ঢাকা ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo গুলশানে র‍্যাবের ক্যাশিয়ার শাহ আলমের ইস্পায় গড়ে তুলেছে অপরাধের আখড়া Logo বুড়িচংয়ে বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলায় চলছে জুয়ার আসর Logo লালমনিরহাটে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন Logo স্লিপের অর্থ ছাড় করানোর নামে ঘুষের টাকা আদায়ের অভিযোগ Logo ফুলবাড়ীতে বিএনপি’র মিছিলে ককটেল হামলা মামলায় আ.লীগের তিন নেতা গ্রেপ্তার Logo ফুলবাড়ী সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ভারতে অনুপবেশের সময় স্বামী-স্ত্রী আটক Logo ফুলবাড়ীতে ৪ আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার Logo নার্সিং শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি স্বীকৃতির দাবিতে রাঙামাটিতে কর্মসূচি Logo গাইবান্ধায় ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা Logo চট্টগ্রামের আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবাসহ মাদক কারবারীকে আটক

ভোম্বলের বিয়ে

“ভোম্বলের বিয়ে”
রম্যরচনা
অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।

কার্ত্তিক মোড়লের ছেলে ভোম্বল। জাতিতে কায়েত্ । দাস পদবী। ভোম্বলেরা আট ভাই আর দুই বোন। বোনেদের সব বিয়ে হয়ে গেছে। ভাইদের মধ্যে সবার বিয়ে হয়েছে। সর্বশেষ ভোম্বল, মোটাসোটা শরীর। সে ম্যাট্রিক পাস করেছে। বিয়ের জন্য বাড়িতে লোকের আনাগোনা লেগেই আছে। বৈশাখ মাসে হালখাতা,গনেশ পূজা হয়। বছরের প্রথম মাস। এবেলা থেকে ওবেলা লোক এসেই যাচ্ছে। ভোম্বল তার ডায়েরীতে লিখে রাখছে কোথাকার লোক। কতজন এসেছে আর যৌতুক কারা কি কি দেবে। বৈশাখ মাস ফুরিয়ে গেলো,এলো জৈষ্ঠ্য মাস। আবার যাওয়া আসা শুরু, আবার মাসের শেষ। আষাঢ় মাস মলমাস পড়েছে তাছাড়া মোড়লের চাষের মাসে বিয়ে দিতে মন নেই। ভোম্বলকে কার্ত্তিক মোড়ল ডাকলো, বললো অগ্রহায়ন মাসে পাকা দেখে তোর বিয়ে দেবো। ভোম্বল বললো -পাকা বেশিদিন টিকে না! সব ওলটপালট হয়ে পচে যাবে। তুমিই তো বলতে শুভস্য শীঘ্রম দাদাদের বিয়ে দেবার সময়। তাহলে আমার কেন বিবাহ বিভ্রাট হচ্ছে বলো বাবা! সমাধান হচ্ছে না কেন? অঙ্ক তো মিলতেই হবে। যদি ভুল করো তাহলে তুমি ফেল।
মোড়ল বললো – সবুরে মেওয়া ফলে,দেখবি তোকে ভরিয়ে দেবে মেয়ের বাপ। আমার কথা মনে রাখিস তাহলেই হবে। ভোম্বল – কেউ কথা রাখেনা গো বাবা! সবাই শিলান্যাস করে রেখে দেই।সেই শিলা কালের কবলে পড়ে শিবলিঙ্গ হয়। তখন আমরা পূজা করি। আমারও সেই দশা। তুমি শিলা পুঁতে দিলে তারপর যদি মরে যাও তাহলে তো শিলালিপি হবে।লেখা রবে মোড়ল কথা রাখেনি, কর্তব্য পালন করে নি? আরো কতশত লেখা থাকবে।
