ভাষাশহিদ আবদুস সালামের বর্ণনাভিত্তিক ছবি আঁকা হয়েছিল। এ দুজন ভাষাশহিদের ছবি পাওয়া যায়নি। ভাষা-আন্দোলন গবেষক অধ্যপক এম এ বার্ণিক এ কাজের জন্য আমাকে (শ্যামল বিশ্বাস) একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ঘটনাটি ছিলো ২০০৭ সালে পহেলা ফেব্রæয়ারি। ছবি আঁকার স্থান ছিলো ঢাকার ধানমন্ডিস্থ ভাষা-আন্দোলন মিউজিয়াম অফিস কক্ষ।
ছবি আঁকার আগে ভাষা-আন্দোলন গবেষক অধ্যাপক এম এ বার্ণিক আমাকে, চিত্রশিল্পী হিসেবে, অহি উল্লাহ’র শারীরিক গঠন ও বয়স সম্পর্কে ব্রিফ করেছিলেন এবং অহি উল্লাহ’র দৈহিক বিবরণ জানার জন্য সুরিটোলাস্থ অহি উল্লাহদের বাসস্থানের আশপাশের মুরুব্বি শ্রেণির কয়েক জন লোকের সক্ষাতকার নেয়ার ব্যবস্থা করেন। তবে অহি উল্লাহ’র রক্তসম্পর্কিত কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আমি, শ্যামল বিশ্বাস, ছবিটি আঁকার পর এম এ বার্ণিকের লেখা ‘ভাষা-আন্দোলন সারগ্রন্থ’ (প্রকাশ কাল ২০০৯) বইতে ছবিটে স্থান পায়। তা ছাড়া সমকালীন পত্র-পত্রিকায় ভাষাশহিদ অহি উল্লাহ ছবিটি ছাপা হয়। দুই-একটি টিভি চ্যানেলেও ছবিটি সহ সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বরাত হিসেবে ০৯ ফেব্রæয়ারি ২০০৭ তারিখের দৈনিক সংবাদে ‘এই আমাদের ভাষাশহিদ অহি উল্লাহ’র ছবি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি উৎসাহী পাঠক মিলিয়ে দেখতে পারেন।
(লেখক: শ্যমল বিশ্বাস, আর্ট শিক্ষক, আদমজি ক্যান্টানমেন্ট স্কুল, ঢাকা সেনানিবাস)