নিজস্ব প্রতিবেদক
সাবেক বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নির্দেশে ভোলা জেলা বিএনপি শূন্য ছিলো বিগত ১৬টি বছর। অর্ধযুগের বেশী সময় এলাকায় যেতে পারেনি ভোলার কৃতিসন্তান ক্লিন ইমেজের তরুন রাজনীতিবিদ আন্দালিব রহমান পার্থ।
জীবন বাঁচাতে বিদেশ চলে গেছে অনেক যুবক। তোফায়েল বানিহীর অত্যাচারে জেল খেটেছে ৭০বছরের বৃদ্ধা। তবে যারা দুর্দিনে পল্টিবাজি দিয়ে বিএনপি ছেড়ে প্রকাশ্যে ও তলে তলে তোফায়েলের প্রভুত্ব মেনে নিয়েছিলো তাদের কোন সমস্যা হয়নি। গায়েবী মামলার আসামী হয়ে জেলখাটা বা বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে হয়নি। বরং তারা তোফায়েলে বাহিনীর সাথে সিন্ডিকেট গড়ে টেন্ডাবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটবদ্ধ ব্যবসা বানিজ্যের মাধ্যমে ফুলে-ফেপে হয়েছেন কলাগাছ। তাদেরই একজন আবু নোমান মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ওরফে নোমান চেয়ারম্যান। ৫আগষ্ট ফ্যাসিষ্ট হাসিনার পতনের পরে তোফায়েল ও তার বাহিনী আত্মগোপনে চলে গেলেও বিএনপিতে ফিরে এসেছে পল্টিবাজ নোমান চেযারম্যান। এখন তার ভাব-শাব দেখে মনে হয়, ভোলাতে যেন তার চেয়ে বড় কোন নেতা বিএনপিতে একটাও নেই। নতুন আঙ্গিকে শুরু হয়েছে নোমানের আধিপত্য বিস্তার। নব্য এই বিএনপি নেতার ভিড়ে তোফায়েল বাহিনীর নির্যাতনের শিকার পুরানো বিএনপির লোকেরা এলাকায় থাকতে পারবে কিনা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। এই ১৬ বছরের মধ্যে তোফায়েল আহমেদের পরিবারের সাথে প্রকাশ্যে বা তলেতলে নোমান চেয়ারম্যানের মতো কিছু বিএনপির লোকেরা গভীর সম্পর্ক তৈরি করে ফায়দা লুটেছে। কৌশলে বা প্রকাশ্যে নিজদলের লোকদের পুশিল দিয়ে ধরিয়েছে, অর্থ সম্পদ-ব্যবসা বানিজ্য দখল করে নিয়েছে। অথচ ৫আগষ্ট স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে হঠাৎ নাড়া দিয়ে উঠছে এই নোমান চেয়ারম্যান ও তার মতো লোকেরা। বিগত ১৫ বছর এরা ভোলাতে কাউকে বিএনপির নামটি পর্যন্ত উচ্চারন করতে দেয়নি। স্থানীয় এলাকাবাসীর মতে নোমান চেয়ারম্যানের মতো পল্টিবাজেরা এখন বিএনপির সামনে সারিতে থাকলে তাদেরকেও হাসিনার মতো পালাতে বেশী সময় লাগবে না।
২০০১ সাল থেকে ভোলা সদরের দক্ষিন দিঘলদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন বিএনপি নেতা আবু নোমান মোহাম্মদ শফিউল্লাহ (নোমান)।
১/১১’র ফখরুদ্দিন সরকার ২০০৮ সালে হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলে স্বার্থবাদী নোমানরাও বিএনপির সাথে পল্টিবাজি দেয়। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে তোফায়েলের বাগিনা স্বপনে সিন্ডিকেটে ঢুকে পড়ে। ২০১৪ সালে দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদ দখল করে তোফায়েলের বাগিনা স্বপন। বিগত ১০/১২বছরে স্বপন চেয়ারম্যান মামার প্রভাব খাটিয়ে মানুষের ঘরবাড়ি, গরু-ছাগল, জমিজমা-ব্যবসা বানিজ্য দখল করে নিয়েছে। আর একাজে সঙ্গ দিয়ে নোমান চেয়ারম্যানের মতো পল্টিবাজেরা।
বাংলাবাজার, বটতলা বাজার ও বাগমারা ব্রিজের পাশে অবৈধ বালু ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি সবই রয়েছে তাদের কর্মকান্ডে। আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপির একজন কর্মীও বাসায় ঘুমাতে পারে নাই। কিন্তু তোফায়েল আহমেদের পরিবারের সাথে বিএনপি নেতা নোমান চেয়ারম্যানের সিন্ডিকেটের বিজনেস ছিলো বিদায় তার সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে, বাসায় ঘুমাইতে পেরেছে এবং আরামে-আয়েশেই জীবনযাপন করছে। আওয়ামী লীগের আমলে নিজের একক ঠিকাদারি লাইসেন্স দিয়ে ওপেন টেন্ডারের কাজ বানিয়ে নিয়েছে। ইতিমধ্যে তোফায়েল আহমেদের আরেক ভাগিনা কামালের সাথে নোমান চেয়ারম্যানের একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সাবেক বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভাগিনার কামাল আওয়ামী লীগের একটি প্রোগ্রামে বক্তৃতা দিচ্ছে আর তারপাশে বসে আছে নোমান চেয়ারম্যান। অথচ হাসিনা পালানোর পরে এই নোমানই বাংলা বাজার দোকান ভাঙচুর, বালুর ব্যবসা, নদীর দখল, জমি দখল সহ সব কিছুকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। বিগত ১৭/১৮ বছর হাসিনার যুগে সাধারন মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠে ছিলো। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা পালানোর পরে নব্যবিএনপি নোমানদের দখল বানিজ্যে সেই হাসিনার চিত্রই ফুটে উঠেছে। নোমানরা চর দখলের মতো সব কিছু দখল করে নিচ্ছে। আর এসব করে বিএনপি এখন আওয়ামীলীগে পরিনত হওয়ার প্রথম সিড়ি অতিক্রম করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, নোমানদের না থামানো হলে বিএনপিও আওয়ামীলীগের মতো হারিয়ে যাবে। নোমানরা আওয়ামীলীগের মতো বিশ্বাস করতে শুরু করেছে অপকর্ম করলে তাদের কিছুই হবে না। যেকারনে তারা দখলদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তারের মেতে উঠেছে। আর এতে বিএনপির প্রতি সাধারন মানুষের ঘৃনার পরিমান বাড়ছে। সুতরাং বিএনপির নীতিনির্ধারকদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন, তারা যেন এসব বিষয়ে নজর দেন।