অগ্রহায়ন মাসে লোকজন দেখতে কম এলো,কারন ধান কাটাকাটি,মাড়াই ইত্যাদি। ভোম্বল ভাবলো সবাইকে তাড়িয়ে দিলে কে আর আসবে বাবার কাছে? পৌষ মাস লক্ষ্মী মাস বিয়ে নিষিদ্ধ। মাঘ মাসে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়লো। ভোম্বল বললো – বাবা তোমার দ্বারা হবে না! বছর ঘুরে আবার বছর আসবে। তোমার সময় হবে না কোনোমাসেই। তার চেয়ে আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবো।যে আমাকে বরমাল্য দেবে আমি তার হবো। টাকা পয়সা দরকার নেই।সব ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মায়ের যা আছে ওতেই আমার হবে। সব ভাইয়েরা বললো তা কেন হবে। মায়ের শখ আহ্লাদ নেই।শেষ বয়সে যে দেখবে সে পাবে মায়ের সব। সবাই যদি দেখি তাহলে সবাই সমান ভাগে ভাগ করে নেবো।
ভোম্বল – তোমরা তো জুটিয়ে নিয়েছো! আমার বেলায় দেরি।
মোড়ল এইসব শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো, সামনের উত্তরখণ্ড গ্রামে। মোড়লকে দেখে সবাই টানাটানি করতে লাগলো। সবাই তাদের মেয়ে দেখাবার জন্য উৎগ্রীব। মোড়ল সবাইকে একে একে তার বাড়িতে আসতে বললো। পরদিন সকাল থেকেই লোকের যাওয়া আসা শুরু হলো। ভোম্বল দেখলো লোক আসছে যাচ্ছে ফল তো শুণ্য। গ্রামের ছকড়ি দাস বললো দাদা আমার মেয়েটা নাও বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো পা জড়িয়ে ধরে। মা মরা মেয়ে এখানে আমি চোখের সামনে দেখতে পাবো। ভোম্বল বললো – কাঁদবেন না কাঁদবেন না। আমি কেঁদে ফেলেছি।এই মেয়েই আমি বিয়ে করবো।
ভোম্বলের বাবা – বিয়ে করবো বললেই হয়না ?এক কথায় কোথাও বিয়ে হয়না?পাঁচ কথা কইতে হয়।
ভোম্বল – তাহলে পাঁচ কথা বলে ফেলো। ওঁর কান্না আমি সহ্য করতে পারছি না। ও এখানে মা পাবে। এমন বাবার দরকার নেই। মাকে পেলেই ও মায়ের সেবা যত্ন করবে!
ভাইয়েরা বললো – ও মায়ের সেবা করার নামে ধান্দাবাজি। আত্মসাৎ করার ইচ্ছা মায়ের সবকিছু।
ভোম্বল – বাবার যা সম্পত্তি আছে ওতেই ঢের। তোদের মতো ট্যাড়া,কেলে, খেঁকি, খেঁদি বিয়ে করলে অনেক পেতাম।গহনা দান সামগ্রী বস্তা বোঝায় পেতাম। কিন্তু এই গ্রামের সরলার মতো সুন্দরী সরল মেয়ে পাবো না। আমি এখানেই বিয়ে করবো বাবা। তুমি দিনক্ষণ দেখে ব্যবস্থা করো। আর না হলে ষষ্ঠী তলায় সিঁদুর দান করে নিয়ে আসবো। ভোজভাতে ভূত খাইয়ে লাভ নেই।যতোই ভালো খাওয়াও শেষে দুর্নাম করবেই। আমি হুতুম পেঁচা, কালো,তাই বলে কি শ্রীরাধা জুটবে না, সবাই দেখুক। মোড়ল সব বউ কেমন এনেছে আর আমি কি আনলাম।
বিয়ে হলো দিন দেখে। সরলা বাবাকে জড়িয়ে ধরে শেষ সোহাগ নিয়ে ভোম্বলের হাত ধরে পালকিতে চাপতে যাবে এমন সময় পাড়ার বৌয়েরা বললো “সরলা কাঁদ কেনে টে” যাওয়ার সময়ে কাঁদতে হয়। ভোম্বল বললো আমি ওর হয়ে কেঁদে দিচ্ছি ঠাকুমারা। আপনারা ওকে আর কাঁদাবেন না। আহারে মা মরা গো মেয়েটি? চোখ থাকতেও অন্ধ আমি। বাড়ীর কাছেই যমুনা তীরে কদম্ব গাছ। আমি হোঁচট খেয়ে তোমার কাছে যদি পরতাম তাহলে কবেই আমার হতে গো! চিন্তা করোনা সরলা আমি তোমার সঙ্গে সবসময় আছি। বৈশাখ মাস থেকে চৈত্র মাস অবধি। তবে বাবার কথা ফলে গেছে! সবুরে মেওয়া ফলে। কালো গোবরে পদ্মফুল ফুটে না! আমি ছোট ছেলে বলে বাবা ভাবছিলো ছোট্ট হয়েই আছি?

আপলোডকারীর তথ্য

গুলশানে র‍্যাবের ক্যাশিয়ার শাহ আলমের ইস্পায় গড়ে তুলেছে অপরাধের আখড়া

SBN

SBN

ভোম্বলের বিয়ে

আপডেট সময় ০৯:০২:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪

“ভোম্বলের বিয়ে”
রম্যরচনা
অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।

কার্ত্তিক মোড়লের ছেলে ভোম্বল। জাতিতে কায়েত্ । দাস পদবী। ভোম্বলেরা আট ভাই আর দুই বোন। বোনেদের সব বিয়ে হয়ে গেছে। ভাইদের মধ্যে সবার বিয়ে হয়েছে। সর্বশেষ ভোম্বল, মোটাসোটা শরীর। সে ম্যাট্রিক পাস করেছে। বিয়ের জন্য বাড়িতে লোকের আনাগোনা লেগেই আছে। বৈশাখ মাসে হালখাতা,গনেশ পূজা হয়। বছরের প্রথম মাস। এবেলা থেকে ওবেলা লোক এসেই যাচ্ছে। ভোম্বল তার ডায়েরীতে লিখে রাখছে কোথাকার লোক। কতজন এসেছে আর যৌতুক কারা কি কি দেবে। বৈশাখ মাস ফুরিয়ে গেলো,এলো জৈষ্ঠ্য মাস। আবার যাওয়া আসা শুরু, আবার মাসের শেষ। আষাঢ় মাস মলমাস পড়েছে তাছাড়া মোড়লের চাষের মাসে বিয়ে দিতে মন নেই। ভোম্বলকে কার্ত্তিক মোড়ল ডাকলো, বললো অগ্রহায়ন মাসে পাকা দেখে তোর বিয়ে দেবো। ভোম্বল বললো -পাকা বেশিদিন টিকে না! সব ওলটপালট হয়ে পচে যাবে। তুমিই তো বলতে শুভস্য শীঘ্রম দাদাদের বিয়ে দেবার সময়। তাহলে আমার কেন বিবাহ বিভ্রাট হচ্ছে বলো বাবা! সমাধান হচ্ছে না কেন? অঙ্ক তো মিলতেই হবে। যদি ভুল করো তাহলে তুমি ফেল।
মোড়ল বললো – সবুরে মেওয়া ফলে,দেখবি তোকে ভরিয়ে দেবে মেয়ের বাপ। আমার কথা মনে রাখিস তাহলেই হবে। ভোম্বল – কেউ কথা রাখেনা গো বাবা! সবাই শিলান্যাস করে রেখে দেই।সেই শিলা কালের কবলে পড়ে শিবলিঙ্গ হয়। তখন আমরা পূজা করি। আমারও সেই দশা। তুমি শিলা পুঁতে দিলে তারপর যদি মরে যাও তাহলে তো শিলালিপি হবে।লেখা রবে মোড়ল কথা রাখেনি, কর্তব্য পালন করে নি? আরো কতশত লেখা থাকবে।
অগ্রহায়ন মাসে লোকজন দেখতে কম এলো,কারন ধান কাটাকাটি,মাড়াই ইত্যাদি। ভোম্বল ভাবলো সবাইকে তাড়িয়ে দিলে কে আর আসবে বাবার কাছে? পৌষ মাস লক্ষ্মী মাস বিয়ে নিষিদ্ধ। মাঘ মাসে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়লো। ভোম্বল বললো – বাবা তোমার দ্বারা হবে না! বছর ঘুরে আবার বছর আসবে। তোমার সময় হবে না কোনোমাসেই। তার চেয়ে আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবো।যে আমাকে বরমাল্য দেবে আমি তার হবো। টাকা পয়সা দরকার নেই।সব ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মায়ের যা আছে ওতেই আমার হবে। সব ভাইয়েরা বললো তা কেন হবে। মায়ের শখ আহ্লাদ নেই।শেষ বয়সে যে দেখবে সে পাবে মায়ের সব। সবাই যদি দেখি তাহলে সবাই সমান ভাগে ভাগ করে নেবো।
ভোম্বল – তোমরা তো জুটিয়ে নিয়েছো! আমার বেলায় দেরি।
মোড়ল এইসব শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো, সামনের উত্তরখণ্ড গ্রামে। মোড়লকে দেখে সবাই টানাটানি করতে লাগলো। সবাই তাদের মেয়ে দেখাবার জন্য উৎগ্রীব। মোড়ল সবাইকে একে একে তার বাড়িতে আসতে বললো। পরদিন সকাল থেকেই লোকের যাওয়া আসা শুরু হলো। ভোম্বল দেখলো লোক আসছে যাচ্ছে ফল তো শুণ্য। গ্রামের ছকড়ি দাস বললো দাদা আমার মেয়েটা নাও বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো পা জড়িয়ে ধরে। মা মরা মেয়ে এখানে আমি চোখের সামনে দেখতে পাবো। ভোম্বল বললো – কাঁদবেন না কাঁদবেন না। আমি কেঁদে ফেলেছি।এই মেয়েই আমি বিয়ে করবো।
ভোম্বলের বাবা – বিয়ে করবো বললেই হয়না ?এক কথায় কোথাও বিয়ে হয়না?পাঁচ কথা কইতে হয়।
ভোম্বল – তাহলে পাঁচ কথা বলে ফেলো। ওঁর কান্না আমি সহ্য করতে পারছি না। ও এখানে মা পাবে। এমন বাবার দরকার নেই। মাকে পেলেই ও মায়ের সেবা যত্ন করবে!
ভাইয়েরা বললো – ও মায়ের সেবা করার নামে ধান্দাবাজি। আত্মসাৎ করার ইচ্ছা মায়ের সবকিছু।
ভোম্বল – বাবার যা সম্পত্তি আছে ওতেই ঢের। তোদের মতো ট্যাড়া,কেলে, খেঁকি, খেঁদি বিয়ে করলে অনেক পেতাম।গহনা দান সামগ্রী বস্তা বোঝায় পেতাম। কিন্তু এই গ্রামের সরলার মতো সুন্দরী সরল মেয়ে পাবো না। আমি এখানেই বিয়ে করবো বাবা। তুমি দিনক্ষণ দেখে ব্যবস্থা করো। আর না হলে ষষ্ঠী তলায় সিঁদুর দান করে নিয়ে আসবো। ভোজভাতে ভূত খাইয়ে লাভ নেই।যতোই ভালো খাওয়াও শেষে দুর্নাম করবেই। আমি হুতুম পেঁচা, কালো,তাই বলে কি শ্রীরাধা জুটবে না, সবাই দেখুক। মোড়ল সব বউ কেমন এনেছে আর আমি কি আনলাম।
বিয়ে হলো দিন দেখে। সরলা বাবাকে জড়িয়ে ধরে শেষ সোহাগ নিয়ে ভোম্বলের হাত ধরে পালকিতে চাপতে যাবে এমন সময় পাড়ার বৌয়েরা বললো “সরলা কাঁদ কেনে টে” যাওয়ার সময়ে কাঁদতে হয়। ভোম্বল বললো আমি ওর হয়ে কেঁদে দিচ্ছি ঠাকুমারা। আপনারা ওকে আর কাঁদাবেন না। আহারে মা মরা গো মেয়েটি? চোখ থাকতেও অন্ধ আমি। বাড়ীর কাছেই যমুনা তীরে কদম্ব গাছ। আমি হোঁচট খেয়ে তোমার কাছে যদি পরতাম তাহলে কবেই আমার হতে গো! চিন্তা করোনা সরলা আমি তোমার সঙ্গে সবসময় আছি। বৈশাখ মাস থেকে চৈত্র মাস অবধি। তবে বাবার কথা ফলে গেছে! সবুরে মেওয়া ফলে। কালো গোবরে পদ্মফুল ফুটে না! আমি ছোট ছেলে বলে বাবা ভাবছিলো ছোট্ট হয়েই আছি?